বাংলাদেশ নামক আলাদা একটি রাষ্ট্র হবে, এই ভাবনাটি একটা সময় ছিল মরিচিকার মত। অনেক গুণীজন ও মনীষী, শিল্প–সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতির প্রসারে নিঃসন্দেহে অবদান রেখেছেন। সেই অবদানকে বুকে ধারণ করে বাঙ্গালী জাতির আলাদা একটা রাষ্ট্র হবে এই অসামান্য স্বপ্নের বীজ মনে ধারণ করেছেন যেই মহাপুরুষ সেই হলেন বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তরুণ প্রজন্ম তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা যতবার পড়েছে, ততই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধুর চিন্তার গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার অর্জন নিশ্চিতকরণে তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু একক ভাবে তার পক্ষে সব বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর নই, তাই তরুণ প্রজন্মের উচিৎ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পুরোপুরি বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু যে আদর্শিক নেতৃত্বের পথ আমাদের দেখিয়েছেন তা প্রতি পদে পদে অনুধাবন করা এবং তার প্রতিফলন করা।
পাকিস্তানের কারাগার থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরার পর মাত্র সাড় তিন বছর সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যে অবদান রেখেছিলেন তার সুফল ভোগ করছে আজকের এই তরুণ প্রজন্ম এবং সমগ্র বাঙ্গালী জাতি। স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি ১১৬টি রাষ্ট্রের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বীকৃতি অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে মাতৃভাষা বাংলায় ভাষণ দেন। ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা চুক্তি সম্পাদন, সমুদ্র আইন প্রণয়ন করেন। তিনি এত অল্প সময়ে এত অর্জন করেছেন, যা অন্যান্য সকল গণতান্ত্রিক ধারার রাষ্ট্রের জন্য এবং আধুনিক বিশ্ব ও তরুণ রাজনিতীবিদদের জন্য অনুকরণীয়।
মূলত একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে সেই দেশটির তরুণ সমাজ। বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, ‘একজন বাঙালী হিসেবে যা কিছু বাঙালির সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়।’ বঙ্গবন্ধু তার গোটা তারুণ্যকেই উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে। তরুণ প্রজন্মের মন ও মননে যে বিষয়গুলোর আধিক্য এবং আকর্ষণীয় সেসব বিষয় বঙ্গবন্ধুর আজীবন কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত।
বর্তমান সময়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং তথ্যসমৃদ্ধ বিষয়বস্তু যথাযথভাবে উপস্থাপন করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট ও সুপরিকল্পিত পাঠ্যসূচির উপস্থিতি প্রশংসার দাবি রাখে। দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে, তার সকল শিক্ষার্থীগণ যেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করতে পারে সেই লক্ষ্য নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক পাঠদান, আলোচনা, সেমিনার, উৎসব আয়োজনের উদ্যোগকে গুরুত্ব দিতে হবে যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লক্ষণীয়।
তরুণ প্রজন্ম সব সময় তার মননে ও চেতনায় সাহসী, সততা, মানবিকতা, বিজ্ঞানমনস্কতা, আধুনিক, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বে নিজেকে প্রকাশ করতে পছন্দ করে যা বঙ্গবন্ধুর চারিত্রিক ও মানবিক গুণাবলির মধ্যে পরিলক্ষিত। সুতরাং তরুণ প্রজন্ম নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুর মত নিজের মাঝে দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটানো।
উষার দূয়ারে হানি আঘাত, তরুণরাই সূচনা করবে নবপ্রভাত। গণতান্ত্রিক, শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, উন্নত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে রচিত হবে সমৃদ্ধ আগামীর পথ। তারুণ্যদীপ্ত বাংলাদেশ সকল চ্যালেঞ্জ উত্তরণ ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা রূপে বিশ্বসভায় অধিষ্ঠিত হবে এই হোক আজ আমাদের প্রত্যয়। সফল হোক আগামীর পথচলা, শুভ হোক অগ্রযাত্রা।