ডিপসিক বনাম চ্যাটজিপিটি এবং জেমিনি, চীনা আধিপত্য : বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

এম. এ. মুকিত চৌধুরী | সোমবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৭:০১ পূর্বাহ্ণ

চীনা স্টার্টআপ ডিপসিক সম্প্রতি তাদের নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেল ডিপসিকভি৩ উন্মোচন করেছে, যা প্রযুক্তি জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মাত্র ৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এবং সীমিত হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে এই মডেলটি উন্নত করা হয়ছে, যা OpenAI-এর GPT-4-এর সাথে তুলনীয়। এই সাফল্য NVIDIA-এর মতো প্রতিষ্ঠিত এআই হার্ডওয়্যার নির্মাতাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

ডিপসিক কী?

ডিপসিক একটি চীনা এআই স্টার্টআপ, যা ডিপসিকভি৩ নামে একটি উন্নত ভাষা মডেল তৈরি করেছে। এই মডেলটি মিক্সচার অফ এক্সপার্টস আর্কিটেকচার ব্যবহার করে, যেখানে বিভিন্ন ‘বিশেষজ্ঞ’ সাবমডেল নির্দিষ্ট কাজের জন্য সক্রিয় হয়, ফলে কম শক্তি ও কম্পিউটিং রিসোর্স ব্যবহার করে উচ্চ কার্যকারিতা অর্জন করা যায়। ডিপসিকভি৩এর মোট ৬৭১ বিলিয়ন প্যারামিটার রয়েছে, তবে কার্যকরীভাবে মাত্র ৩৭ বিলিয়ন প্যারামিটার সক্রিয় থাকে, যা মডেলটিকে দক্ষ ও কার্যকর করে তোলে।

NVIDIA-এর শেয়ার পতনের কারণ :

ডিপসিকভি৩এর উন্মোচনের পর, NVIDIA-এর শেয়ারের মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়ছে। এর পেছনে প্রধান কারণ হলো ডিপসিকভি৩এর উন্নয়নে NVIDIA-এর H800 এচট ব্যবহার করা হয়ছে, যা H100-এর তুলনায় কম শক্তিশালী। তবুও, ডিপসিক তাদের সফটওয়্যার অপটিমাইজেশন এবং দক্ষ প্রশিক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে উচ্চ কার্যকারিতা অর্জন করেছে। এটি প্রমাণ করে যে, উচ্চমানের AI মডেল তৈরির জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল হার্ডওয়্যার অপরিহার্য নয়, যা NVIDIA-এর ব্যবসায়িক মডেলের জন্য একটি হুমকি হিসেবে দেখা দিয়ছে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

ডিপসিকভি৩এর সাফল্য এআই শিল্পে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যেখানে সীমিত সম্পদ ব্যবহার করেও উচ্চমানের মডেল তৈরি করা সম্ভব। এটি অন্যান্য কোম্পানিগুলিকে তাদের এআই উন্নয়ন কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে উদ্বুদ্ধ করছে এবং NVIDIA-এর মতো প্রতিষ্ঠিত হার্ডওয়্যার নির্মাতাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করছে। তবে, এটি এআই গবেষণা ও উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে, যা ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে।

ডিপসিকের উত্থান ও NVIDIA-এর শেয়ার পতন

ডিপসিক এবং এর প্রভাব বাংলাদেশে

ডিপসিকের মতো একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেলের সাফল্য বাংলাদেশেও একাধিক দিক থেকে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাত এবং ব্যবসায়িক পরিবেশে এটি নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশে ডিপসিকএর প্রভাব ও সম্ভাবনা

এআইর খরচ কমানো:ডিপসিকভি৩ প্রমাণ করেছে যে সীমিত রিসোর্স এবং কম ব্যয়র হার্ডওয়্যার ব্যবহার করেও উচ্চমানের এআই মডেল তৈরি করা সম্ভব। এটি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি আশার সঞ্চার করতে পারে। বাংলাদেশে এআই এবং মেশিন লার্নিং গবেষণা বেশ ব্যয়বহুল, কারণ NVIDIA-এর H100 বা তার সমমানের GPU ব্যবহারের জন্য উচ্চ খরচ প্রয়াজন। ডিপসিকের এই উদ্ভাবন প্রযুক্তি খাতে খরচ কমিয়ে এআই প্রকল্প বাস্তবায়নকে সহজতর করবে।

