তিন বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণকাজ

কালুরঘাটে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার চলতি মাসে কাজ শেষ করতে নির্দেশনা

মোরশেদ তালুকদার | শনিবার , ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

তিন বছরেও শেষ হয়নি নগরের কালুরঘাট বিএফআইডিসি রোডে নির্মাণাধীন ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার’ প্রকল্পের নির্মাণকাজ। অবশ্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চলতি মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে নির্দেশনা দিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে প্রকল্পটির অবকাঠমোগত নির্মাণকাজ শুরু হয়। এরপর একই বছরের ২৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। আইসিটি (তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি) খাতে দক্ষ জনশক্তি ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ৪ দশমিক ৮৩ জায়গায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শুরুতে প্রকল্পব্যয় ধরা হয় ৪৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। পরে তা বেড়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টারটি হবে ৬ তলা ভবনের, যা সাড়ে ৩৫ হাজার বর্গফুটের। ২ তলা একটি ক্যান্টিন ও একটি ৫০০ কেভিএ সাবস্টেশন নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে প্রকল্পের আওতায়। এছাড়া ২টি লিফট স্থাপন, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ও আসবাবপত্র ক্রয়, ৫০০ কেভিএ জেনারেটর সরবরাহ ও স্থাপন, ফাইবার অপটিক কানেকটিভিটি স্থাপন এবং এসি কেনার কথা।

প্রকল্পের উপপরিচালক (উপসচিব) মো. মিজানুর রহমান আজাদীকে বলেন, মূল ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজাদীকে বলেন, অবকাঠামোগত কাজের ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করার টার্গেট দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। তবে এর মধ্যে শেষ করা হয়তো সম্ভব হবে না। আমরা দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি। ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আছে। আশা করছি এর মধ্যে কাজ শেষ করে বুঝিয়ে দিতে পারব।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার’ স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। ৫২২ কোটি ৫৪ লাখ ৯২ হাজার টাকায় অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় ৮টি জেলা চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, নাটোর, বরিশাল, মাগুরা, নেত্রকোণা ও রংপুর জেলায় সেন্টারটি নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত ছিল প্রকল্পে। পরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর প্রকল্পের ব্যয় ৫৩৩ কোটি ৫৪ লাখ ৯২ হাজার টাকায় উন্নীত করে অনুমোদন দেয় একনেক। এতে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, এসএসসি ও এইএসসি পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের আইটিতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা করা, একাডেমিয়া বা আইটি ইন্ড্রাস্ট্রির মধ্যে সেতুবন্ধন এবং আইটিআইটিইএস সম্পর্কিত খাতে দেশের যুব সমাজের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, বিএফআইডিসি রোডে সিটি কর্পোরেশনের ১১ দশমিক ৫৫১ জায়গা রয়েছে। পুরো জায়গায় পূর্ণাঙ্গ হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার কথা। এ লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ সিটি কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। চুক্তির আওতাভুক্ত জায়গার মধ্যেই শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২০ সালে এ সেন্টার নির্মাণে সিটি কর্পোরেশন থেকে দুই একর জায়গা বুঝে নেয় হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।

চসিকের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী, হাইটেক পার্ক নির্মাণে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যয় করবে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা নির্মাণকাজ। লভ্যাংশ চসিক ও হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ৫০ শতাংশ করে পাবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্মাণাধীন শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টারসহ পূর্ণাঙ্গ হাইটেক পার্ক গড়ে উঠলে প্রযুক্তি খাতে গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে চট্টগ্রামের। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও আইসিটি পণ্য উদ্ভাবন ও তা বিদেশে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং সরকারের রপ্তানি আয় সংক্রান্ত অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে চট্টগ্রাম।

হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলে হাইটেক শিল্পে দক্ষ জনশক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাবে। একইসাথে প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পের প্রসার ও বিকাশে দেশিবিদেশি বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এছাড়া হাইটেক পার্ক নিয়ে দেশিবিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে। স্বল্প খরচে জায়গা, নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ, উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা এবং উন্নত যাতায়াত সুবিধা থাকাসহ বিভিন্ন কারণে এসব পার্কের প্রতি সবার আগ্রহ বাড়ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকারখানা মালিকসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলা
পরবর্তী নিবন্ধসলিমপুরে হামলার ঘটনায় দুটি মামলা