ডাস্টবিনে কেন ঠাঁই

অজ্ঞাত শিশুর লাশের ৯৯ ভাগই নবজাতক জড়িতদের চিহ্নিত করা যায় না

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৬ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

মাতৃগর্ভে পরিপূর্ণ হওয়ার পর পৃথিবীর আলো-বাতাসে যাকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নেওয়ার কথা, সেই নবজাতকের ঠঁাঁই হয় ডাস্টবিন কিংবা রাস্তার পাশে। জন্মই যদি হয় তার আজন্ম পাপ, তাহলে এর দায় কে নেবে? বাবা-মা নাকি নিষ্ঠুর এ পৃথিবী? প্রশ্ন অনেক। উত্তর নেই কারো কাছে। উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিনিয়ত পাওয়া যাচ্ছে নবজাতকের লাশ। ডাস্টবিন, রাস্তা কিংবা ঝোপঝাড়ে যেসব অজ্ঞাত শিশুর লাশ পাওয়া যাচ্ছে তাদের ৯৯ ভাগই নবজাতক। জীবিত কিংবা মৃত অবস্থায় নবজাতককে উদ্ধার করা হলেও ঘটনায় জড়িতরা বরাবরই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
পুলিশ বলছে, এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তথ্য প্রমাণের ঘাটতি থাকে। তাছাড়া বাদী-বিবাদী না থাকায় আগ্রহ কম থাকে। তাই জড়িতদের অনেক সময় চিহ্নিত করাও সম্ভব হয় না। সমাজবিজ্ঞানীরা এ অবস্থাকে সমাজের চরম নৈতিক অবক্ষয় হিসেবে মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, নারী-পুরুষদের অবৈধ মেলামেশার ফলে যে সন্তান জন্ম নিচ্ছে তা সমাজ এবং তাদের পরিবার মেনে নেয় না। ফলে জন্মের পরপরই এসব নবজাতকদের ঠাঁই হচ্ছে ডাস্টবিনে।
গত বছর ২৮ নভেম্বর নগরীর বন্দর থানাধীন নিমতলা এলাকায় খালপাড়ে একটি কার্টনে কাপড় মোড়ানো অবস্থায় যমজ নবজাতকের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ৩০ মার্চ সদরঘাট থানা এলাকার বরফ কারখানার একটি ডাস্টবিন থেকে একটি নবজাতককে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল। সদরঘাট থানা পুলিশ খবর পেয়ে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তার অবস্থা স্থিতিশীল হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চাইল্ড কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ১৯ জানুয়ারি সূর্য ওঠার আগে এক নবজাতককে ফেলে দেওয়া হয়েছিল বায়েজিদ বোস্তামী থানার পশ্চিম শহীদ নগর এলাকার একটি ময়লার স্তূপে। স্থানীয়রা কান্নার আওয়াজ পেয়ে খবর দেয় পুলিশকে। পুলিশ এসে নবজাতকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় হাসপাতালে। চিকিৎসা দেওয়ার পর নবজাতকটিকে তুলে দেওয়া হয় সমাজসেবার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত রৌফাবাদ ছোটমণি নিবাসে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন আজাদীকে বলেন, বয়সের সাথে সাথে শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের যেমন পরিবর্তন ঘটছে, তেমনি মন মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটছে। মানুষ অনেক কিছু পেতে চায়। সেই প্রাপ্তির যদি সংযোগ না ঘটে তাহলে মানুষ অন্য পন্থা অবলম্বন করে। যার কারণে মানুষ পরকীয়া করে, ধর্ষণ করে। এ অপসংস্কৃতিগুলো তাদের অতিমাত্রায় উৎসাহিত করছে। পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধই পারে এ অবক্ষয় থেকে সমাজকে রক্ষা করতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় বাবার যাবজ্জীবন
পরবর্তী নিবন্ধঅর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনে দেশি বিদেশি বিনিয়োগ