তদন্ত প্রভাবিত করার অভিযোগ মায়ের

| শনিবার , ২০ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলার তদন্ত কাজ নানাভাবে ‘প্রভাবিত’ করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ায় দিয়াজের মৃত্যুর পাঁচ বছরেও আলোচিত এ মামলার বিচার কাজ শুরু হয়নি। এর মধ্যে তিনবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রায় চার বছর ধরে মামলাটির তদন্ত করছে। দিয়াজের মা জাহেদা তদন্ত বিষয়ে ‘অনাস্থা’ জানিয়ে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে চিঠিও দিয়েছেন। তবে সিআইডি পুলিশের দাবি, প্রভাবিত করার মতো কোনো বিষয় ‘এখানে নেই’। তদন্ত শেষ হতে আরও সময় লাগবে। খবর বিডিনিউজের।
নিজের সন্দেহের কথা প্রকাশ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীর কাছ থেকে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। দিয়াজের হত্যার পর আসামিরা ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চেয়েছিল। এখনো তারা নানাভাবে তদন্ত কাজ প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বলে শুনতে পাই। আইও চেষ্টা করছেন। কিন্তু নানা কারণে পেরে উঠছেন না বলে মনে হয়। ফোন করলে হয়ত আমার সাথে কথা বলেন। কিন্তু তদন্তে অগ্রগতি নেই। তাই তদন্ত বিষয়ে অনাস্থা জানিয়ে সিআইডি প্রধান কার্যালয়ে একটি চিঠি দিয়ে এসেছি।
২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেন। তাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সে সময়ের সভাপতি আলমগীর টিপু, তৎকালীন সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী, তাদের অনুসারী রাশেদুল আলম জিশান, আবু তোরাব পরশ, মনসুর আলম, আবদুল মালেক, মিজানুর রহমান, আরিফুল হক অপু ও মোহাম্মদ আরমানকে আসামি করা হয়। আসামিরা সবাই চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। দিয়াজ নিজেও নাছিরের অনুসারী ছিলেন।
কিন্তু এখন তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে জাহেদা আমিন বলেন, সিআইডির প্রথম আইও অনেক ক্লু পেয়েছিলেন। তারপরই নানাভাবে নতুন আরেকজনকে আইও করা হলো। কিছুদিন পর আবার দ্বিতীয় আইওকেও হঠাৎ বদল করা হল। এরপর সিআইডির চট্টগ্রামের প্রধানও (এসপি) নতুন একজন এলেন। তিনি এবং তৃতীয় আইও আমাকে সাথে নিয়েই ক্যাম্পাসে এসে তদন্ত করলেন। উনাদের জিজ্ঞাসার জবাবে বলেছি, হত্যা মামলার আসামিরাই ঘটনার ১৫দিন আগে আমার বাসায় ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। তখন তাদের আমি দেখেছি। খুনের দিন আমি ছিলাম না। তাই নিজ চোখে দেখিনি। তদন্তকারীদের বলেছি মামলার আসামিদের মাধ্যমে আরও কেউ কেউ হত্যায় সম্পৃক্ত থাকতে পারে। সেদিন পরিচিত কেউ হয়ত খুনিদের সাথে এসেছিল, নয়ত দিয়াজ দরজা খুলত না। এ মামলার আসামিদের মধ্যে জামশেদুল আলম চৌধুরী, আবদুল মালেক ও আবু তোরাব পরশ ক্যাম্পাসে কম-বেশি সক্রিয় হলেও বাকিরা এখন আর ক্যাম্পাসে আসেন না বলে জানান সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
দিয়াজের বোন আইনজীবী জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা বলেন, একই আসামিদের বিরুদ্ধে আমাদের ঘর ভাঙচুরের মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হত্যা মামলায় এখনো তদন্ত শেষ হচ্ছে না। সিআইডি আগের মতোই বলছে, তদন্ত চলমান। কিন্তু যত দেরি হবে বিচার তত বাধাগ্রস্ত হবে। সাক্ষীদের একজন বিদেশে চলে গেছে। কেউ কেউ পাশ করে ক্যাম্পাস ছেড়েছে। আসামিরাও নিজ নিজ এলাকায় সদর্পে বিচরণ করছে। কমপক্ষে তিনজন ক্যাম্পাসেই আছে।
আসামিরা তদন্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে, দিয়াজের মায়ের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, না, প্রভাবিত করার কোনো বিষয় নেই। সময় তো লাগবেই। কারণ তদন্ত চলছে। তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে আইওর সাথে যোগাযোগ করুন।
দিয়াজ হত্যার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আবদুস সালাম মিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ মামলায় আসামিদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন এবং মোহাম্মদ আরমান গ্রেপ্তারের পর জামিনে রয়েছেন। বাকিরা আসামিরা এখনও পলাতক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচুয়েটে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ
পরবর্তী নিবন্ধগাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার