তরুণ ভোটারদের কাছে টানতে চায় বিএনপি। এর অংশ হিসেবে দলটির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল ও দুই অঙ্গসংগঠন যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যানারে চট্টগ্রামসহ দেশের চার জেলায় তারুণ্যের সেমিনার ও সমাবেশ আয়োজন করা হচ্ছে। আগামীকাল শুক্রবার ও পরদিন শনিবার প্রথম সেমিনার ও বিভাগীয় সমাবেশটি হবে চট্টগ্রাম মহানগরে। এর আগে ২০২৩ সালেও একই সংগঠনের ব্যানারে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করা হয়। ওই সময় আয়োজনের শুরু থেকেই তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের বাধার মুখে পড়লেও এবারের আয়োজন হচ্ছে বাধাহীন। তবে এবার সমাবেশে তারুণ্যের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি নিশ্চিত করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপির অন্যতম তিন সংগঠনের জন্য।
অবশ্য যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সমাবেশ ও সেমিনার ঘিরে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা। কয়েক লক্ষ লোকের উপস্থিতি হবে তারুণ্যের সমাবেশে। সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে বিভাগের আওতাধীন প্রতিটি জেলায় প্রস্তুতি সভা ও প্রচারণা চালানো হয়েছে। এতে যোগ দিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারাও। প্রচারণা চালানোর সময় সাড়া দিয়েছেন সাধারণ লোকজনও। এদিকে সমাবেশ ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলায় ব্যাপক প্রস্তিতি নেয়া হয়েছে। ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল সমাবেশ আয়োজন করলেও বিএনপি এবং অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ তরুণরাও এতে অংশ নিবে বলে দাবি করেছেন আয়োজকরা। ইতোমধ্যে বিএনপিও বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা করেছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকা, খুলনা ও বগুড়ায়ও এ সমাবেশ ও সেমিনার হবে। এর মধ্যে আগামীকাল শুক্রবার একটি কনভেনশন হলে ‘কর্মসংস্থান ও বহুমাত্রিক শিল্পায়ন নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার এবং পরদিন শনিবার নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে ‘তারুণ্যর রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হবে। মূলত সমাবেশেই বিপুল সংখ্যক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি।
জানা গেছে, আগামী শনিবার পলোগ্রাউন্ড মাঠে অনুষ্ঠেয় সমাবেশটি হবে গত প্রায় ১৩ বছরের মধ্যে বিএনপির তৃতীয় সমাবেশ। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে আসার পথে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলা ও বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া সমাবেশের কয়েকদিন আগে থেকে নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করা হয় বলে ওই সময় অভিযোগ ছিল বিএনপির।
এর আগে পলোগ্রাউন্ড মাঠে ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি বিএনপির আরেকটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে এ মাঠে সমাবেশ করতে চাইলেও প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় করতে পারেনি। তবে আগামী শনিবারের সমাবেশ ঘিরে অনুমতি সংক্রান্ত কোনো জটিলতা হয়নি।
এ বিষয়ে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না আজাদীকে বলেন, বাধাহীন বা বাধা এভাবে আমরা কখনো চিন্তা করিনি। বাধা দেয়া সত্ত্বেও আমরা অতীতে প্রোগ্রাম করেছি। এখন উন্মুক্ত পরিস্থিতিতে সমাবেশে জনগণের, বিশেষ করে তারুণ্যের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে। সমাবেশে সর্বোচ্চ উপস্থিতি হবে। লক্ষ জনতার সমাবেশ হবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, তারুণ্যের যে আকাঙ্ক্ষা, সাড়ে চার কোটি তরুণ তরুণ ভোটারের ডিমান্ডকে সামনে রেখেই আমাদের কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছি। আগামীতে তরুণরা রাষ্ট্রকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে সেইসব বিষয়গুলোই উঠে আসবে। আমরা তরুণদের একত্রিত করতে চাই। আমাদের অভিভাবক তারেক রহমানকে আমরা তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে ভাবি, সেটাকেই প্রেজেন্টেশনের মধ্যে আনতে চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মঙ্গলবার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ডা. জোবাইদা রহমানকে বরণ করার জন্য দেশের মানুষ একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। কারণ আমরা জনগণকে পাশে নিয়েই চলি। আমাদের নেতা তারেক রহমান সবসময় বলছেন, মানুষের পাশে থাকতে হবে, মানুষকে সাথে নিয়ে রাজনীতি করতে হবে এবং মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেভাবে চলতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য যা যা করণীয় সেটা আমরা তরুণদের সাথে করবো। সেই বার্তায় থাকবে সমাবেশে।
নগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ আজাদীকে বলেন, সেমিনার ও সমাবেশ সফল করতে পহেলা মে থেকে প্রতিদিন প্রস্তুতি সভা ও প্রচারণা চলছে। নগরের প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। আশা করছি তারুণ্যের ঢল নামবে।
নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জমির উদ্দিন নাহিদ আজাদীকে বলেন, কর্মসূচির লক্ষ্য হলো তরুণদের জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র নির্মাণের ভিত্তি রচনা করা। সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা। শুধু নগর থেকেই তিন সংগঠনের লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশ নিবেন। উত্তর–দক্ষিণ ও অন্যান্য জেলা মিলিয়ে সব মিলিয়ে ৫ লক্ষ লোকের সমাগম হবে।
নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. সাইফুল আলম আজাদীকে বলেন, সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিতে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নগরের প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ১৬টি কলেজে প্রস্তুতি সভা সম্পন্ন করেছি। আজকে (গতকাল বুধবার) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরসহ প্রস্তুতি সভা করেছি। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এস এম মুরাদ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, উত্তর জেলার ২১টি ইউনিটে আমরা প্রস্তুতি সভা করেছি। জেলায় যৌথ সভা করেছি। আশা করছি উত্তর জেলার সর্বোচ্চ উপস্থিতি থাকবে।