ডাকের গাড়িতে বালি পরিবহন : সেই ড্রাইভার আশরাফ স্ট্যান্ড রিলিজ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২৩ at ৮:৩৮ অপরাহ্ণ

দৈনিক আজাদীকে সংবাদ প্রকাশের পর চট্টগ্রামে ডাক বিভাগের গাড়িতে করে বালি পরিবহনের মতো গুরুতর অভিযোগে চালক আশরাফুল ইসলামকে কুমিল্লায় বদলি করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার পোস্টমাস্টার জেনারেল পূর্বাঞ্চলের নির্দেশে তাপস চাকমা তার বদলি আদেশে স্বাক্ষর করেন। এদিকে ডাক বিভাগ চট্টগ্রাম ডিভিশনের আওতাধীন ড্রাইভার আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ডাকগাড়ির জ্বালানি তেল চুরি, জোরপূর্বক টিঅ্যান্ডটি কর্মকর্তার বাসা দখল, সাধারণ কর্মচারিদের হুমকি-ধমকি প্রদান এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিরীহ ডাক-কর্মচারিদের চরিত্র হনন করাসহ নানা অভিযোগের তথ্য বের হয়ে আসছে।

এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক জিডি এবং আদালতে মামলাও রয়েছে। একটি মামলায় ড্রাইভার আশরাফের বিরুদ্ধে বিচার চলছে।

বালি পরিবহনের ঘটনার খোঁজ-খবর নিতে গিয়েই এই প্রতিবেদকের ড্রাইভার আশরাফের এসব অপকর্ম তথা কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসছে।

জানা গছে, চট্টগ্রাম ডাক বিভাগের একটি কাভার্ডভ্যানে করে ডাক পরিবহন করা হচ্ছিল গত শুক্রবার। সরকারি বন্ধের দিন গাড়ি গ্যারেজে থাকার কথা থাকলেও ডাক পরিবহনের বিশেষায়িত এই গাড়িতে করে বালি পরিবহন করা হচ্ছিল।

ডাক বিভাগের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কেউ কেউ এ ঘটনা দেখে বিস্মিত হন। তারা বিষয়টি ডাক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে টনক নড়ে। সোমবার এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

একইদিন ডাক কর্তৃপক্ষ অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ড্রাইভার আশরাফকে চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লায় বদলির তথা স্ট্যান্ড রিলিজের আদেশ দেন।

সোমবার ড্রাইভার আশরাফুল ইসলামকে যে বদলির আদেশ জারি করা হয়েছে সেই আদেশে (স্মারক ও নথি নম্বর কর্ম-এ/এ ৫৯/পিও লুজ-১ তারিখ: ২৩/১০/২৩) বলা হয়, ‘জন ও বিভাগীয় স্বার্থে পোস্টমাস্টার জেনারেল পূর্বাঞ্চলের অনুমোদনক্রমে অবিলম্ভে কার্যকরের জন্য পার্শ্বের বর্ণিত পদ ও কর্মস্থলে বদলি আদেশ জারি করা হল।’

আশরাফুল ইসলামকে কুমিল্লা বিভাগে শূন্যপদে বদলি করে চট্টগ্রামে তার স্থলে নেজামউদ্দিন নামে দৈনিকভিত্তিক এক কর্মচারিকে পদায়ন করা হয়েছে।

তবে সাধারণ কর্মচারিরা বলছেন, সরকারি গাড়িতে করে বালি পরিবহনের এ ঘটনা অত্যন্ত গুরুতর। অথচ তাকে গুরুতর অপরাধে বদলির আদেশ দিয়ে ‘লঘুদন্ড’ দিয়ে দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ উঠেছে, যে ডাক গাড়িতে করে গাড়িটিতে করে বালি পরিবহনের ঘটনা ধরা পড়েছে ওই গাড়িটির বিপরীতে বরাদ্দ তেলের বড় অংশ চুরি করে সেই টাকা আত্মসাত করেছেন ড্রাইভার আশরাফ।

