অনলাইন মার্কেটপ্লেসে নারীর অংশগ্রহণ এখন নতুন নয়। তিন বছর যাবত অনলাইন ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন কামরুন নাহার সানজিদা। পাহাড়ির স্বত্বাধিকারী তিনি। মো. নূরুল ইসলাম এবং আয়েশা বেগম দম্পতির ৬ কন্যা এবং তিন পুত্রের মধ্যে সানজিদা পঞ্চম। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত বাবা-মা শত টানাপোড়েনের মাঝেও চেয়েছিলেন ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তুলতে। সানজিদা জানান, টানাপোড়েনের সংসার ছিল। বছরে একটা জামা পেতাম এক ঈদে। বন গবেষণাগার হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে সানজিদা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন ২০১২ সালে। তখন থেকেই টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতেন। কিন্তু বন্ধুদের কাছে টিউশনি খুঁজলে অনেক সময়ই শুনতে হতো, ‘তুই মেয়ে মানুষ, এত টাকা দিয়ে কী করবি?’ টিউশনির টাকা জমিয়ে পরের বছর আবারও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রস্তুতি নেন সানজিদা। ২০১৩ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। প্রথম বর্ষের শেষদিকে কাজ শুরু করেন একটি অনলাইন পোর্টালে। প্রথম তিনমাস বেতন ছাড়াই কাজ করতে হয়েছে। পরে চট্টগ্রামের একটি কাজ শুরু করেন তিনি। আড়াই বছর সেখানে কাজ করেন। এর মধ্যে সানজিদার পরিবারে নেমে আসে আরেক দুর্যোগ। ২০১৮ সালে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার মধ্যেই হঠাৎ বাবাকে হারান সানজিদা। বাবার মৃত্যুর পর যেন থেমে যাচ্ছিল সব পথচলা। কিন্তু অদম্য সাহসী আর উদ্যোমী সানজিদা হার মানেন নি। পড়াশোনা, সাংবাদিকতা, পরিবারের দেখাশোনা সব চালিয়ে গেছেন সমানতালে। নিজের একটা কিছু করার ইচ্ছা জেগে ওঠে তার মনে। রাঙামাটির আদিবাসী নারীদের তৈরি পোশাক নিয়ে শুরু করেন শাড়ির পেজ, সানজিস ফ্যাশন। তবে পড়াশোনা, চাকরি, ডেডলাইন, পরিবার সব মিলিয়ে সময়ের অভাবে তা আর এগিয়ে নিতে পারেন নি। ২০২০ এর লকডাউনের মধ্যেই আবারও একটি অনলাইন পোর্টালে কাজ শুরু করেন সানজিদা। কিন্তু এখানে অনিশ্চয়তাও কম নয়। তাই এবার আঁটঘাঁট বেঁধেই নামলেন ব্যবসায়। শুধু শাড়িতে আর আটকে থাকলেন না। পাহাড়ি কাপড়, গয়না, সৌখিন জিনিসপত্র, এমনকি খাবারও যোগ করলেন এবার। বাড়িতে সাহায্যকারী বলতে মা আর ছোট ভাই। নতুন ব্যবসা নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা শুনতে চাইলে বললেন, মেয়েরা যখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে, বিশেষত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা, তখন সাহায্য করার লোক থাকুক না থাকুক ভয় দেখানোর লোকের অভাব হয় না। কিন্তু আমি দমে গেলে আমার পরিবারকে দেখার কেউ থাকবে না। এখনও আমাকে অনেকে বলেন, এত টাকা দিয়ে কি করবি? ব্যবসা থেকে যা আয় হয় তার পুরোটা সংসারের পেছনে ব্যয় হয়। আমার পাহাড়ির ক্রেতাদের সন্তুষ্টি আমার হয়ে কথা বলবে। সানজিদা কেবল নিজের কাজের প্রচারই করেন না। থাকেন অন্যদের পাশেও।