ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করলেও ডিজেলের ব্যবহার খুব একটা কমেনি। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের সময় হাজার হাজার ডিজেলচালিত জেনারেটর ব্যবহারের ফলে ডিজেল ব্যবহারে তেমন প্রভাব পড়েনি। অপরদিকে অনেক মানুষ ডিজেল কিনে মজুদ করছে। বাড়তি ডিজেল কেনার ব্যাপারটিও জ্বালানি তেল সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দেশে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ১৩ হাজার টন ডিজেল ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধুমাত্র ডিজেল খাতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে (বিপিসি) প্রতিদিন লোকসান দিতে হচ্ছে ৮০ কোটি টাকার বেশি। অন্যান্য জ্বালানি তেলের লোকসান মিলে বিপিসিকে প্রতিদিন লোকসান দিতে হচ্ছে ৯০ কোটি টাকার বেশি।
সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ বিশ্ববাজার থেকে রিফাইনড অয়েলের পাশাপাশি ক্রুড অয়েলও আমদানি করে। দেশে বর্তমানে গড়ে ৭০ লাখ টন জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হচ্ছে। গত বছর ব্যবহৃত হয়েছিল ৬৩ লাখ টন। আমদানিকৃত জ্বালানি তেলের বেশিরভাগই ডিজেল। গত বছর প্রায় ৪৬ লাখ টন ডিজেল ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া ৫ লাখ ৫৯ হাজার টন ফার্নেস অয়েল, ৩ লাখ টন অকটেন, ৩ লাখ ৭৮ হাজার টন পেট্রোল ও ১ লাখ টনের বেশি কেরোসিন ব্যবহৃত হয়। দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৭৩ শতাংশই ডিজেল। ডিজেল সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে সরকার প্রতি লিটার ডিজেল ১২৮ টাকা ব্যয়ে আমদানি করে। প্রতি লিটারে ৪৮ টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করা হয় ৮০ টাকায়। দৈনিক ১৩ হাজার ৫শ টন ডিজেল ব্যবহারে বিপিসির সরাসরি লোকসান হয় ৮১ কোটির বেশি টাকা। এই অবস্থায় ডিজেলের ব্যবহার কমাতে সরকার ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়।
কিন্তু বাজারে ডিজেল বিক্রি খুব একটা কমেনি বলে জানিয়েছেন বিপিসির পরিচালক (বিপণন) অনুপম বড়ুয়া। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে জানিয়ে তিনি আজাদীকে বলেন, এই লোকসান কি করে সমন্বয় হবে সেই বিষয়ে সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে। ডিজেলের ব্যবহার খুব একটা কমেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করা হলেও লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ না থাকলে ডিজেলচালিত হাজার হাজার জেনারেটর চলে। এতে করে ডিজেলের ব্যবহার ঠিকই হচ্ছে। একইসাথে জ্বালানি তেল নিয়ে অহেতুক শঙ্কা থাকায় অনেক মানুষ প্রচুর জ্বালানি তেল কিনে মজুদ করছে। এভাবে হাজার হাজার ড্রাম ডিজেল কিনে মজুদ করা হয়েছে, যা ডিজেল ব্যবহারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিপিসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিদিন যেভাবে বিপিসির লোকসানের অংক বড় হচ্ছে তাতে বছর শেষে সংস্থাটির লোকসান ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। লোকসান কমানোর পন্থা বিপিসির হাতে নেই। এটি সরকারি সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সরকারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।