চট্টগ্রাম-কাপ্তাই লাইনে ডাক পরিবহনে নিয়োজিত এই ডাক গাড়িটি সরকারি ছুটি ব্যতিত প্রতিদিন ডাক পরিবহন করার কথা থাকলেও মাসে গড়ে ৫-৬ দিন ডাক নিয়ে গেছে। অথচ প্রতিমাসেই এই গাড়ির বিপরীতে ১৮ লিটার তেল উত্তোলন করা হয়েছে।

অনুসন্ধান ও জিপিওর গেইটে রক্ষিত এন্ট্রি খাতায় দুই মাসের তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গছে, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই লাইনে ডাক পরিবহনে নিয়োজিত ডাকবিভাগের নিজস্ব গাড়িটি আগস্টে চারদিন জিপিও কম্পাউন্ড থেকে বের হয়েছে। এর মধ্যে সকাল ৯ আগস্ট ৮.৩৫ মিনিটে বের হয়ে গাড়িটি প্রবেশ করে বিকাল ৪.২৯ মিনিটে।

২০ আগস্ট ৯.৩০ এ বের হয়ে প্রবেশ করেছে বিকাল ৪ টায়। ২৭ আগস্ট ৯ টা ২৫ মিনিটে বের হয়ে বিকাল ৫ টায় প্রবেশ করে। একইভাবে সেপ্টেম্বর মাসে এই গাড়িটি ৫ বার জিপিও কম্পাউন্ড থেকে ডাক নিয়ে বের হয়। এর মধ্যে ৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৯ টা ১৫ মিনিটে বের হয়ে বিকাল ৩ টা ৫৭ মিনিটে ফিরে আসে। ১০ সেপ্টেম্বর সকাল ৯ টায় বের হয়ে বিকাল ৪ টা ৮ মিনিটে, ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৯ টায় বের হয়ে বিকাল ৩.৪৭ মিনিটে, ২১ সেপ্টেম্বর কাল ৮ টা ৫৫ মিনিটে বের হয়ে বিকাল ৪ টা ৩ মিনিটে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৯ টা ৫২ মিনিটে বের হয়ে বিকাল ৪ টা ১৩ মিনিটে প্রবেশ করে। অর্থাৎ গাড়িটি দুই মাসে মাত্র ৯ দিন বের হয়েছে। কিন্তু ৯ দিন বের হলেও সরকারি ছুটির দিন ব্যতিত প্রতিদিন এই গাড়িটির বিপরীতে ১৮ লিটার করে জ্বালানি তেল ক্রয় বা উত্তোলনের হিসাব দেখানো হয়েছে।

নুরুল করিম নামে এক মেইল ক্যারিয়ারের নিজস্ব টেক্সি দিয়ে দিয়ে কম টাকায় ডাক পরিবহন করে তেল বিক্রির বাকি টাকা ড্রাইভার আশরাফ তুলে নিতেন।

জানা গেছে, ড্রাইভার হয়েও জিপিও এবং আগ্রাবাদ পিটিঅ্যান্ডটি কলোনিতে দাপট দেখাতেন আশরাফ। আগ্রাবাদ পিটিঅ্যান্ডটি কলোনীতে একটি টিনশেডের বাসা জোরপূর্বক দখলের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিটিসিএল বৈদ্যুতিক ও ইমারত বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী সমিত চাকমা ডবলুমরিং থানায় জিডি (নম্বর: ১৪৩৭/২৬-০৪-১৮)।

এ ছাড়া মাহমুদ হোসেন খন্দকার নামে এক নৌ প্রকৌশলী তার পিতাকে হত্যার হুমকি-প্রদানের অভিযোগে ড্রাইভার আশ্রাফের বিরুদ্ধে ১৩ অক্টোবর ২০১৮ সালে পুলিশ কমিশনারের লিখিত অভিযোগ দেন। এ ছাড়া সাইফুল ইসলাম চৌধুরী নামে এক ডাক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চরিত্রহনন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ও বানোয়াট স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আশ্রাফের বিচার চলছে। চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালে এই মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআসছে ঘূর্ণিঝড় হামুন, চার নম্বর সংকেত (লাইভ অবস্থান ‍দেখুন)
পরবর্তী নিবন্ধকনটেইনারবাহী ট্রেনের চালক-সহকারী দায়ী?