ডায়ালাইসিস চিকিৎসা সাশ্রয়ী করতে হবে

| বুধবার , ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ at ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ

নগরীর মেহেদিবাগে সোনার বাংলা ফাউন্ডেশনের কিডনি ডায়ালাইসিসের সেবা ও সফলতার এক বছর পূর্তিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, আমাদের দেশে কিডনি ডায়ালাইসিস অনেক ব্যয়বহুল চিকিৎসা। এর জন্য সরকারি পর্যায়ে ভর্তুকি নেই। ফলে খরচের শতভাগ রোগীদের বহন করতে হয়। এম এ মালেক বলেন, বাংলাদেশে যতটা ডায়ালাইসিস সেন্টার রয়েছে, সব সেন্টারে কিছু জিনিস যদি রোগীরা ফ্রি পায়, তাহলে আরো বেশি মানুষকে সেবার আওতায় আনা যাবে। কিছু গরিব রোগীকে বিনামূল্যে সেবা দিতে হবে। প্রতিটি সেন্টারে ১০২০ শতাংশ ডায়ালাইসিস বেড ফ্রি রাখতে হবে এ ধরনের রোগীদের জন্য। তাহলে ডায়ালাইসিসের ব্যয়ভার কিছুটা হলেও কমানো যাবে এবং বেশি রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা যাবে। সোনার বাংলা ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, যতটা শুনেছি এই প্রতিষ্ঠান কম খরচে ডায়ালাইসিসের সুযোগ করে দিচ্ছে সকল রোগীকে।

আসলে আমাদের দেশে সাধারণত যত কিডনি ফেইলিওর আছে তার মাত্র ২০ শতাংশ রোগী ডায়ালাইসিস পায় বা নিতে পারে। তার মধ্যে ৫০৬০ শতাংশ ছয় মাসের পরে আর কন্টিনিউ করতে পারে না এবং এই রোগীদের মধ্যে ৫ শতাংশ বা তারও কম কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট নিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, উন্নত দেশগুলোতে দেখা যায় রোগীদের ব্যক্তিগতভাবে অর্থ পরিশোধ করতে হয় না। ইন্স্যুরেন্স কাভার করে, না করলে কিছুটা সরকারি ভর্তুকি পায়, কিছু ভাতা পায়, এগুলোতে হয়ে যায়। আমাদের দেশে সেসব নেই। যাদের সামর্থ্য নেই, তাদের ভিটামাটি বিক্রি করতে হয়, কারো সাহায্য নিতে হয়। এভাবে ছয় মাস থেকে এক বছর পরে ৫০৬০ শতাংশ রোগী আর ডায়ালাইসিস চালিয়ে যেতে পারে না। এসব ক্ষেত্রে আমরা যদি কিছুটা সরকারি সহায়তা না পাই তাহলে কঠিন হয়। এর পাশাপাশি ডায়ালাইজার, যেগুলো ইমপোর্ট করতে হয় সেগুলোর ওপর ট্যাক্স ভ্যাট যদি কমানো যায় তাহলে রোগীদের ব্যয় অনেক কমে আসবে। সেসব ক্ষেত্রে তারা বেশিদিন ডায়ালাইসিস চালিয়ে যেতে পারবে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, যে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন রয়েছে, তাদেরকে একটি সেফটি নেট প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার, যেন তাদের চিকিৎসা ব্যয় কিছুটা সাশ্রয়ী হয়। রোগী ও তার পরিবারকে আর্থিক ধাক্কা থেকে সুরক্ষা দিতে সরকারের প্রতি অতিরিক্ত তহবিল বরাদ্দেরও আহ্বান জানান তাঁরা। এছাড়া, খরচ কমাতে ডায়ালাইসিস চিকিৎসা বীমার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে বলে মত তাঁদের।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় ০.৮ মিলিয়ন মানুষের ডায়ালাইসিস প্রয়োজন, কিন্তু আর্থিক ও লজিস্টিক সহায়তার অভাবে মাত্র ৩০,০০০ মানুষ এই চিকিৎসা নিতে পারছেন। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ডায়ালাইসিস ফি (৩৫.৩ শতাংশ) এবং ওষুধের খরচ (২৩ শতাংশ) চিকিৎসা ব্যয় বাড়াতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেযা মোট ব্যয়ের ৭৮.৭৯ শতাংশ।

চিকিৎসকরা বলেন, যেসব রোগীর কিডনি কার্যকারিতা ১০১৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, তাদের জন্য ডায়ালাইসিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে রোগীর শরীরে রক্ত থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত তরল অপসারণ করা হয়, এটি ডায়ালাইসিস রোগীর জন্য জীবনরক্ষাকারী এক চিকিৎসা।

গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য রোগীদের মাসিক খরচ ৬,৬৯০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ২,১০,০০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে অর্থাৎ, ডায়ালাইসিসের গড় মাসিক খরচ ৪৬,৪২৬ টাকা। খরচের এই চাপে অনেক পরিবারই হয়ে যায় দিশেহারা। এরমধ্যে অন্তত ৯২ শতাংশ পরিবার খরচ চালাতে হিমশিম খায়। তাই সবার জন্য ডায়ালাইসিস চিকিৎসা সাশ্রয়ী করতে হবে।

ডায়ালাইসিস চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ ডায়ালাইসিসে ভর্তুকি দেয়। ডায়ালাইসিস নিতে নিতে অনেক পরিবার আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যায়। আমাদের অনেক হাসপাতালে সবচেয়ে কম খরচে ডায়ালাইসিস দেওয়া হয়, তারপরও এমন অনেক রোগী আছেন, যাদের সপ্তাহে তিনদিন ডায়ালাইসিস করার প্রয়োজন হলেও একদিনও করতে পারেন না। ডায়ালাইসিসকে একটি বিশেষ সার্ভিস হিসেবে দেখে এর দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। এখন দেশে ডায়ালাইসিসের যে খরচ আছে, তা কমিয়ে আনতে রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে ডায়ালাইসিসের টিউব, ওষুধের দাম কমাতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে