ড. মইনুল ইসলামের কলাম

| বৃহস্পতিবার , ১ জুলাই, ২০২১ at ৭:১২ পূর্বাহ্ণ

অবিলম্বে সকল সিটি কর্পোরেশনের গৃহকর নির্ধারণের নূতন আইন প্রয়োজন
১৯৮৬ সালের ’দি সিটি কর্পোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস’ অধ্যাদেশটি জারি করা হয়েছিল দেশের তদানীন্তন চারটি সিটি কর্পোরেশন–ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের জন্য। অধ্যাদেশ জারির ৩৫ বছর পার হয়ে গেলেও দেশের রাজধানী ঢাকাসহ কোন নগরেই ঐ অধ্যাদেশে নির্দেশিত বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের ব্যবস্থা বাস্তবায়িত করা যায়নি। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের মেয়াদকালে কোন মন্ত্রী বা আমলার উর্বর মস্তিষ্ক থেকে বাড়িভাড়ার ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের এই ভুল অধ্যাদেশের ধারণার জন্ম হয়েছিল, যা বিশ্বের আর কোথাও চালু নেই। কারণ বাড়িভাড়া হলো বাড়ির মালিকের আয়, যার ভিত্তিতে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে নিয়মমাফিক প্রতি বছর আয়কর পরিশোধ করতে বাধ্য। ঐ একই বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে যদি তাঁকে আবার গৃহকর দিতে হয় তাহলে তো আয়ের ওপর ‘ডাবল ট্যাঙেশন’ হয়ে যাবে, যা সর্বস্বীকৃত করনীতির (পধহড়হং ধহফ ঢ়ৎরহপরঢ়ষবং ড়ভ ঃধীধঃরড়হ) পরিপন্থী বিধায় বিশ্বের সব দেশেই নিষিদ্ধ। হোল্ডিং ট্যাক্সকে ‘ট্যাঙেশন তত্ত্বে’ সম্পত্তি কর বা প্রোপার্টি ট্যাক্স অভিহিত করা হয়। প্রোপার্টি ট্যাক্স নির্ধারণের বিশ্বস্বীকৃত নিয়ম হলো সম্পত্তির অবস্থানের গুরুত্ব, আয়তনের মাপ, ঐ সম্পত্তির গুণগত মান এবং কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যের রকমভেদ বিবেচনায় নিয়ে করহার কমবেশি ধার্য করা। নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিটি-সেন্টারে সম্পত্তি-করহার বেশি হবে, কমার্শিয়াল জোনে করহার বেশি ধরা হবে, সিটি-সেন্টার থেকে যতই দূরবর্তী এলাকায় বা শহরতলীতে সম্পত্তির অবস্থান হবে ততই কর ক্রমান্বয়ে কমে আসবে। মাল্টি-স্টরিড হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের এপার্টমেন্টে যে হারে হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য হবে, একতলা টিনের ছাউনী সেমি-পাকা বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স তার সাথে তুলনীয় হতেই পারে না। মার্বেল পাথরের মেঝে-যুক্ত এপার্টমেন্টের করহার সিমেন্টের মেঝে-যুক্ত ফ্ল্যাটের করহারের তুলনায় অনেক বেশি হবে। বেড়ার ঘর হলে হয়তো কোন গৃহকরই ধার্য হবে না।
অধ্যাদেশ জারির ৩০ বছর পর ২০১৬ সালে হঠাৎ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তদানীন্তন মেয়র আ জ ম নাছিরউদ্দিন ১৯৮৬ সালের ঐ অধ্যাদেশের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের ১১টি সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে প্রথম বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন শুরু করে দেন। পুনর্মূল্যায়ন শুরু হতেই দেখা গেল, নূতন ধারায় গৃহকরের পরিমাণ একলাফে প্রচলিত করের ৫/৬ গুণ এমনকি দশগুণ বেড়ে যাচ্ছিল। অতএব, ঐ অযৌক্তিক পদ্ধতির বিরুদ্ধে করদাতাদের প্রতিবাদ দ্রুত প্রতিরোধ আন্দোলনে পরিণত হলো। উপরন্তু, এই ভুল সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের শুরু থেকেই সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাড়িভাড়ার জরিপ চালাতে গিয়ে অসংখ্য জোর-জবরদস্তির ঘটনা ঘটিয়েছেন, ঘুষ-বাণিজ্যের মাধ্যমে মনগড়া ভ্যালুয়েশন নির্ধারণ করেছেন, কাউকে অন্যায় সুবিধা দিয়েছেন, কাউকে আবার গলাকাটা ভাড়া দেখিয়ে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এরপর আবার আপিলের নামে আরেকদফা ঘুষ-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। দেশের পত্র-পত্রিকায় যখন ইস্যুটির বিরুদ্ধে জনমত জোরদার হতে শুরু করল তখন নাছির মিডিয়ার সামনে চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের বিরুদ্ধে কয়েকবার বিষোদ্‌গার করতেও পিছপাও হননি। কিন্তু, নূতন হারে গৃহকর আদায়ের তোড়জোর শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই নগরীর করদাতাদের ধূমায়িত ব্যাপক ক্ষোভ উত্তপ্ত বিক্ষোভ ও জনপ্রিয় আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিল। প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীও তাঁর মৃত্যুর অব্যবহিত পূর্বে আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। ঐ তীব্র আন্দোলনের প্রভাবে নাছিরের জনপ্রিয়তা অতি দ্রুত শূন্যে নেমে গিয়েছিল, যা আর কখনো তিনি পুনরুদ্ধার করতে পারেননি। পাঠকদের হয়তো মনে আছে, নাছিরের পদাংক অনুসরণ করে ঢাকা দক্ষিণ কর্পোরেশনের তদানীন্তন মেয়র সাঈদ খোকন যখন ঐ অধ্যাদেশের ভিত্তিতে গৃহকর পুনর্মূল্যায়নের প্রয়াস নিলেন তখন ঢাকায়ও আন্দোলনের জোয়ার জোরদার হতে শুরু করেছিল। ফলে, সরকার তড়িঘড়ি করে পুরো ব্যাপারটা স্থগিত ঘোষণা করেছিল।
