প্রায় নষ্ট হয় শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। কংক্রিট, ইট-বিটুমিন উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয় ফাটল বা বড় বড় গর্ত। সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নিজস্ব অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টে তৈরি মিক্সার (ইট, কংক্রিট, বিটুমিনের মিশ্রণ) দিয়ে এসব সংস্কার করে। যা তাদের ভাষায় প্যাচওয়ার্ক। এ কাজ করতে গিয়ে নানা প্রক্রিয়া করতে হয়। কারণ প্রথমে কারখানায় মিক্সার তৈরি করতে হয়। পরে মিক্সিংবাহী ট্রাকে করে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে নিয়ে আসতে হয়। শেষে শ্রমিক দিয়ে চলে সংস্কার কাজ। আবার ফিনিশিংয়ের জন্য দরকার হয় রোলারেরও। সবমিলিয়ে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ হয়। লাগে অতিরিক্ত জনবলও। তবে এখন থেকে তাৎক্ষণিক তৈরি মিক্সার দিয়ে সড়কে সৃষ্ট গর্ত ভরাট করবে চসিক। অর্থাৎ যেখানে সড়ক নষ্ট হয়েছে সেখানেই মিক্সার তৈরি করে চলবে সংস্কার কাজ। আর তা করা হবে আধুনিক ‘পোট হোল পেচার’ দিয়ে। যা ‘রোড মেইনটেনেন্স ট্রাক’ নামে সর্বাধিক পরিচিত। ১২ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির চারটি রোড মেইনটেনেন্স ট্রাক সংগ্রহ করেছে সংস্থাটি। আগে যে কাজ করতে ১০ থেকে ২০ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হত তা এখন মেশিনটির সাহায্যে দুই থেকে তিনজন শ্রমিক দিয়ে করা যাবে। লাগবে না আলাদা রোলারও। মেশিনগুলো ব্যবহারের ফলে গতি বাড়বে সড়কের সংস্কার কাজে। একইসঙ্গে অপচয় হবে না সময়েরও।
চসিকের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর দাবি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ছাড়া দেশের আর কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কাছে আধুনিক রোড মেইনটেনেন্স ট্রাক নেই। আগামীকাল রোববার সকালে সিআরবি এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে মেশিনগুলোর উদ্বোধন করবেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। এরপর এসব মেশিন দিয়ে নিয়মিত সংস্কার কাজ করবে চসিক। বিষয়টি দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন মেয়র।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ৪২০ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় গৃহীত ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং ব্রিজসমূহের উন্নয়নসহ আধুনিক যান যন্ত্রপাতি ও সড়ক আলোকায়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পোট হোল পেচার’গুলো সংগ্রহ করা হয়। অবশ্য প্রকল্পে মেশিনগুলো ক্রয়ে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। গত জুন মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানি থেকে মেশিনগুলোর পার্টস এনে দেশে প্রস্তুত করে। পরবর্তীতে চসিকের প্রকৌশলীসহ ৩০ জন অপারেটর, চালক ও মেকানিককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় মেশিনগুলো চালানোর জন্য। সর্বশেষ গত সপ্তাহে সাগরিকা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে এসব মেশিন দিয়ে সড়ক মেরামত করা হয়।
জানা গেছে, মেশিনগুলোতে উন্নতমানের ‘ইমালসন’ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এগুলো হবে দীর্ঘস্থায়ী। মেশিনগুলো ব্যবহারের ফলে মিক্সার তৈরির জন্য আলাদা অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টের প্রয়োজন পড়বে না। তৎক্ষণিক মিক্সার তৈরি করা যাবে, তাই বৃষ্টি-বাদল বা যে কোনো কারণে মেরামতকাজ স্থগিত হলে মিক্সার নষ্ট হবে না। এতে আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচবে চসিক। উল্লেখ্য, আগে অ্যাসফল্ট প্লান্টে মিক্সার তৈরির পর বৃষ্টি শুরু হলে তৈরিকৃত মিক্সার ব্যবহার করা যেতো না। তা নষ্ট হয়ে যেত। অপচয় হতো অর্থের।
সংশ্লিষ্ট জানিয়েছেন, মেশিনগুলো দিয়ে সড়ক মেরামত করলে ফিনিশিংয়ের জন্য আলাদা কোনো রোলার গাড়ি দরকার হবে না। এতেও লোকবল এবং আর্থিক সাশ্রয় হবে চসিকের। তাছাড়া মেশিনগুলোর সাহায্যে বর্ষা মৌসুমেও রাস্তার মেরামত করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক দৈনিক আজাদীকে বলেন, পোট হোল পেচার বা রোড মেইনটেনেন্স ট্রাক সংগ্রহের মধ্য দিয়ে সিটি কর্পোরেশন আধুনিক যান সংগ্রহের দিক দিয়ে অনেক সমৃদ্ধ হল। আগে বর্ষায় আমরা কাজ করতে পারতাম না। এখন মেশিনগুলোর সাহায্যে করা যাবে। সড়কে গর্ত সৃষ্টি হওয়ার পর যদি সেখানে পানি জমে থাকে তা মেশিন দিয়ে পরিষ্কার করা হবে। তারপর তাৎক্ষণিক সেটা ভরাট করে দিব। তিনি বলেন, মেশিনগুলো ব্যবহারের ফলে কম জনবল এবং অর্থ দিয়ে দ্রুত গতিতে প্যাচওর্য়াক করতে পারব।