ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী অপশাসক শেখ হাসিনার নিকৃষ্টতম দোসর সালমান রহমান গত ১৩ আগস্ট ২০২৪ তারিখে দাড়ি কেটে, চুলে রঙ দিয়ে, লুঙ্গি পরে ছদ্মবেশে নদীপথে ঢাকা থেকে পালানোর সময় নৌবাহিনীর কাছে ধরা পড়েছে। ছদ্মবেশধারী সালমানকে প্রথমে নাকি নৌবাহিনী চিনতে পারেনি, তাকে চিনিয়ে দিয়েছে পুলিশের কাছে একইসাথে ধরা পড়া সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংকঋণ–লুটেরা ও সর্ববৃহৎ–রাঘববোয়াল ঋণখেলাপি সালমান রহমানকে এত করুণ ছদ্মবেশধারী অবস্থায় ধরা পড়তে দেখে সারা দেশের জনগণের মধ্যে হাসির হুল্লোড় পড়েছে। তাকে ধবধবে সাদা–দাড়ি, সাদা–চুলওয়ালা এবং সাদা পাঞ্জাবি–পড়া অবস্থায় সবসময় দেখা যেতো বলে ওয়াকিবহাল জনগণের বিরাট অংশ তাকে ঘৃণাভরে ও কৌতুক করে ‘দরবেশ’ নামেই ডাকতো, কারণ তার সার্বক্ষণিক দুষ্কর্মগুলো তার ঐ বেশ–ভুষার একেবারেই বিপরীত বার্তা পৌঁছে দিত সবার কাছে। যারাই তাকে চিনতো তাদের সবাই তাকে প্রচন্ডভাবে ঘৃণা করতো পাঁচ দশক ধরেই, সাবেক প্রধানমন্ত্র্রী শেখ হাসিনার বেসরকারী বিনিয়োগ ও শিল্প উপদেষ্টার পদটি বাগানোর বহু বছর আগে থেকেই। কারণ, এই লোকটির মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ গত বায়ান্নো বছর ধরেই দেশের অর্থনীতিতে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় পুঁজি–লুটপাটের সমার্থক হয়ে উঠেছিল। দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার ১৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখের খবরে বলা হচ্ছে, গত বায়ান্নো বছরে সে ব্যাংকিং খাতের সাতটি ব্যাংক থেকে ৩৬,৮৬৫ কোটি টাকা (ছত্রিশ হাজার আট’শ পঁয়ষট্টি কোটি টাকা) ঋণ–লুন্ঠনের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে। শুধু জনতা ব্যাংক থেকেই সে ঋণ নিয়েছে তেইশ হাজার কোটি টাকার বেশি। তার মালিকানার আইএফআইসি ব্যাংক থেকে সে নাকি অবৈধভাবে ঋণ নিয়েছে এগার হাজার কোটি টাকার বেশি। এই বিপুল ঋণের অতি ক্ষুদ্র অংশই ব্যাংকে ফেরত এসেছে বা ভবিষ্যতে আসবে। এর মানে সালমান গ্রেফতার হয়ে ভবিষ্যতে মামলা–মোকদ্দমার আসামী হবে হয়তো, কিন্তু এতদ্সত্ত্বেও খেলাপিঋণ হিসেবে হাজার হাজার কোটি টাকা চিরতরে আত্মসাৎ হয়ে যাবে বিদেশে পাচার হয়ে।
১৯৭২ সালে তার বড়ভাই সোহেল রহমানের সাথে পার্টনারশিপে সালমান গড়ে তুলেছিল বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি বা ‘বেক্সিমকো’। ঐ কোম্পানি গড়ে তোলায় সহায়তা করেছিল বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ কামাল, যে সালমানের বাল্যবন্ধু ছিল। সালমান ও সোহেল রহমান ছিল পাকিস্তানের কুখ্যাত রাজনীতিবিদ ফজলুর রহমানের পুত্র। ফজলুর রহমান এক পায়ে ল্যাংড়া ছিলেন বলে পূর্ব বাংলার সাধারণ জনগণ তাকে ‘লেংগা ফজলু’ হিসেবেই অভিহিত করতো। এই ফজলুর রহমান ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান–সৃষ্টির পর লিয়াকত আলী খানের মন্ত্রীসভায় শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিল তার বাঙালি–বিরোধী রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য। ১৯৪৮–৫২ সালে যখন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার তোড়জোর চলেছিল তখন এই বাঙালি–কুলাঙ্গার ফজলুর রহমান উর্দুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে। ১৯৪৮ সালের প্রথম ভাষা আন্দোলনের জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে যখন তদানীন্তন সরকার উর্দুর সাথে বাংলাকেও অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হবে বলে জনগণের সাথে প্রতারণার খেলা শুরু