ডেঙ্গুর টিকা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলছে, সেখানে কার্যকর ফলাফল পাওয়া গেলে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেলে বাংলাদেশে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. শাহাদাত হোসেন নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। আপনারা জানেন, একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কিছু দেশে এটি অনুমোদন পেয়েছে। সেই দেশগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে সাধারণত ডব্লিউএইচও যখন অনুমোদন দেয়, তারপর আমরা শুরু করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুর টিকার কার্যকারিতা নিয়ে নানা মহলে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা চলছে। সেই হিসাবে এটা যদি সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশের জন্য কার্যকরী হয়, সেই বিষয়টা মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিবেচনাধীন আছে। ডব্লিউএইচওর (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) সঙ্গে এ বিষয়ে আমাদের যোগাযোগ আছে। খবর বিবিসি বাংলার।
যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর সানোফি এবং লুই পাস্তুর ইনস্টিটিউট মিলে ডেংভাঙিয়া নামের একটি টিকার অনুমোদন দেয়া হয়। ফিলিপিন্স, পুয়ের্তো রিকোসহ কয়েকটি দেশে এই টিকা প্রয়োগ করা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) পরামর্শ দিয়েছে, নয় থেকে ১৬ বছর বয়সীদের মধ্যে যারা এর আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে, শুধুমাত্র তাদের এই টিকা দেয়া যাবে। এর বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে এই টিকার কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়নি। তবে সিঙ্গাপুরে এই টিকাটি ১২ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, এই টিকার সমস্যা হলো, যাদের আগে ডেঙ্গু হয়নি তাদের এটি দেয়া হলে ব্যাপক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তাই পরবর্তীতে ফিলিপিন্স ও মালয়েশিয়ায় এটি নিষিদ্ধ করা হয়।
গত বছরের শেষ দিকে জাপানের তাকিদা কোম্পানি একটি ডেঙ্গুর টিকা আবিষ্কার করেছে, যার নাম কিউডেঙ্গা। চার বছরের পর থেকে সবাইকে এই টিকা দেয়া যেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ডেংভাঙিয়া টিকা অনুমোদন পেয়েছে। ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে অন্য পাঁচটি টিকা এখন পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে জাপানের তাকিদা কোম্পানির কিউডেঙ্গা, ব্রাজিলের ইনস্টিটিউট বুটানটান আর যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথের যৌথ উদ্যোগের টিকা বুটানটান–ডিভি।
তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় বিভিন্ন দেশে অনেক মানুষকে টিকা দিয়ে কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা হয়। সেখানে সফলতা আসলে এবং নিরাপদ বলে প্রমাণিত হলে সেসব টিকার অনুমোদন দেয়া হয়। বর্তমানে ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়াসহ প্রায় ১১টি দেশে এসব টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, কিউডেঙ্গা টিকাটি ডেঙ্গুর চার ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর বলে দেখা গেছে। ইন্দোনেশিয়ায় এটা ব্যাপক ভিত্তিতে দেয়া শুরু হয়েছে। সেখানে এটির দুই ডোজের খরচ পড়ে ৮০ ডলার। তিনি বলেন, আমার পরামর্শ হচ্ছে, টিকার ব্যাপারে ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। যদি দেখা যায় যে এটা ভালো ফল দিচ্ছে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং কম দামে পাওয়া যায়, তাহলে আগামী মৌসুম থেকে আমরা এই টিকা দেয়ার কথা ভাবতে পারি।