ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ: বহুভাষাবিদ জ্ঞানতাপস

| শনিবার , ১৩ জুলাই, ২০২৪ at ৫:১০ পূর্বাহ্ণ

. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ (১৮৮৫১৯৬৯)। ভাষাতত্ত্ববিদ। তিনি ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ১০শে জুলাই পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃতে অনার্সসহ বি.(১৯১০) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে এম.(১৯১২) পাস করেন। দুবছর পর তিনি বি.এল (১৯১৪) ডিগ্রিও অর্জন করেন। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ যশোর জেলা স্কুলের শিক্ষকতার মধ্যদিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখান থেকে সীতাকুণ্ড হাইস্কুলে কিছুদিন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করার পর তিনি চবিবশ পরগনা জেলার বশিরহাটে আইন ব্যবসা শুরু পড়েন। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে মৌলিক গবেষণায় তিনি প্রমাণ করে দেখান যে, গৌড়ী বা মাগধী প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বৈদিক ভাষা, বৌদ্ধ সংস্কৃত, তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব, তিব্বতি ও প্রাচীন পারসিক ভাষা এবং জার্মানির ফ্রাইবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচীন খোতনি, প্রাচীন ভারতীয় বৈদিক সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষায় শিক্ষাগ্রহণ করেন। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলা ভাষার প্রাচীন নিদর্শন চর্যাপদাবলি বিষয়ে গবেষণা করে প্যারিসের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন এবং ধ্বনিতত্ত্বে মৌলিক গবেষণার জন্য তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোমাও লাভ করেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। অতঃপর সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগ ভেঙে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ হলে ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ হন এবং ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস নিযু্‌ক্ত হন। ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে শহীদুল্লাহ্‌ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনিই প্রথম উর্দুর পরিবর্তে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার যৌক্তিক দাবি জানান। ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে গবেষণাগ্রন্থের পাশাপাশি তিনি সাহিত্য এবং শিশুসাহিত্যের অনেক মৌলিক গ্রন্থও রচনা করেন। তিনি বেশ কয়েকটি গ্রন্থ অনুবাদ ও সম্পাদনাও করেন। তিনিই প্রথম প্রমাণ করেন যে চর্যাপদ সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় রচিত; এর ধর্মতত্ত্ব নিয়েও তিনি আলোচনা করেন। তিনি ভাষা ও সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘প্রাইড অফ পারফরম্যান্স’, ফরাসি সরকার কর্তৃক ‘নাইট অফ দি অর্ডারস অফ আর্ট লেটার্স’ (১৯৬৭) উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকান্ত ভাবনা
পরবর্তী নিবন্ধমা হওয়া সহজ কথা নয়