এত টানপোড়নের জীবনে মাস শেষে যা রাখতে পারি,
তা একদিন ফুলে–ফেঁপে বড় হলে, ভেবে রেখেছি–
তোমার জন্য একটা তাঁতের শাড়ি কিনবো।
সাদা জমিনে ছোট ছোট নীল ফুলের সবুজ পাড়ের শাড়ি।
ভেবেছিলাম, এই মাসেই বেতন পেলে দুই একদিনের মধ্যে
শাড়ির আড়ত ঘুরে ঘুরে তোমার জন্য
আমার পছন্দের তাঁতের শাড়িটা কিনে ফেলবো।
নীলফুল, সাদা জমিন, সবুজ পাড়ের শাড়িটা
শরীরে জড়িয়ে তুমি যখন অভিসারে আসবে,
তখন তোমাকে কাশের বাগানে একখণ্ড আকাশ
জন্ম জন্মান্তর পাহারা দিয়ে রাখবে।
তুমি একটা বড় লাল টিপ পড়ে খোলা চুলে
চঞ্চল হরিনীর মতো ছটফট করবে কাশের বনে বনে।
আমিও তোমার এমন রূপে দেখে দেখে
নিথর হয়ে থাকবো অনন্ত ছুঁয়ে যাওয়া জীবনে।
হঠাৎ করে সেদিন এক বর্ষাতে আমার বুকে কফ বসে গেল।
জ্বর, কাশি শ্বাসকষ্ট, অক্সিজেনের অভাব,
কত রকমের কষ্ট সহ্য করে ডাক্তার বাড়ি থেকে যমকে
বিদায় দিয়ে আগের জীবনে ফিরে এলাম।
এর মধ্যে আরও কত কিছু হয়ে গেল,
তেল, চাল, আটা, পাট, সূতা, সবজির দাম বেড়ে গেল।
চারিদিকে সব শূন্যতা, আমি আগের চেয়ে আরও শূন্য হয়ে গেলাম।
তোমার জন্য তাঁতের শাড়িটা আর কেনা হলো না।
আমার চাকরিটা গেলো, তুমিও চলে গেলে অন্য ঠিকানায়।
মন খারাপ করো না মেয়ে, দেখো ;
একদিন ঠিকই তোমার জন্য আমি তাঁতের শাড়িটা কিনে ফেলবো!
নীল ফুল–সাদা জমিন–সবুজ পাড়।