খুব দুরন্ত এক শৈশব কেটেছে আমার। পড়াশোনার প্রতি তেমন একটা মনোযোগ ছিলনা। প্রাইমারি ধাপ পাশ করতেই হিমশিম খেতে হয়েছিল আমার। মাধ্যমিকে উঠেও তেমনকোনো পরিবর্তন এলো না। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত রেজাল্ট খুব খারাপ ছিল। চতুর্থ ঘন্টার পর স্কুল পলায়নটা যেন আমার একটা স্বভাবে পরিণত হয়েছিল। ফলে প্রধানশিক্ষকের শাস্তি ও জরিমানার সম্মুখীন হতে হতো নিয়মিত।
নবম শ্রেণীতে উঠে সম্পূর্ণ বিপরীত মোড় ধারণ করে আমার জীবন। হঠাৎ করেই পড়াশোনার প্রতি এক তীব্র আকর্ষণ অনুভব করতে থাকি। জয়নাল স্যার, ওসমান স্যারের কড়া শাসন এবং সময়োপযোগী নির্দেশনায় ধীরে ধীরে ভালো ছাত্রে পরিণত হই এবং দশম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করি।
পরবর্তীতে এস.এস.সি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ অর্জন করি এবং মহসিন কলেজে ভর্তি হই। কলেজে ভর্তি হয়ে পড়ালেখার মজাটা আরো ভালো করে উপভোগ করতে থাকি। ফলশ্রুতিতে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ ৫ অর্জন করি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ৪টি ইউনিটে অংশগ্রহণ করে ৪টিতেই মেধাতালিকায় স্থান করে নিই এবং আমার প্রাণের আইন বিভাগে ভর্তি হই।
আইন নিয়ে পড়াশোনা করার স্বপ্ন কখনোই ছিলনা আমার। কোনো এক অজানা কারণে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ভর্তির সুযোগ পেয়েও আইন অনুষদে ভর্তি হই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে চেষ্টা করেছি নিয়মিত পড়াশোনা করে একাডেমিক রেজাল্ট ভালো রাখতে। ফলে প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় হয়ে এল এল.বি (অনার্স) শেষ করি। এলএল.বি অনার্স শেষ করার পর জুডিসিয়ারির জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি। অনার্সে পড়ার সময় চেষ্টা করতাম আইনের বিষয়গুলো বুঝে বুঝে পড়তে। ফলশ্রুতিতে জুডিসিয়ারির প্রস্তুতিতে আইনের বিষয়গুলো নিয়ে তেমন ঝামেলায় পড়তে হয়নি। আমি নিয়মিত টিউশন করতাম। ফলে সাধারণ বিষয় যেমন : বাংলা,ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এসব বিষয়ে মোটামুটি ভালো একটা ধারণা ছিল। সর্বোপরি, আমার মা-বাবার দোয়া, শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং মহান আল্লাহর রহমতে আমি প্রিলিমিনারি রিটেন এবং ভাইবা এই তিনটি ধাপ অতিক্রম করি এবং মেধাতালিকায় ৫৬তম হয়ে সহকারী জজ/ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত হই। ভবিষ্যতে এখন একটাই ইচ্ছা, যেকোনো অবস্থায় যাতে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে পারি।