দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে মন্দা চলছে। ক্রমাগত কমছে পণ্য আমদানি এবং রপ্তানি। বৈশ্বিক মন্দার ধকল সামলাতে গিয়ে পুরো বিশ্বে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব বিরাজ করছে। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশেও। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের শুরু থেকেই এই প্রভাব শুরু হয়। ডলার সংকটে আমদানি কমার পাশাপাশি রপ্তানিও কমছে। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে গত বছর ৩১ লাখ টিইইউএস এর মত কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়। এর আগের বছর কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ ১৪ হাজার টিইইউএস। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সংকটের কারণে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে কন্টেনার হ্যান্ডলিং ১ লাখেরও বেশি কমে গেলেও চট্টগ্রাম বন্দর থ্রি মিলিয়ন’স ক্লাবের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে এসে পরিস্থিতি অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে।
ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সংকটে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং কমে গেছে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৭৬৭ টিইইউএস। একই সময়ে আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৫৩ হাজার ৪৬৪ টিইইউএস। এর আগের মাসে রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৫৭ হাজার ৭৬৯ টিইইউএস কন্টেনার। এক মাসের ব্যবধানে রপ্তানি কমেছে ৪ হাজার ৩০৫ টিইইউএস কন্টেনার পণ্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, এক মাসের ব্যবধানে কয়েক হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার রপ্তানি কম হলো। একইভাবে আমদানি কমেছে ২ হাজার ৭৩৮ টিইইউএস কন্টেনার। ব্যাংকগুলো এলসি খোলা নিয়ে কড়াকড়ি করায় আমদানিতে প্রভাব পড়ে বলেও মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হলেও উৎপাদন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে তারা মন্তব্য করেছেন।
এর আগে গেলো আগস্ট মাসে ৬৫ হাজার ৪৬১ টিইইউএস কন্টেনার পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। জুলাই মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৫৯ হাজার ৫৯২ টিইইউএস কন্টেনার পণ্য। আগস্ট মাসে পণ্য আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৭৫ টিইইউএস কন্টেনার। জুলাই মাসে যার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৮৫ টিইইউএস। দিন গড়ানোর সাথে সাথে বৈশ্বিক সংকট মারাত্মক আকার নিচ্ছে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, এতে শুধু বাংলাদেশেরই নয়, বৈশ্বিক বাণিজ্যেও মন্দা তৈরি হয়েছে।
যার প্রভাব পড়েছে দেশে দেশে। বিদ্যমান বৈশ্বিক সংকট নিরসন না হলে দেশের এই সংকট ঘুচবে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপের দিকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি, প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, আমদানির উপর রপ্তানির খানিকটা নির্ভর করে। আমদানি কমলে তার প্রভাব রপ্তানিতে পড়বেই। তিনি বলেন, এটা আরো খারাপ হবে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সার্বিক বাণিজ্যের উপর প্রভাব ফেলছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিজিএমইএর প্রথম সহ সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যই হচ্ছে তৈরি পোশাক। এই খাত ভালো না থাকলে রপ্তানি খাতের ভালো থাকার সুযোগ নেই। তিনি এই খাতে ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে যে কাঁচামাল আমদানি হয় তা কমে গেছে উল্লেখ করে বলেন, এই কমে যাওয়া দেশের সার্বিক আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তিনি গার্মেন্টস খাতের অবস্থা ভালো মনে হচ্ছে না বলে জানান।