ডেঙ্গুর প্রকোপ কমছেই না

চট্টগ্রামে আগের ৮ শনাক্ত ২১৮ ।। সেপ্টেম্বর এক মাসেই আক্রান্ত ৫ শতাধিক ।। গতকাল এক নারীসহ এ পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৬ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

মধ্য আগস্টের পর থেকে বাড়তে থাকা ডেঙ্গুর প্রকোপ যেন কমছেই না চট্টগ্রামে। বরঞ্চ দিন দিন এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তবে সদ্য শেষ হওয়া সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্তের তথ্য মিলেছে চট্টগ্রামে। চলতি বছরের আগের ৮ মাসে (জানুয়ারি থেকে আগস্ট) মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় মোট ২১৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। কিন্তু কেবল সেপ্টেম্বর এক মাসেই আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫ শতাধিক। হিসেবে সেপ্টেম্বর এক মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আগের ৮ মাসের দ্বিগুনের বেশি। এছাড়া চলতি অক্টোবরের প্রথম ৫ দিনেই আরো শতাধিক আক্রান্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সাতশ ছাড়িয়েছে।
এদিকে, গতকাল বুধবার সকাল ৮টায় নগরীর মেট্রোপলিটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু আক্রান্ত এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ৪২ বছর বয়সী ওই রোগীর নাম রুবি আক্তার। তার গ্রামের বাড়ি সীতাকুণ্ড। ৩ অক্টোবর দুপুরে তাকে মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে রক্তে প্লাটিলেটের পরিমান মারাত্মক পর্যায়ে নেমে আসায় ওই রোগীকে আর বাঁচানো যায়নি। সর্বশেষ গতকাল সকাল ৮টায় ওই নারীর মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন মেট্রোপলিটন হাসপাতালের জিএম মোহাম্মদ সেলিম। এ নিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৮ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেল চট্টগ্রামে। এর মাঝে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় ৪ জনের। এর বাইরে বেসরকারি এভারকেয়ার, পার্কভিউ, মেডিকেল সেন্টার ও মেট্রোপলিটন হাসপাতালে একজন করে মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে চমেক হাসপাতাল বাদ দিয়ে মহানগর ও জেলার সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য হাসপাতালের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে থাকে সিভিল সার্জন কার্যালয়। আর চমেক হাসপাতালের তথ্য সরাসরি পাঠানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় ও চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত (৫ মাসে) মহানগরসহ জেলায় সবমিলিয়ে ১৭ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। জুন মাসে শনাক্ত হয় ১৯ জন। জুলাইয়ে ৬৪ জন। আগস্ট মাসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৮ জনে। আর সেপ্টেম্বর এক মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ শতাধিক। যদিও সিভিল সার্জন কার্যালয় ৪৩৪ জনের তথ্য দিয়েছে। তবে চমেক হাসপাতালের তথ্যসহ এ সংখ্যা ৫’শর বেশি। সর্বশেষ অক্টোবরের ৫ দিনে আরো শতাধিক রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় নিশ্চিত করেছে। বুধবার পর্যন্ত ৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জানিয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ এখনো কমছে না। এখনো প্রতিদিন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু আক্রান্ত এ পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সবকয়টি মৃত্যুই সেপ্টেম্বরে।
সচরাচর মহানগরের বাসিন্দাদের মাঝে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা গেলেও এখন বিভিন্ন উপজেলা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন বলে জানান চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ব্যাপক হারে বেড়েছে জানিয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। কিন্তু এই সময়ে এসে যে হারে ডেঙ্গু বাড়ছে, তা উদ্বেগজনক। আমরা বিষয়টি অবগত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও চিঠি দিয়েছিলাম। এর প্রেক্ষিতে আইইডিসিআর’র একটি টিম চট্টগ্রামে আসে। তারা রোগীদের বাসা-বাড়ি থেকে মশার লার্ভা, নমুনাসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। অবশ্য, এখন অক্টোবর চলে আসায় বৃষ্টি কমে আসবে আশাবাদ ব্যক্ত করে সিভিল সার্জন বলেন, বৃষ্টি কমে গেলে ডেঙ্গুর প্রকোপও কমে আসবে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে- ২০১৯ সালে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় (চমেক হাসপাতালের তথ্যসহ) ২ হাজার ৫৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। মৃত্যু হয় অন্তত ৭ জনের। চমেক হাসপাতালের তথ্য ছাড়া ২০২০ সালে ১৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য জানায় সিভিল সার্জন কার্যালয়। সঠিক ভাবে রিপোর্টিং না হওয়ায় ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রকৃত চিত্র আসেনি বলে জানান সংশ্ল্লিষ্টরা।
পরের বছরের (২০২১ সালের) তথ্যেও এর প্রমান পাওয়া যায়। গত বছর (২০২১ সালে) সবমিলিয়ে ৫৫০ জনেরও বেশি রোগী শনাক্তের তথ্য পাওয়া যায় চট্টগ্রামে। আর আক্রান্তদের মাঝে অন্তত ৮ জনের মৃত্যুর তথ্য জানায় সিভিল সার্জন কার্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাইকারিতে নিম্নমুখী, খুচরায় আগের দর
পরবর্তী নিবন্ধমিনিকেট নামে চাল বেচা যাবে না : মন্ত্রিপরিষদ সচিব