দেশে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারণ করায় ডেঙ্গু জ্বর এবং এর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার তথ্য জানতে জনমনে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। অনেকে নানা প্রশ্ন লিখে গুগলে সার্চ করছেন। এর মধ্যে একটি প্রশ্ন হলো, ডেঙ্গু মশা কামড়ালে কি ফুলে যায়?
ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশার নাম এডিস এজিপ্টি। সাধারণ মানুষের কাছে এটা ডেঙ্গু মশা নামে পরিচিত। ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী এডিস মশা কামড়ালে ওই স্থানটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিছুটা ফুলে যায় এবং চুলকায়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে মশা কামড়ানো সত্ত্বেও ফুলে যাওয়া বা চুলকানি কোনটি না–ও হতে পারে।
কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার জানান, এডিস মশা কামড়ালে ক্ষতস্থানটি একটি মোটর দানার সমান বা তার চেয়ে কিছুটা অল্প জায়গা জুড়ে ফুলে যেতে পারে। তাই মশার কামড় থেকে বাঁচতে হাত ও পা ঢেকে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া দিনে–রাতে মশারি ব্যবহার, দরজা–জানালায় মশারোধী নেট ব্যবহার, সেইসাথে মশা নিরোধক ক্রিম, স্প্রে, প্যাচ ব্যান্ড ব্যবহার করা যেতে পারে। মশা তাড়াতে অ্যারোসল, কয়েল, ধুপ, ম্যাট, ব্যাটও ব্যবহার হয়। খবর বিবিসি বাংলার। একসময় বলা হতো এডিস মশা শুধুমাত্র দিনে কামড়ায়। কিন্তু এডিস মশা সম্প্রতি তাদের চরিত্র বদলেছে। এখন দিনে–রাতে সব বেলাতেই কামড়াতে পারে। বিশেষ করে রাতে যদি ঘর আলোকিত থাকে।
অনেকেই জানতে চান ডেঙ্গু মশা দেখতে কেমন? কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশা খালি চোখে দেখেও শনাক্ত করা সম্ভব। মশাটি মাঝারি আকারের হয়ে থাকে এবং এর গায়ে–পায়ে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। তবে এডিস মশা কামড়ালেই যে মানুষের ডেঙ্গু জ্বর হবে, বিষয়টি তেমন নয়। যে এডিস মশাটি ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহন করছে সেটি কামড়ালে ডেঙ্গু হতে পারে। আবার কোনো সুস্থ এডিস মশা যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে রক্ত পান করে তাহলে মশাটির মধ্যে ডেঙ্গুর ভাইরাস সংক্রমিত হবে। এরপর ওই ভাইরাসবাহী মশা সংক্রমিত থাকা অবস্থায় যদি আবার সুস্থ কোনো মানুষের শরীরে কামড়ায় তাহলে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। যেকোনো মশার মতো এডিসও সাধারণত একাধিক ব্যক্তিকে কামড়ায়। তাই ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির শরীর থেকে এডিস মশার মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার পর ওই মশার কামড়ে ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মশা কামড়ালে সেটি রক্তের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে তেমন কিছু করার থাকে না বলে জানিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার। তবে মশা কামড়ানোর পর ভাইরাসটি যদি শুধুমাত্র চামড়ার উপরে লেগে থাকে তাহলে ওই স্থানটি ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে ধুলে ভাইরাস মরে যাবে। তবে একবার রক্তের সাথে ভাইরাস মিশে গেলে কোনো কিছুই কাজ করবে না।
চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত দুই ধরনের হয়–ক্লাসিকাল ও হেমোরেজিক। ক্লাসিকাল ডেঙ্গু সাধারণত পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। সর্বোচ্চ ১০ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে হেমোরেজিক ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেছেন, সাধারণত জ্বর সারার পরপরই অনেকের প্লাটিলেট এবং রক্তচাপ কমতে শুরু করে। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে জ্বরের তিনদিনের মধ্যেও প্লাটিলেট কমতে দেখা গেছে। যদিও প্লাটিলেট একবার কমার পর সেটি ৪৮ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করে। তবে কেউ যদি ডেঙ্গু হেমোরেজিক শক সিন্ড্রোমে চলে যান তাহলে তাহলের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে একেক রোগীর সেরে উঠতে একেক রকম সময় লাগবে। নির্ভর করে রোগীর কোন অঙ্গে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। এক্ষেত্রে মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছরও সময় লাগতে পারে। মস্তিষ্ক আক্রান্ত হলে সময় বেশি লাগবে, কিডনি বা লিভারের সময় অপেক্ষাকৃত কম লাগবে।
ডেঙ্গু হলে রোগীকে স্বাভাবিক সব ধরনের নরম খাবার খেতে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ। ডেঙ্গু কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয় বলে জানান তিনি। এই রোগ শুধুমাত্র মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ফলে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসায় কোনো বাধা নেই, কিংবা তাকে আলাদা রাখার প্রয়োজনও নেই।