তফাজ্জল হোসেন (১৯১১–১৯৬৯)। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক। মানিক মিয়া নামেই যিনি খ্যাত। তিনি নির্ভীক সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও আধুনিক বাংলা সংবাদপত্রের রূপকার। প্রবাদ প্রতিম এই সাংবাদিক নিজের সমপাদনায় দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার সাংবাদিকতাকে আমূল বদলে দিয়েছিলেন। তিনি ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। নিজ গ্রামের পূর্ব ভাণ্ডারিয়া মডেল প্রাইমারি স্কুলে মানিক মিয়ার শিক্ষা জীবনের শুরু। এ স্কুলে তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তারপর চলে যান পিরোজপুর সরকারি হাই স্কুলে। সেখান থেকেই তিনি কৃতিত্বের সাথে মেট্রিক পাস করেন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে মানিক মিয়া ডিস্টিংশন সহ বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। পিরোজপুর জেলা সিভিল কোর্টে তাঁর চাকরি জীবন শুরু। সেখানে চাকরিকালীন জনৈক মুন্সেফ একদিন তাঁর সাথে খারাপ আচরণ করেন। তিনি এই অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করে চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর তিনি যোগ দেন তদানীন্তন বাংলা সরকারের জনসংযোগ বিভাগে বরিশাল জেলার সংযোগ অফিসার হিসেবে। কিছুদিন পর সে চাকরিও ছেড়ে দিয়ে তিনি কলকাতার প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অফিস সেক্রেটারি হিসেবে যোগ দেন। এবার সরাসরি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে পড়েন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তাঁর ভাবশিষ্য তফাজ্জল হোসেনকে দায়িত্ব দেন কলকাতায় অবস্থিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের দফতর সম্পাদকের। মানিক মিয়ার সাংবাদিক জীবনের সূচনা ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে আবুল মনসুর আহমদের সম্পাদনায় ‘দৈনিক ইত্তেহাদ’ পত্রিকায়। পাকিস্তান সরকার পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করলে তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের দলীয় মুখপত্র সাপ্তাহিক ‘ইত্তেফাক’–এ যোগ দেন। পরবর্তীসময়ে তফাজ্জল হোসেন পত্রিকাটির পূর্ণ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং তাঁরই সম্পাদনায় এটি দৈনিকে রূপান্তরিত হয়। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ শুরু করার পর এটি তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার জীবনে অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়। এটির কারণে বিভিন্ন সময়ে মানিক মিয়াকে কারাবরণ করতে হয়েছিল আবার সরকারের বিরাগবাজন হয়ে পত্রিকাটিও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল একধিকবার। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে যুক্তফ্রন্ট সরকারকে হটিয়ে আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল করে নিলে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ পত্রিকা আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সামরিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা হয়। গণআন্দোলনের মুখে সরকার ইত্তেফাকের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। ফলে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১১ই ফেব্রুয়ারি পত্রিকাটি আবার প্রকাশিত হয়। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে পত্রিকার কাজে গিয়েছিলেন রাওয়ালপিণ্ডি। তিনি ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১লা জুন পাকিস্তানের রাউয়ালপিণ্ডিতে মৃত্যুবরণ করেন।