কক্সবাজার থেকে টেকনাফে পাত্রী দেখতে গিয়ে অপহৃত তিন বন্ধুর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে দুই রোহিঙ্গাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া অপহৃত রুবেলের মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার তিন বন্ধুর মধ্যে দুইজনের মরদেহ শনাক্ত করে তাদের স্বজনরা দাফনের জন্য নিয়ে গেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানায়, অপহৃতদের যারা মুক্তিপণের টাকা দিতে ব্যর্থ হতো তাদের তারা মাটিতে পুঁতে ফেলতো। র্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, তিন বন্ধুকে অপহরণের পর হত্যায় জড়িত একজনের দেওয়া তথ্য মতে অর্ধগলিত অবস্থায় লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত দুই সপ্তাহ আগে পাহাড়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তিন জনের মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফে ছোট ভাইয়ের জন্য পাত্রী দেখতে গিয়ে অপহৃত তিন বন্ধুর মৃতদেহ ঘটনার ২৫ দিন পর বুধবার (২৪মে) বিকাল ৫ টায় টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া সংলগ্ন গহীন পাহাড়ি এলাকা থেকে উদ্ধার করে র্যাব। এর আগে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে গ্রেপ্তারের পর তার দেয়া তথ্য মতে অভিযান চালিয়ে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়।
তিন বন্ধু হলেন– কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলমের ছেলে জমির হোসেন রুবেল (৩৫), ঈদগাঁও জালালাবাদের মৃত মোহাম্মদ কবিরের ছেলে মোহাম্মদ ইউছুপ (৩৪) এবং কক্সবাজার শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ ইমরান (৩৩)। নিহত তিনজনই পরস্পরের বন্ধু। তাদের মধ্যে গতকাল জমির হোসেন রুবেল (৩৫) ও মোহাম্মদ ইউছুপের লাশ নিয়ে দাফন করেছেন স্বজনরা। এ ঘটনায় র্যাব দুইজনকে আটকের তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে গত ১২ মে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ দুই রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিম।
গ্রেপ্তার দুইজন হলেন, রোহিঙ্গা শফি আলম ও তার ভাগ্নে আরাফাত। শফি কক্সবাজার শহরের ৬ নম্বর ঘাটে একটি দোকানের কর্মচারী।
ওসি মো.আবদুল হালিম বলেন, ‘গত ২৮ এপ্রিল টেকনাফ সদরে কোহিনূর নামক এক মেয়েকে দেখার টোপ দিয়ে রুবেলসহ তার দুই বন্ধুকে ডেকে আনে রোহিঙ্গা শফি আলম। তিন বন্ধু অপহরণের বিষয়টি নজরে আসার পর কাজ শুরু করে পুলিশ। শফির দেওয়া তথ্য মতে তার ভাগ্নে আরাফাতকে টেকনাফের মুচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে অপহৃত রুবেলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।’
এ দিকে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বুধবার টেকনাফ হাবিবছড়া গহীন পাহাড় থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব–১৫ অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন। গ্রেপ্তার ওই দুইজন হলো– ছৈয়দ হোসন ওরফে সোনালী ডাকাত (৩৫) ও এমরুল (৩০)।
লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, তিন বন্ধু টেকনাফ পাত্রী দেখতে গেলে গাড়ি থামিয়ে তাদের অপহরণ করা হয়। পরে তাদের পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
র্যাব তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় দুইজনকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী টেকনাফ দমদমিয়া এলাকার গহীন পাহাড় থেকে তিন বন্ধুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহগুলো ছিল অর্ধগলিত।
তিনি আরও জানান, মরদেহগুলো যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে মানুষের আনা–গোনা নেই। গ্রেপ্তার দুইজন দীর্ঘদিন ধরে অপহরণ কাজে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। তারা বিত্তশালীদের টার্গেট করেই অপহরণ করতো। দিনের বেলায় এই চক্রের সদস্যরা লোকালয়ে এসে সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশে থাকতো, আর রাতের বেলায় পাহাড়ে গিয়ে তাদের নির্যাতন করতো। যারা টাকা দিতে ব্যর্থ হয় তাদের মাটির মধ্যে পুঁতে রাখা হতো।