তামাক ছেড়ে ভুট্টা

খাগড়াছড়িতে পাল্টে যাচ্ছে ফসলি জমির চিত্র

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | সোমবার , ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

বাজার মূল্য ভাল পাওয়ায় খাগড়াছড়ির কৃষকেরা ক্রমেই তামাকের পরিবর্তে ভূট্টা চাষের দিকে ঝুকে পড়ছে। পুষ্টিগুণে ভরপুর ভূট্টা মানুষ ও পশু খাদ্যের অন্যতম উপাদান হওয়ায় বাজারে চাহিদা বেশ। ফলে চলতি বছরে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ভূট্টা চাষ বেড়েছে কয়েক গুণ। খাগড়াছড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা এখন সবুজ ভূট্টায় ভরপুর। বিভিন্ন তামাকজাত কোম্পানীর প্রলোভনে এক দশকের বেশি সময় ধরে খাগড়াছড়িতে চাষ হয়ে আসছে ক্ষতিকর তামাক। দেরিতে হলেও তামাক কোম্পানীগুলোর ঠকবাজি বুঝতে পেরে কৃষকেরা তামাক চাষ ছেড়ে বেছে নিচ্ছে ভূট্টাসহ মৌসুমি রবি শস্য চাষ। ফলে ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করেছে পাহাড়ের ফসলের মাঠে চিত্র। উৎপাদিত ভূট্টার বিক্রি নিশ্চিয়তা থাকায় কৃষকেরা চাষ করছে বাণিজ্যিকভাবে। দীঘিনালা উপজেলার আব্দুল করিম এক সময় কৃষি জমিতে তামাক চাষ করতেন। গত বছর থেকে তামাক চাষ ছেড়ে ভূট্টা চাষ শুরু করেছেন। তিনি জানান, তামাক কোম্পানীগুলোর প্রলোভনে পড়ে তামাক চাষ করে অনেক লোকসান দিয়েছেন। তিনি এখন দেনার দায়ে জর্জড়িত। তার মত অনেক কৃষক তামাক চাষ করে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তবে এখন তারা তামাকের পরিবর্তে ভূট্টার চাষ করছেন। এতে লাভের সম্ভাবনা বেশি। খাগড়াছড়ি জেলা সদর ছাড়াও পানছড়ি, দীঘিনালা, মাটিরাঙ্গায় বিস্তীর্ণ জমিতে ভূট্টা আবাদ হচ্ছে। ভূট্টা চাষ করে আকাশসম সফলতা পেয়েছেন খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার কমলছড়ির চাষী জীবক চাকমা। প্রায় ৫ একর জমিতে ভূট্টা চাষ করেছেন তিনি। অনুকূল আবহওয়া থাকায় চলতি মৌসুমে ভূট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি একর ক্ষেত থেকে প্রায় ১১০ থেকে ১২০ মণ ভূট্টা উৎপাদিত হয়েছে।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায়, ভূট্টা স্বল্প মেয়াদী ফলস। রবি মৌসুমে ১৪০-১৪৫ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৯৫-১০০ দিনে ভূট্টা পরিপক্ব হয়। প্রতি হেক্টরে জমিতে সাড়ে ৪ থেকে ৬ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। ভূট্টা দানা বেশ বড়, সোনালী হলুদ রংয়ের ও সেমি ফ্লিন্ট আকৃতির। গাছের উচ্চতা লম্বা আকৃতির (২০০-২১০ সেমি)। চারা অবস্থায় কাণ্ড বেষ্টুনিতে গাড় বেগুনী রংয়ের উপস্থিতি বিদ্যমান। কৃষি জমির উর্বরতা ও ক্ষতি ঠেকাতে তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করেছে কৃষি কর্মকর্তারা।
দীঘিনালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করে মৌসুমি রবি ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে চাষীদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তামাকের বিকল্প হিসেবে ভূট্টাসহ অন্যান্য ফসল চাষে দিচ্ছেন বীজ, সার ও কারিগরি সহায়তার মত প্রণোদনা।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক ড. মো. শফি উদ্দিন বলেন, চাষীদের মধ্যে সচেতনা ও প্রণোদনা দেয়ার কারণে খাগড়াছড়িতে ক্রমেই তামাক চাষ কমছে। গত বছর যেখানে জেলায় ৬৩০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছিল সেখানে চলতি বছরে হ্রাস পেয়ে ৫৮০ হেক্টরে নেমেছে। অপর দিকে খাগড়াছড়িতে চলতি মৌসুমে ৫৩০ হেক্টর জমিতে ভূট্টা চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৩৩৫ মেট্টিক টন। পক্ষান্তরে গত বছর ভূট্টা চাষ হয়েছিল ৫০২ হেক্টর জমিতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচ্যালেঞ্জ নিতে ভয় নেই
পরবর্তী নিবন্ধলক্ষ্য আরও ১০ পয়েন্ট