এআই শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে সুবিধা: ডিপসিকের সাফল্য বাংলাদেশে এআই শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে পারে। কম খরচে এবং সীমিত রিসোর্সে এআই মডেল তৈরি ও বাস্তবায়ন শেখানোর মাধ্যমে দেশের শিক্ষার্থীদের এআই দক্ষতায় পারদর্শী করে তোলা সম্ভব। এটি দেশের প্রযুক্তি খাতকে আরও শক্তিশালী করবে।

স্টার্টআপ সংস্কৃতির প্রসার:ডিপসিকের মতো উদ্ভাবনী প্রকল্প বাংলাদেশে প্রযুক্তি স্টার্টআপগুলোকে এআই নিয়ে কাজ করতে উৎসাহিত করতে পারে। বিশেষত স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, ফিনটেক এবং শিক্ষাখাতে এআই ব্যবহার করে বাংলাদেশের স্টার্টআপগুলো নতুন পণ্য ও সেবা উন্নয়ন করতে পারবে।

বাংলাদেশের জন্য ডিপসিক কীভাবে সেবা দেবে?

. কৃষি খাতে প্রযুক্তি ব্যবহার: বাংলাদেশের কৃষি খাতে এআই ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করা সম্ভব। ডিপসিকভি৩এর মতো দক্ষ মডেল ফসলের রোগ শনাক্তকরণ, আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং সঠিক সময় ফসল সংগ্রহের মতো কাজগুলোতে সহায়ক হতে পারে।

. স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন: বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে এআইএর ব্যবহার এখনো সীমিত। ডিপসিকের প্রযুক্তি কম খরচে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পরামর্শ, এবং স্বাস্থ্য তথ্য বিশ্লেষণের মতো ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে। এটি দূরবর্তী অঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ উপকারী হবে।

. শিক্ষা খাতে রূপান্তর:বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে এআইএর ভূমিকা দিন দিন বাড়ছে। ডিপসিকের মতো মডেল ব্যবহার করে ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষা পরিকল্পনা তৈরি করা, শিক্ষার্থীদের দুর্বল দিক শনাক্ত করা এবং তাদের জন্য উপযুক্ত সমাধান প্রদান করা সম্ভব।

. ডিজিটাল বিপণনে নতুন দিগন্ত: বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ও ব্যবসাগুলো ডিপসিকভি৩এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্রেতাদের আচরণ বিশ্লেষণ এবং ব্যক্তিগতকৃত মার্কেটিং কৌশল বাস্তবায়ন করতে পারে। এটি বিশেষত তরুণ প্রজন্মের সাথে সংযোগ স্থাপনে কার্যকর হতে পারে।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতা

. প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব: বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে এখনো দক্ষ এআই ডেভেলপার এবং গবেষকরা নেই। এটি ডিপসিকএর মতো মডেল ব্যবহার এবং বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।

. রিসোর্স ও অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা: যদিও ডিপসিক কম রিসোর্সে কার্যকর, তবে বাংলাদেশের বর্তমান প্রযুক্তিগত অবকাঠামো এবং গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নের অভাব উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

. নৈতিক ও গোপনীয়তা সংক্রান্ত সমস্যা: এআই ব্যবহারে ব্যক্তিগত ডেটার গোপনীয়তা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিপসিকের মতো মডেল ব্যবহারে সঠিক নিয়মকানুন এবং নৈতিকতার বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।

ডিপসিকভি৩ বনাম চ্যাটজিপিটি, জেমিনি ও অন্যান্য মডেল

. প্রযুক্তিগত দক্ষতা : প্যারামিটারের সংখ্যা এবং স্থাপত্য:

ডিপসিকভি৩ মিক্সচার অফ এক্সপার্টস আর্কিটেকচারের ভিত্তিতে তৈরি, যেখানে ৬৭১ বিলিয়ন প্যারামিটার রয়েছে, তবে এর কার্যকর প্যারামিটার সংখ্যা মাত্র ৩৭ বিলিয়ন। এটি কম রিসোর্সে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। চ্যাটজিপিটি এবং জেমিনি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং বিশাল প্যারামিটার সংখ্যা ব্যবহার করে। তবে এগুলো চালাতে প্রচুর কম্পিউটিং শক্তি এবং উচ্চ ব্যয় প্রয়োজন।

ডিপসিকভি৩ রিসোর্স দক্ষতার ক্ষেত্রে এগিয় থাকলেও চ্যাটজিপিটি এবং জেমিনি এর মতো মডেল অনেক বেশি প্রশিক্ষণ ডেটা এবং গভীরতর প্রসেসিং ক্ষমতা ধারণ করে।

