প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একটি বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের নানা কর্মসূচি পালনের মধ্যে ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেছেন সাংবিধানিক এ সংস্থার প্রধান কাজী হাবিবুল আউয়াল। অবশ্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পক্ষ থেকে এটাও বলা হয়েছে, সিইসির বক্তব্য বিকৃত ও ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে অসত্য সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগের দিন গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়। গত ১২ জুন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটের দিন একটি কেন্দ্রে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম ঘুষিতে আহত হওয়ার পর ঢাকায় নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান সিইসি। খবর বিডিনিউজের।
ওই ঘুষির ঘটনায় ইসলামী আন্দোলন সেদিন বরিশালের পাশাপাশি খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বর্জন করে। এরপর ২১ জুনের সিলেট ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন থেকেও দলটির প্রার্থীদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়। বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে সিইসির পদত্যাগের দাবিতে নানা কর্মসূচিও পালন করছে চরমোনাইয়ের পীরের নেতৃত্বাধীন দলটি। একাধিক কর্মসূচিতে নির্বাচন কমিশনকে ‘ইন্তেকাল কমিশন’ আখ্যা দিয়ে কুশপুতুলও বানানো হয়েছে। সিইসির বক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ আখ্যা দিয়ে ‘মানহানির জন্য’ ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে উকিল নোটিসও পাঠিয়েছেন ফয়জুল করিম।
সেই মন্তব্যের দুই সপ্তাহ পর ইসি সচিবালয়ের জনসংযোগ পরিচালক শরিফুল আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিটি এল। সিইসির বক্তব্যকে ‘বিকৃত করা হয়েছে’ দাবি করে সেখানে বলা হয়, তদুপরি, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কোনো মন্তব্য/বক্তব্যে কোনো ব্যক্তি মর্মাহত হলে তিনি (সিইসি) তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশা করে যে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যম কর্মীগণ সর্বোচ্চ সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত যে কোনো বক্তব্য ও সংবাদ প্রদান ও প্রচার করবেন এবং বর্ণিত অনুমাননির্ভর ও ভ্রান্তধারণাপ্রসূত মন্তব্য ও সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ হতে বিরত থাকবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১২ জুন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট শেষে বিকালে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ফয়জুল করিমের ওপর হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের উপর্যুপরি প্রশ্নের জবাব দেন সিইসি। তিনি উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে প্রার্থীর বর্তমান শারীরিক অবস্থা সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়েছিলেন বলেও দাবি করা হয়েছে কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে।
সেখনে বলা হয়, ওই বিষয়টি বিকৃতভাবে ও ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বর্ণিত প্রার্থীকে কটাক্ষ করেছেন এবং তাঁর মৃত্যু কামনা করেছেন মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি এ বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও নির্বাচন কমিশনকে হেয় প্রতিপন্ন করে বিভিন্ন সভা–সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করছেন মর্মে নির্বাচন কমিশনের গোচরীভূত হয়েছে।
প্রকৃত বিষয় জানিয়ে ইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বর্ণিত প্রার্থীর ওপর আক্রমণ হওয়ার ঘটনা অবহিত হওয়া মাত্রই প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারগণ দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করেন। নির্বাচন কমিশনের এ নির্দেশনার আলোকে বরিশাল জেলা প্রশাসন ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্তপূর্বক বর্ণিত বিষয়ে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতঃ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন মর্মে ১৪ জুন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছে। সেই প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে মঈনুল ইসলাম স্বপন ও জহিরুল ইসলাম রেজভীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হয়।
ভিডিও ও সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে এই ঘটনায় জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদের শনাক্ত করা এবং পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। বলা হয়, উক্ত বিষয়টি নির্বাচন কমিশন সার্বক্ষণিক তদারকি করে যাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে এবং কোনো রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর প্রতি অনুরাগ বা বিরাগভাজন না হয়ে তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি কখনো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের মেয়র পদপ্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের সুনাম ও সম্মানের হানি ঘটে, এমন কোনো মন্তব্য করেননি।
ইসি বলছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বর্ণিত প্রার্থীর মৃত্যু কামনা করেছেন মর্মে প্রচারিত সংবাদ ও বক্তব্য সম্পূর্ণ অলীক, মনগড়া, অনুমাননির্ভর ও ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত। এমন ‘অসত্য’ সংবাদ ও বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
নির্বাচন কমিশনের বিবৃতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, তিনি কি ইন্তেকাল করেছেন? এমন প্রশ্ন সিইসি যে বলেছেন, তা গণমাধ্যমের সুবাদে দেশবাসীর সাথে আমরাও শুনেছি। ঘটনার ১৪ দিন পরে বিবৃতি দিয়ে সিইসির বক্তব্য অস্বীকার করা দুরভিসন্ধিমূলক বলে মনে হচ্ছে।