করেছিল তখন ফজলুর রহমান হঠাৎ প্রস্তাব দিয়েছিল যে উর্দুর মত বাংলাও আরবী হরফে ডান থেকে বামে লেখার ব্যবস্থা করলে উর্দুভাষীরা সহজে বাংলা শিখে নিতে পারবে। অত্যন্ত ঘৃণাভরে তার ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল পূর্ব বাংলার আন্দোলনকারী জনগণ। শিক্ষামন্ত্রী থাকার সুবাদে ফজলুর রহমান পূর্ব বাংলা থেকে বিদেশে পাট রফতানির একটা লাইসেন্স বাগিয়ে নিয়েছিল, যার সাথে পরবর্তীতে যুক্ত হয়েছিল একটি ‘জুট বেইলিং মিল’। ষাটের দশকে পাট রফতানি ব্যবসা ও আমদানি ব্যবসার মাধ্যমে প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়েছিল ফজলুর রহমানের পুত্ররা। ধানমন্ডিতে একটি প্রাসাদোপম বাড়িও নির্মাণ করেছিল ফজলুর রহমান, যার সুবাদে শেখ কামালের বাল্যবন্ধু ও খেলার টিমমেট হতে পেরেছিল সালমান। ষাটের দশকে যখন ফজলুর রহমানের মৃত্যু হয় তখন তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী তাকে তদানীন্তন পাকিস্তানের রাজধানী করাচীতে দাফন করা হয়। অতএব, ফজলুর রহমানের পাকিস্তান–প্রীতির অন্তিম প্রতীক হিসেবে এখনো বহাল রয়েছে করাচীতে তার কবরটি।
এরকম একজন পাকিস্তান–প্রেমী, বাঙালি–স্বার্থবিরোধী ব্যক্তির পুত্রের সাথে বঙ্গবন্ধুর ছেলের বন্ধুত্ব হলো! শেখ কামালকে খুশি করার জন্য সালমান শেখ কামাল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ক্লাব ‘আবাহনী ক্রীড়া চক্রের’ সবচেয়ে বড় ফাইনেন্সিয়ারের ভূমিকাটি গ্রহণ করে। গত বায়ান্নো বছর ধরে আবাহনী ক্লাবের মাধ্যমে দেশের পুরো ক্রীড়া জগতকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে সালমান। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর আবাহনী ক্লাব লুটতরাজ ও ভাঙচুরের শিকার হয়েছে, লুট হয়ে গেছে আবাহনীর জয় করা সব ট্রফি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ছিল বেঙ্মিকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। (পাপন শেখ রেহানার খালা–শাশুড়ির ছেলে। সালমান রহমানের ছেলে শায়ান রহমান ক্রিকেট বোর্ডের অত্যন্ত প্রভাবশালী পরিচালক। বেক্সিমকোর আরেক কর্মকর্তা ডাঃ মল্লিক ক্রিকেট বোর্ডের প্রতাপশালী পরিচালক। বেক্সিমকোর সাথে সম্পর্কের কারণে খালেদ মাহমুদ সুজন এত প্রভাবশালী)। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে সালাউদ্দিনের ক্ষমতারও মূল–ভিত্তি সালমান। বেক্সিমকোর বেশিরভাগ ব্যবসা–প্রতিষ্ঠানকে লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখানো হয় বছরের পর বছর। কিন্তু, এতদ্সত্ত্বেও বেক্সিমকোর কোন প্রতিষ্ঠানেরই ব্যাংকঋণ পেতে কখনোই বেগ পেতে হয়নি গত চার দশক ধরে। ১৯৮২ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সালমানের সাথে তাঁর দহরম–মহরম জনগণের আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। তাকে একটি প্রাইভেট ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদান করেন এরশাদ। বেক্সিমকো দেশের বড়সড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকশিত হয় এরশাদের পৃষ্ঠপোষকতায়। নব্বইয়ের দশকে রাজনীতিতে আসে সালমান। ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আন্দোলন’ নামের একটা রাজনৈতিক দল গঠন করে ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে জামানত হারানোর পর সে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়। ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের শেয়ার মার্কেট ধসের পেছনে প্রধান নাটের গুরু ছিল সালমান। এ–সম্পর্কীয় তদন্ত রিপোর্টে সালমানের ভূমিকা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও তাকে শাস্তির আওতায় আনেননি হাসিনা। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করলেও সালমান তার চাচা নাজমুল হুদার কাছে হেরে যায়। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে সালমান সংসদ সদস্য হয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসে, ২০১৮ সালের ‘রাতের ভোটের নির্বাচনের’ কিছুদিন আগে সে হাসিনার অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়। ঐ জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচনের পর হাসিনা সালমানকে মন্ত্রীর মর্যাদায় তাঁর বেসরকারী বিনিয়োগ ও শিল্প উপদেষ্টা বানিয়ে দেশের জনগণকে অবাক করে দেন, কারণ নব্বইয়ের দশক থেকেই দেশের সবচেয়ে বড় রাঘববোয়াল–ঋণখেলাপি হিসেবে সালমান কুখ্যাতি অর্জন করেছিল। বলতে গেলে ২০১৯–২০২৪ পর্যায়ে হাসিনার সরকারের অর্থনৈতিক নীতি–নির্ধারণে সালমানই ছিল দন্ডমুন্ডের কর্তা। ২০১৯ সালে তার শিষ্য লোটাস কামালকে নাম–কা–ওয়াস্তে অর্থমন্ত্রী নিয়োগ করা হলেও যাবতীয় অর্থনৈতিক ও ব্যবসা–সংক্রান্ত সরকারী নীতি হাসিনা গ্রহণ করতেন সালমানের পরামর্শমত। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থেকে শুরু করে সকল রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বোর্ডের পরিচালক নিয়োগে সালমানের সিদ্ধান্তই ছিল প্রধান নিয়ামক। ব্যবসায়ী সমাজের সকল নেতৃত্বদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্তর্ভুক্ত হতে হলে ব্যবসায়ীদেরকে অতি–অবশ্যই সালমানের খয়ের খাঁ সাজতে হতো গত সাড়ে পাঁচ বছর ধরে। শেষের দু’তিন বছর লোটাস কামালের নিষ্ক্রিয়তা দেশের জনগণের মধ্যে আলোচনার মূল খোরাক যোগালেও ওয়াকিবহাল মহলের জানা ছিল যে আদতে দেশের সরকার পরিচালনা করছে হাসিনা এবং সালমান। অর্থনীতিকে ২০২১ সালের পর ক্রমশ বিপর্যয়ের গিরিখাতে ধাবিত করেছে এই দু’জন। কিন্তু, ব্যাংকঋণ লুন্ঠন থেকে দূরে সরানো যায়নি সালমানকে। গত পাঁচ বছর দেশের যাবতীয় লোভনীয় নূতন ব্যবসায়ে সবার আগে চোখ পড়ত সালমানের। সেট–টপ সেটেলাইট নেটওয়ার্ক ‘আকাশ’, গাইবান্ধার সোলার পাওয়ার প্রজেক্ট এবং করোনা ভাইরাস মহামারির ভারতীয় টিকার এজেন্সি এর কতিপয় উদাহরণ।
২০১০ সালের শেয়ার বাজার ধসের কারণ অনুসন্ধানের জন্য হাসিনার সরকার প্রয়াত খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। ঐ কমিটির রিপোর্টে শেয়ার বাজারে ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে ধস নামানোর মাধ্যমে কয়েক’শ কোটি টাকা লুট করার জন্য সালমান রহমান এবং লোটাস কামালকে দায়ী করা হয়। রিপোর্টটি প্রকাশের জন্য দেশে প্রবল দাবি ওঠা সত্ত্বেও হাসিনা ঐ রিপোর্ট প্রকাশ করেননি। হতাশ হয়ে খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ তাঁর বিভিন্ন কলামে সরাসরি সালমান ও লোটাস কামালের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখলে সালমান দম্ভভরে বলেছিলেন,‘আমি শেয়ার বাজারের নিয়মমাফিক খেলে টাকা বানিয়েছি’। লোটাস কামালের বক্তব্যও হুবহু একই ছিল। অবাক কান্ড হলো, ২০১৮ সালের ‘রাতের ভোটে’ জিতে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর হাসিনা এই দুজনকেই অর্থনীতি পরিচালনার কুশীলবের আসন প্রদান করেছিলেন। দুঃখজনকভাবে ঐ সময়ের সিকিউরিটিজ এন্ড এঙচেঞ্জ কমিশনের কর্তারা এবং সদ্য–বিদায়ী চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত শেয়ার বাজারে সালমানের অবৈধ ম্যানিপুলেশনের ব্যাপারে কখনোই ব্যবস্থা নেননি। সালমানের মত কতিপয় খেলোয়ারের কারণে দেশের শেয়ার বাজার এখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না।