. কর্মক্ষমতা ও অ্যাপ্লিকেশন

ডিপসিকভি৩ গাণিতিক সমস্যার সমাধান, ভাষার মডেলিং, এবং নির্দিষ্ট কাজের ক্ষেত্রে দুর্দান্ত ফলাফল প্রদর্শন করেছে। এটি সীমিত হার্ডওয়্যারেও চালানো সম্ভব।

চ্যাটজিপিটি এবং জেমিনি: এই মডেলগুলো বৃহৎ পরিসরে বিভিন্ন কাজ সম্পাদনে পারদর্শী। তারা মাল্টিমোডাল ক্ষমতা (ছবি, ভিডিও, টেক্সট) সরবরাহ করে এবং আরও উন্নত গাণিতিক ও সৃজনশীল দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারে।

ডিপসিকভি৩ কিছু নির্দিষ্ট কাজের ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে, তবে সাধারণত এটি এখনও চ্যাটজিপিটি এবং জেমিনি এর মতো মডেলের চেয়ে তুলনামূলক কম সক্ষম।

. খরচ এবং অ্যাক্সেসিবিলিটি

ডিপসিকভি৩: সাশ্রয়ী এবং কমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের প্রয়োজন নেই। এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল মডেল।

চ্যাটজিপিটি এবং জেমিনি: উচ্চমানের হার্ডওয়্যার এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রয়োজন। এদের ব্যবহারের খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।

. বাজার এবং প্রভাব

ডিপসিকভি৩এর সবচেয় বড় প্রতিযোগিতা NVIDIA-এর মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে, কারণ এটি কম GPU ব্যবহার করে উন্নত মডেল তৈরি করতে সক্ষম।

ChatGPT এবং Gemini-এর বাজার প্রাধান্য রয়েছে উন্নততর কন্টেন্ট জেনারেশন, ইন্টিগ্রেশন এবং ব্র্যান্ড রিকগনিশনের জন্য।

ডিপসিকভি৩ বাংলাদেশের জন্য কতটা প্রাসঙ্গিক?

ডিপসিকভি৩ সরাসরি চ্যাটজিপিটি এবং জেমিনি এর প্রতিযোগী না হলেও এটি বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এআইভিত্তিক উন্নয়নের জন্য একটি বড় সুযোগ হতে পারে। কারণ:

সাশ্রয়ী প্রযুক্তি: বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান ও গবেষণাগুলো কম খরচে ডিপসিকভি৩ ব্যবহার করে এআই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে।

স্থানীয় ভাষার সমর্থন: ডিপসিকভি৩ যদি বাংলা ভাষার সমর্থন দিতে পারে, তবে এটি ChatGPT বা এবসরহরএর চেয়ে বাংলাদেশের বাজারে আরও কার্যকরী হতে পারে।

স্থানীয় সমস্যার সমাধান: এআই মডেলের স্থাপত্য যদি স্থানীয় সমস্যা সমাধানের জন্য উপযোগী করা যায়, তাহলে ডিপসিকভি৩ বাংলাদেশের বাজারে বিশেষ সুবিধা পাবে।

ডিপসিক কি ভবিষ্যতে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে?

ডিপসিকভি৩এর বর্তমান অবস্থান এবং সাশ্রয়ী প্রযুক্তির কারণে এটি ChatGPT এবং Gimini-এর মতো বৃহৎ মডেলগুলোর সাথে সরাসরি প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম নয়। তবে এর মডেলের রিসোর্স দক্ষতা এবং সামর্থ্য ভবিষ্যতে এআই এর প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করতে পারে।

ডিপসিকভি৩ যদি আরও উন্নত প্রশিক্ষণ ডেটা এবং মাল্টিমোডাল সক্ষমতা যোগ করতে পারে, তবে এটি ভবিষ্যতে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে।

ডিপসিকভি৩এর উন্মোচন এবং এর সাফল্য প্রযুক্তিগতভাবে চীনের এআই সক্ষমতাকে শক্তিশালীভাবে তুলে ধরছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এআই শিল্পে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। তবে, এটি সরাসরি ‘চীনা আধিপত্য’ ঘোষণা করছে, এমনটি বলা ঠিক হবে না। বরং, এটি একটি প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি করেছে, যা চীনের এআই গবেষণা ও উদ্ভাবনে অগ্রগতির একটি ইঙ্গিত দেয়।

নিচে বিষয়টি বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:

