দীর্ঘ তিন মাস পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস যেন তার চিরচেনা রূপ ফিরে পেয়েছে। দীর্ঘ সময় পর শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। গতকাল রোববার সকাল নয়টার দিকে ট্রেনে চড়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসেন। এরপর বেলা বাড়ার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের সমাগম বাড়তে থাকে। এছাড়া আট বছর পর বৈধভাবে সিট পেয়ে হলে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাসের প্রতিটি অনুষদে শিক্ষার্থীদের আসতে দেখা গেছে। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো ফের মুখরিত হয়ে উঠেছে। শহীদ মিনার, লাইব্রেরি, প্রতিটি ঝুপড়ি এবং হলগুলো যেন এতদিন শিক্ষার্থীদের অভাববোধ করছিল। অপরদিকে হলে হলে আসনপ্রাপ্তদের নিজ নিজ আসন গ্রহণ করতে দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ ফিরবে বলেও জানান তারা। বাংলা তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, দীর্ঘ সময় আন্দোলন সংগ্রামের কারণে ক্লাস বিমুখ রয়েছি। পড়াশোনার প্রতি অনীহা চলে এসেছে। ক্লাসে ফিরতে পারছি, ভালো লাগছে অনেক। নতুনরূপে সাজতে শুরু করেছে ক্যাম্পাস। আশা করি শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকবে। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আয়মান বলেন, দীর্ঘদিন ক্লাস করতে না পারায় শরীর ও মনে অবসাদ সৃষ্টি হয়েছিলো। দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসে, ক্লাসে ফিরতে পেরে ভালো লাগছে। প্রায় দীর্ঘ তিন মাস পর গতকাল শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ক্লাস শুরুর পূর্বে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে লাল ব্যাজ পরে সম্মান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে তারা শহীদদের স্মরণ করেন। পরে সকলেই নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করেন।
আন্দোলনে শহীদ, নির্যাতিতদের কথা মনে করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বিশেষ করে শহীদ ফরহাদ ও শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়াকে স্মরণ করে সকলে দোয়া করেছেন।
দোয়া অনুষ্ঠানে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, আমরা শুরুতে জুলাইয়ের শহীদদের স্মরণ করছি এবং তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। আমরা তাদেরকে আজীবন মনে রাখবো। বাংলাদেশের মানুষ তাদেরকে স্মরণ করবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এতোগুলো মাস পর শিক্ষার্থীদের মধ্য বাধভাঙ্গা আনন্দ দেখতে পাচ্ছি। অপরদিকে ফ্যাসিস্ট সরকারের রেখে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনেক কাজ বাকি রয়েছে। সেগুলো আমরা ধীরে ধীরে করার চেষ্টা করছি।
চবি প্রক্টর প্রফেসর ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, গত কয়েকদিনে অনেক প্রস্তুতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য নিরাপত্তা দপ্তরের নিজস্ব কর্মীরা নিয়োজিত থাকবেন। পাশাপাশি প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ একাধিক স্থানে দায়িত্বে থাকবে। সবমিলিয়ে আমরা প্রাণবন্ত ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের উপহার দিব।
জানা যায়, পর্যন্ত ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে বন্ধ ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস। ১ জুলাই থেকে ক্লাস চালুর কথা থাকলেও প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে পড়ে। এরপর শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে ৭ জুলাই থেকে ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন করেন। কোটা আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন মাস বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়।