সমতল ভূমি থেকে অন্তত তিনশ ফুট উঁচু পাহাড়ে টমেটো চাষে সাফল্য পেয়েছেন মো. আবু সাইদ নামে খাগড়াছড়ির এক কৃষক। জেলার মাটিরাঙায় তিনি টমেটো বাগান থেকে চলতি মৌসুমে অন্তত অর্ধকোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। মাটিরাঙার শান্তিপুরের সীমান্ত ঘেঁষা মেস্ত্রীর চর এলাকায় ইজারা নেয়া ৪ একর টিলা ভূমিতে প্রথমবারের মতো উচ্চ ফলনশীল স্মার্ট–১২১৭ জাতের টমেটো চাষ করে এলাকায় রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছেন তিনি।
সরেজমিনে টমেটোর বাগান ঘুরে দেখা যায়, পাহাড়ের উপরে মাচায় সবুজ, হলুদ আর পাকা টমেটো সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে। গাছের পরিচর্যার পাশাপাশি গাছ থেকে পাকা টমেটো তুলছেন শ্রমিকেরা। এই বাগানে প্রতিদিন কাজ করে অন্তত ১৫ শ্রমিক।
কৃষক মো. আবু সাঈদ বলেন, ২০২২ সালে এক বন্ধুর ফলজ বাগানে বেড়াতে এসে পাহাড়ের বিস্তীর্ণ জমিতে তামাক চাষ দেখে মর্মাহত হই। আমি মনে মনে তামাকের পরিবর্তে টমেটো চাষের পরিকল্পনা করি। পরিকল্পনা মত ৪ একর জমিতে টমেটোর চাষ শুরু করি। অক্টোবরের শেষের দিকে পাহাড়ি ঢালুতে স্মার্ট–১২১৭ জাতের টমেটো চারা লাগাই। এ জাতের টমেটো গাছ প্রতি গড়ে ৮–১০ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। একর প্রতি গড় ফলন ৪০–৪৫ টন। ফল ডিম্বাকৃতির শক্ত এবং আকর্ষণীয় লাল বর্ণের হয়। একই সাথে বীজ বপনের ৬০–৬৫ দিনের মধ্যেই ফল সংগ্রহ শুরু করা যায়। প্রতিটি গাছ টমেটোর ভারে নুইয়ে পড়ে। আবু সাঈদ আরো জানান, এই জাতের টমেটো রোগ বালাই সহিষ্ণু। বাগানে কাজ করে ১৫ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। পর্যায়ক্রমে একই জমিতে আরো বিভিন্ন জাতের সবজির উৎপাদন করা হবে বলে জানান মো. সাইদ।
আবু সাঈদের আশা চলতি মৌসুমে এক থেকে দেড় লাখ কেজি টমেটো উৎপাদন হবে। যার বাজারমূল্য ৪৫ লাখ টাকা। টমেটো উৎপাদনে ১৬ লাখ টাকা খরচ হবে বলেও জানান এ কৃষি উদ্যেক্তা।
টমেটো বাগানের শ্রমিক মো. আমির হোসেন বলেন, এই সময়ে আমাদের কাজ কম থাকে। এখন টমেটোর বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসারের খরচ মেটাই। আমার মতো এলাকার অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
মাটিরাঙা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, সমতলের পাশাপাশি পাহাড়ের ঢালুতে টমেটো চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। যার অনন্য দৃষ্টান্ত কৃষক মো. আবু সাঈদ। কঠোর পরিশ্রম ও সঠিক পরামর্শ পেলে এ অঞ্চলের কৃষকরা কৃষিতে বিপ্লব সাধন করে। আবু সাঈদকে আমরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা দিয়েছি।