তিন ইস্যুতে সিএমপির বিরুদ্ধে ‘নিষ্ক্রিয়তার’ অভিযোগ

চসিকের সাধারণ সভা রাস্তা হলো ৮ ফুট, বিল্ডিংয়ের অনুমতি দেয়া হচ্ছে ৮-১০ তলার : মেয়র

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৭:১৬ পূর্বাহ্ণ

তিন ইস্যুতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বিরুদ্ধে ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগ এনে ক্ষোভ জানানো হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সাধারণ সভায়। এর মধ্যে ‘পেপার্কিং’ চালু করতে অনুমতি না দেয়ায় সিএমপির ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এছাড়া ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করা এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ ইস্যুতে সিএমপির নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করেন কয়েকজন কাউন্সিলর। গতকাল বুধবার নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে এ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল চসিকের বর্তমান পর্ষদের (ষষ্ঠ) ৩২তম সাধারণ সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন সিটি মেয়র। সভায় সিএমপির প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।

ফুটপাত ও ব্যাটারি রিকশা ইস্যু : সভায় ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসীম বলেন, কয়েক মাস আগে মেয়র মহোদয়ের উপস্থিতিতে আমার ওয়ার্ডের বিভিন্ন ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ করার এক ঘণ্টার মধ্যে তারা আবার দখল করে নিয়েছে। বারবার অনুরোধের পরও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশ সদস্য ও তাদের সোর্স হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলে। এছাড়া অবৈধ ব্যাটারি রিকশার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটলেও বলার পরও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

জসীমের এ বক্তব্যের পর আরো কয়েকজন কাউন্সিলর তাদের এলাকার চিত্রও একই বলে তাদের বক্তব্যে দাবি করেন। আন্দরকিল্লা মোড়সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করে দোকানপাট বসা নিয়ে ক্ষোভ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সভায় উপস্থিত অন্তত চারজন কাউন্সিলর।

জহুরুল আলম জসীম ফুটপাত ইস্যুতে বক্তব্য দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে আজাদীকে বলেন, আমার ওয়ার্ডে পুলিশ সোর্সের মাধ্যমে টাকা তুলে হকারদের কাছ থেকে। কারা তুলে নামসহ বলতে পারব।

হকার ইস্যুতে মেয়র সভায় বলেন, ফুটপাত দখলের পর হকাররা এখন রাস্তাও দখল করছে। সিটি কর্পোরেশন পরিস্থিতির উন্নয়নে উচ্ছেদ চালাচ্ছে। মেয়র সিএমপির দায়িত্বশীলদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যত্রতত্র যেন হকার বসতে না পারে সেজন্য স্থানীয় থানায় নির্দেশনা দিন।

ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, বর্তমানে ব্যাটারি রিকশায় অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। ট্রেনিং, লাইসেন্স ছাড়াই অবৈধভাবে এ গাড়িগুলো চালান চালকরা। হয় এগুলোকে বন্ধ করে দেন, নাহলে কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে এদের নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি বলেন, টানেল আরম্ভ হলে শহরে গাড়ির চাপ আরও বাড়বে। যানজট কমাতে ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম চালু করতে হবে এবং রিকশার মতো ধীরগতির বাহনের লাগাম টানতে হবে।

পেপার্কিং এর অনুমতি না দেয়ায় উষ্মা মেয়রের : নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত এক কাউন্সিলর আজাদীকে বলেন, পেপার্কিং চালু করতে উদ্যোগ নিলেও সিএমপি অনুমতি দিচ্ছে না। তাই উষ্মা প্রকাশ করেন মেয়র। সভায় এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, কলকাতার মতো ঘিঞ্জি শহরে পেপার্কিং চালু করা গেলে চট্টগ্রামে করতে ট্রাফিক বিভাগের আপত্তি কোথায়? পেপার্কিং করতে গেলে সেখানে বাধা, যত্রতত্র গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলে তো কোনো বাধা দিতে দেখছি না।

অন্যান্য : সভায় মেয়র বলেন, চট্টগ্রামকে বসবাসের অনুপযোগী শহরে পরিণত হওয়া থেকে বাঁচাতে সবগুলো সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে হবে। সমন্বয় করতে হবে। ওয়াসার যে সুয়্যারেজ প্রকল্প তা চসিকের সাথে সমন্বয় না করলে ফলপ্রসু হবে না। আজকে এ সভায় ওয়াসার কোনো প্রতিনিধি নেই। যেসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সাধারণ সভায় অনুপস্থিত থাকছে তাদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।

তিনি বলেন, নগরে বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে না। রাস্তা হলো ৮ ফুট, বিল্ডিংয়ের অনুমতি দেয়া হচ্ছে ৮১০ তলার। একেকটা বিল্ডিংয়ে একেকটা গ্রামের সমান লোক বসবাস করছে। এজন্য আমরা প্রস্তাব করেছি বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে চসিক থেকে অনাপত্তিপত্র নিতে। ফায়ার ব্রিগেড থেকেও অনুমতি নেয়া প্রয়োজন। কারণ কোনো দুর্ঘটনা হলে রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্দর চেয়ারম্যানকে মেট্রোপলিটন চেম্বার সভাপতির চিঠি
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্বকাপের পর একদিনও অধিনায়ক থাকতে চান না সাকিব