২০১৯ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে স্বল্পজ্ঞানসম্পন্ন লোটাস কামালকে অর্থমন্ত্রী বানানো হাসিনার অত্যন্ত স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত ছিল, কিন্তু সালমানের প্রভাবেই ঐ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন হাসিনা। দায়িত্ব গ্রহণের পর একাদিক্রমে ছয়টি অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাংকের ঋণখেলাপিদেরকে অভূতপূর্ব সুবিধা প্রদানের যে কুকীর্তি হাসিনার সরকার সৃষ্টি করেছে তার প্রত্যেকটাই সালমানের নির্দেশে গ্রহণ করেছিল লোটাস কামাল। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক সিদ্ধান্তটি ছিল দুই শতাংশ খেলাপিঋণ ব্যাংকে জমা দিলে দশ বছর পর্যন্ত আর ঐ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণখেলাপির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এই সুবিধা ব্যবহার করে দ্রুত দেশের সকল রাঘববোয়াল–ঋণখেলাপি নিজেদেরকে ঋণখেলাপির তালিকা থেকে বের করে নিয়েছে। আমার পত্রিকা–কলাম ও টক–শোগুলোতে আমি এই নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ জানাতে থাকায় জনগণ সালমানের এই কুকীর্তি সম্পর্কে সজাগ হতে পেরেছে। ২০২০ সালে একুশে টেলিভিশনের একটি টক–শোতে আমি সালমানকে দেশের সবচেয়ে বড় ঋণখেলাপি অভিহিত করায় ক্ষিপ্ত হয়ে সে আমার বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২০ মার্চ তারিখে একটি ‘উকিল নোটিশ’ পাঠিয়েছিল, ‘আমাকে এক সপ্তাহের মধ্যে পত্র–পত্রিকায় স্টেটমেন্ট দিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে, নইলে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সে’। আমিও ঐ দু’শতাংশ খেলাপিঋণ ফেরত দেওয়ার অন্যায় সুবিধার কথা উল্লেখ করে উকিল নোটিশের জবাবে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম যে তার আর ঋণখেলাপির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণ নেই। গত চার বছরে এ–ব্যাপারে আর কোন পদক্ষেপ সে গ্রহণ করেনি। দুঃখ কোথায় রাখি, হাসিনা এই গণধিকৃত দানবকে তাঁর সবচেয়ে প্রতাপশালী সহচর বানিয়েছিলেন!
সালমান ও আনিসুল হককে ঢাকার নিউ মার্কেট থানার একটি হত্যা মামলার হুকুমের আসামী হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে এই দুর্বল মামলায় বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সালমানের খালাস পেয়ে যাওয়ার প্রবল আশংকা রয়েছে। প্রত্যেক ব্যাংকের শীর্ষ দশ ঋণখেলাপিকে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের আওতায় এনে স্বল্পসময়ে তাদেরকে জেলের ভাত খাওয়ানোর জন্য এবং তাদের সমস্ত সম্পত্তি ক্রোক করার জন্য রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন ১৯৯৮ সালে যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করে সালমানের মত দানবীয় লুটেরাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা না গেলে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া যাবে না। এটাই এখন সময়ের দাবি। সরকার পতনের পর গুলশানে অবস্থিত সালমানের প্রাসাদোপম বাড়িটি লুটতরাজ ও ভাঙচুরের মাধ্যমে বিধ্বস্ত হয়েছে। ঐ প্রাসাদে নাকি প্রায় দু’শ কোটি টাকা মূল্যের চিত্রকর্ম দেয়ালের শোভা বর্ধন করত। লুটপাটে অংশগ্রহণকারী টোকাইরা কয়েক’শ টাকার বিনিময়ে নাকি চিত্রকর্মগুলো বিক্রয় করে দিয়েছে, যেগুলো কিনে নিয়েছে এলাকার অন্য ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা। লুট করা টাকায় ধন–সম্পদ অর্জন করলে শেষ পর্যন্ত তার পরিণতি এমনও হতে পারে!
লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়