. চীনের প্রযুক্তিগত ক্ষমতা প্রদর্শন

ডিপসিকভি৩ প্রমাণ করেছে যে, চীন সীমিত সম্পদ ব্যবহার করেও উন্নতমানের এআই মডেল তৈরি করতে সক্ষম। এটি যুক্তরাষ্ট্রের OpenAI, Google, এবং Anthropic-এর মতো এআই সংস্থাগুলোর জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয় উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এআই মডেল: চ্যাটজিপিটি এবং জেমিনি এর মতো মডেল তৈরি করতে উচ্চমানের হার্ডওয়্যার, প্রশিক্ষণ ডেটা, এবং বিশাল পরিমাণ অর্থায়ন ব্যবহার করা হয়।

চীনের মডেল: ডিপসিকভি৩ এই প্রমাণ দিয়ছে যে, কম খরচে এবং সীমিত GPU ব্যবহার করেও কার্যকর মডেল তৈরি করা সম্ভব। এটি একটি কার্যকরী এবং সাশ্রয়ী প্রযুক্তি হওয়ার কারণে চীনের সক্ষমতাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে।

. মার্কেট এবং প্রভাব

চীনা কোম্পানির এআই সাফল্য ঘঠওউওঅএর শেয়ারের পতন ঘটিয়েছে, যা মার্কিন এআই শিল্পের ওপর একটি অর্থনৈতিক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। এটি প্রমাণ করে যে, চীনের এআই উদ্যোগ বিশ্ব বাজারে প্রভাব ফেলতে সক্ষম।

চীনের অবস্থান: চীন দীর্ঘদিন ধরেই এআই এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করছে। ডিপসিকভি৩এর সাফল্য সেই প্রচেষ্টার একটি ফল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া: ডিপসিকের মতো সাশ্রয়ী প্রযুক্তি মার্কিন কোম্পানিগুলোকে তাদের মডেল তৈরির কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করছে।

. চীনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার কৌশল

চীন এআই এবং প্রযুক্তিতে নিজের অবস্থান সুসংহত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়ছে:

.সাশ্রয়ী প্রযুক্তি তৈরি: ডিপসিকভি৩ চীনের গবেষণা ও উন্নয়নের মডেলকে উন্নতমানের এবং সাশ্রয়ী হিসেবে প্রমাণ করেছে।

.বিশ্বব্যাপী বাজার লক্ষ্য: চীন ক্রমশ এআই মডেল রপ্তানির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে।

.যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা কমানো: ডিপসিকভি৩ যেমন NVIDIA-এর ওপর সীমিত নির্ভরতা দেখিয়ছে, তেমনি এটি চীনের নিজস্ব এআই হার্ডওয়্যার এবং মডেলের উন্নয়নের দিকে ইঙ্গিত করে।

. এটি কি ‘চীনা আধিপত্য’ দাবি করছে?

সরাসরি আধিপত্যের দাবি নয়: ডিপসিকভি৩এর সাফল্য মূলত চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং গবেষণার দক্ষতার প্রমাণ। এটি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করার ঘোষণা দেয়নি।

প্রতিযোগিতার ইঙ্গিত: ডিপসিকভি৩এর সাফল্য প্রযুক্তি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের একক নেতৃত্বের ওপর একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদাহরণ: এটি প্রমাণ করে যে, উন্নত দেশগুলোর মতো উচ্চ ব্যয়র প্রযুক্তি ছাড়াই এআই উন্নয়নে সফল হওয়া সম্ভব।

ডিপসিকভি৩ প্রমাণ করেছে যে সীমিত রিসোর্স এবং খরচে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সম্ভব। এটি বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতকে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে। যদিও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে ডিপসিকএর মতো এআই প্রযুক্তি দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে।

ডিপসিকভি৩এর উত্থান চীনের এআই সক্ষমতাকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে এবং এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত নেতৃত্বে একটি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। তবে, এটি সরাসরি ‘চীনা আধিপত্য’ দাবি করছে না। বরং এটি বৈশ্বিক এআই প্রতিযোগিতায় চীনের শক্তিশালী অবস্থানকে তুলে ধরছে।

লেখক: সিনিয়র ম্যানেজার, স্ট্র্যাটেজিক সেলস,

এলিট পেইন্ট এন্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রীজ লিঃ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসূফী সাধক হযরত শাহজাহান শাহ (রহ.)
পরবর্তী নিবন্ধএকে সিদ্দিকী বালিকা বিদ্যালয়ে তারুণ্যের উৎসব