তরুণ প্রজন্মকে বইমুখী করতে হবে

অভিমত

নুসরাত সুলতানা | মঙ্গলবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ

আমাদের ঐতিহ্যের অন্যতম উজ্জ্বল নিদর্শন হলো অমর একুশে বইমেলা, যা প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখ বাংলা ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গের যে বীরত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে, সেই স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই ফেব্রুয়ারি মাসে আয়োজিত এই বইমেলার নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।

চট্টগ্রাম এম. . আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গনে ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা চট্টগ্রাম ২০২৫। আগামি ২৬ ফেব্রুয়ারি এই মেলা শেষ হতে চলেছে। এই বইমেলায় চট্টগ্রাম ও ঢাকার সমৃদ্ধ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের বইয়ের বিশাল সম্ভার নিয়ে যোগ দিয়েছে। শীতকালীন আবহে শুরু হওয়া বইমেলা প্রথম থেকেই মুখরিত ছিলো কবিসাহিত্যিকসহ প্রিয় লেখকদের সরব উপস্থিতিতে।

ঢাকায় বহু বছর আগে থেকে বইমেলা অনুষ্ঠিত হলেও চট্টগ্রামে প্রথম বইমেলা সূচনা করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালে জিমনেশিয়াম মাঠে বইমেলার উদ্যোগ নিলে তখন থেকেই চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সহযোগিতায় প্রতিবছর বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর সিআরবির শিরীষতলায় বইমেলা অনুষ্ঠিত হলেও এ বছর আবারো আগের মতোই জিমনেশিয়াম মাঠে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বইমেলায় সব বয়সী মানুষের বই পাওয়া যায়। শিশুকিশোরদের উপযোগী বহু বই এসেছে এবারের বইমেলায়।

বইমেলাপ্রাণের মেলা। বইমেলায় লেখক ও পাঠকের সরাসরি কথা বলার সুযোগ থাকেযা পাঠক ও লেখকদের মাঝে চমৎকার সেতু বন্ধন তৈরি করে। তরুণ প্রজন্মকে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করতে বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন রকম ডিভাইস ব্যবহারে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তারা প্রচুর সময়, অর্থ এবং স্বাস্থ্য সবই শেষ করছে ডিভাইস ব্যবহারের পেছনে। এসব থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো তরুণ প্রজন্মকে বইমুখী করা। বই পাঠে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা। বই হলো প্রকৃত বন্ধুযা সব বয়সী মানুষকে আনন্দ দিতে পারে। বই পাঠে মননের উৎকর্ষ সাধন হয়। নিয়মিত বই পাঠে মনে আনন্দের এমন খোরাক জন্মে যা তরুণ প্রজন্মকে ডিভাইসের আসক্তি থেকে মুক্তি দিয়ে সৃজনশীল মেধাবী প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে।

মেলা চলাকালীন প্রতিদিনই মেলাতে বিভিন্ন আলোচনা সভা, কবিতা পাঠের আসর বসে; প্রতি সন্ধ্যায় থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া মেলাতে লেখক আড্ডার ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে লেখকেরা উপস্থিত থাকেন এবং তাঁদের বইয়ের ব্যাপারে পাঠক ও দর্শকদের সাথে মতবিনিময় করেন। এছাড়া মেলার তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রতিনিয়ত নতুন মোড়ক উন্মোচিত বইগুলোর নাম, তদীয় লেখক ও প্রকাশকের নাম ঘোষণা করা হয় ও দৈনিক প্রকাশিত বইয়ের সামগ্রিক তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেল মেলার মিডিয়া স্পন্সর হয়ে মেলার তাৎক্ষণিক খবরাখবর দর্শকশ্রোতাদেরকে অবহিত করে। বইমেলায় যে শুধু বই বেচাকেনা হয় তা নয়। বইমেলা সাহিত্যপ্রেমীদের বার্ষিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। বইমেলা সর্বস্তরের লেখক, পাঠক ও সৃজনশীল নাগরিকদের অংশগ্রহণে সংস্কৃতি ও মানসিক উৎকর্ষের পাশাপাশি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সম্মিলন ঘটায়। তাই আমাদের সকলের উচিত বই কেনা, বই পড়া এবং বই উপহার দেওয়া।

লেখক : প্রাবন্ধিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রিয় কিছু সত্য
পরবর্তী নিবন্ধপবিত্র রমজানের শুভ আগমন এবং প্রস্তুতিতে আমাদের করণীয়