রাউজানে চাঞ্চল্যকর মিলন চৌধুরী হত্যা মামলার রায়ে আসামি কাঞ্চন চৌধুরী, মৃদুল চৌধুরী ও জনি চৌধুরী নামে তিনজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত দায়রা জজ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান মজুমদার। গত বুধবার তিনি এই রায় ঘোষণা করেন। ২০১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাউজান পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের পূর্ব গহিরার কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয় সংলগ্ন যোগেশ চৌধুরীর বাড়ির পাশে আসামিরা পারিবারিক শত্রুতার জের ধরে মিলন চৌধুরীকে জবাই করে হত্যা করে। আসামি কাঞ্চন চৌধুরী (৫৮) ও মৃদুল চৌধুরী (৬২) নিহতের আপন ভাইপো এবং জনি চৌধুরী (৩০) নিহতের নাতি হয়।
প্রদত্ত রায়ে বলা হয়, সাক্ষীর সাক্ষ্যে যুক্তি তর্ক প্রমাণে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় ঘোষণা করা হল।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি সকাল ৮ টার দিকে আসামি কাঞ্চন চৌধুরী ও মৃদুল চৌধুরীর পিতা এবং নিহতের আপন ভাই হরিপদ চৌধুরীর পক্ষের লোকেরা হকিস্টিক, ক্রিকেট ব্যাট, গাছের লাঠি দিয়ে মিলন চৌধুরীর পুত্র মামলার বাদী উত্তম চৌধুরী ও তার মা রত্না চৌধুরীকে এলোপাথারি পেটাতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় পূর্ব গহিরা কল্যান সংসদের লোকজন এগিয়ে এসে গুরুতর আহত দুজনকে উদ্ধার করে রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা দেন। এই ব্যাপারে রাউজান থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুুলিশ তদন্ত শেষে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা নেন। হামলাকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বাদীপক্ষকে দেখে নেবে বলে হুমকি দিতে থাকে।
গত ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে মিলন চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যরা রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পরে। পুত্র উত্তম চৌধুরী চাকুরীর সুবাদে চট্টগ্রাম শহরে থাকে, পরদিন ২ ফেব্রুয়ারি ভোর আনুমনিক ৫টার দিকে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে ঘুম থেকে উঠে মিলন চৌধুরী ঘর থেকে বের হলে ওঁৎ পেতে থাকা কাঞ্চন চৌধুরী, মৃদুল চৌধুরী ও জনি চৌধুরীরা মুখ চেপে ধরে মিলন চৌধুরীকে বাড়ি সংলগ্ন কুলু রামদের বাড়ির চলাচলের রাস্তায় নিয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করে পালিয়ে যেতে থাকে। এ সময় প্রতিবেশী রবি দে তার গোয়াল ঘর থেকে গরু বের করার সময় গোঁঙানির শব্দ শুনে চিৎকার দেয় এবং আসামিদের পালিয়ে যেতে দেখেন। রবি দের চিৎকারে আশে পাশের লোকজন এগিয়ে এসে গুরুতর আহত মিলন চৌধুরীকে উদ্ধার করে রাউজান জে. কে মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি দেখে ডাক্তারের পরামর্শে মিলন চৌধুরীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অতিরিক্ত পি.পি শামসুদ্দিন আহম্মদ সিদ্দিকী টিপু ও দেলোয়ার হোসেন এবং তাদেরকে সহায়তা করেন সিনিয়র এডভোকেট রনাঙ্গ বিকাশ চৌধুরী, বাবুল সরকার ও মেজবাহ উদ্দিন। উল্লেখ্য যে, এই মামলার ২২ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদী পক্ষের আইনজীবীরা প্রত্যেককে সাক্ষ্য দানে সক্ষম হন। এছাড়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই আবদুল কাদের জিলানী আসামিদের পক্ষ নেওয়ায় মামলার বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ১৩ আগস্ট মামলাটির তদন্তভার সিআইডির হাতে ন্যস্ত হয়। সিআইডি পরিদর্শক সাইফুর রহমান ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার চার্জশীট দাখিল করেন।