দৈনিক আজাদীতে গত কয়েকদিন ধরে প্রকাশিত সংবাদে মনে হচ্ছিল, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নব-নির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীও এই অযৌক্তিক অধ্যাদেশটি বাস্তবায়নের ভুল পথে যাত্রা করেছিলেন। গত ২৫ তারিখের পত্র-পত্রিকার খবরে স্বস্তি পেলাম যে তাঁর এতদ্‌সংক্রান্ত পদক্ষেপ জানাজানি হওয়ার পর দৈনিক আজাদী চট্টগ্রামের বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনদের যে ধারাবাহিক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে চলেছিল তাতে শেষ পর্যন্ত হয়তো তাঁর বোধোদয় ঘটেছে। তিনি ২৪ জুনের সিটি কাউন্সিল সভায় ঘোষণা দিয়েছেন যে আপাতত গৃহকর বাড়ানো হবে না। স্বস্তি এজন্য যে এই ভুল অধ্যাদেশের ভিত্তিতে গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন করতে গিয়ে তাঁর পূর্বসূরি মেয়র নাছিরকে যে ব্যাপক আন্দোলনের মোকাবেলা করতে হয়েছিল তা তাঁর জনপ্রিয়তাকে ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছিল। আমরা চাই না চৌধুরীও একই বিপদের সম্মুখীন হোন। যাঁরা এই পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁরা তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী নন। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, এ-ব্যাপারে কিছু করতে হলে প্রথমে সকল সিটি কর্পোরেশনের গৃহকরের সামঞ্জস্য বিধানকল্পে নূতন আইন প্রণয়ন প্রয়োজন হবে। অতএব, অবিলম্বে দেশের সকল সিটি কর্পোরেশনের গৃহকর নির্ধারণ পদ্ধতিকে ইউনিফর্ম পদ্ধতিতে নিয়ে আসার জন্যে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠন করে কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক অবিলম্বে সংসদে একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ এখন ফরজ হয়ে গেছে। কারণ, ১৯৮৬ সালের ‘দি সিটি কর্পোরেশন ট্যাঙেশন রুলস্‌’ অনুসরণে বাংলাদেশের এগারোটি সিটি কর্পোরেশনের যেখানেই গৃহকর নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়া হবে সেখানেই করদাতাদের তোপের মুখে পড়তে হবে কর্তৃপক্ষকে।
১৩ অক্টোবর ২০১৭ তারিখের দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার লীড নিউজ হিসেবে যে চাঞ্চল্যকর খবরটা প্রকাশিত হয়েছিল তাহলো, দেশের ১১টি সিটি কর্পোরেশনে মোট ৬ ধরনের গৃহকরের হার বলবৎ রয়েছে, যেখানে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনে বার্ষিক সর্বনিম্ন ১২ শতাংশ, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনেও ১২ শতাংশ, খুলনা সিটি কর্পোরেশনে ১৬ শতাংশ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ১৭ শতাংশ, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনেও ১৭ শতাংশ, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে ১৯ শতাংশ, সিলেট সিটি কর্পোরেশনে ২০ শতাংশ, রংপুর সিটি কর্পোরেশনেও ২০ শতাংশ এবং রাজশাহী ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে ২৭ শতাংশ হারে গৃহকর আদায় করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু, এই ছয় রকমের গৃহকরের হারের ফলে রাজশাহী ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের করদাতারা অন্য নয় নগরীর করদাতাদের চাইতে বেশি পরিমাণ গৃহকর দিচ্ছেন বলে ধারণা করলে সেটা সঠিক হবে না। এমনকি চট্টগ্রামের করদাতাগণ ঢাকার করদাতাদের চাইতে বেশি গৃহকর দিচ্ছেন কিনা তা-ও সঠিকভাবে বলা যাবে না। কারণ, এই ১১টি সিটি কর্পোরেশনে বাড়ীর ভ্যালুয়েশনে কোন ইউনিফর্ম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না। ফলে, রাজশাহী বা বরিশালে বাড়ীর ভ্যালুয়েশন কম হলে ঐ ভ্যালুয়েশনের ২৭ শতাংশ গৃহকরের পরিমাণ ঢাকা বা চট্টগ্রামের চাইতে কম হতে পারে। তবে, এটুকু বলা যেতে পারে যে বাংলাদেশের ১১টি সিটি কর্পোরেশনের গৃহকর নির্ধারণ ও আদায়ের পদ্ধতিগুলোতে কোনরকম সামঞ্জস্য বিধান করা হয়নি, এবং এক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে চরম নৈরাজ্য বিরাজ করছে।
আরো তাৎপর্যপূর্ণ হলো, এই এগারোটি সিটি কর্পোরেশনের কোনটিতেই গৃহকরের হার নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে বাড়িভাড়ার আয়কে ব্যবহার করা হয় না। প্রকাশিত খবরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, খোদ ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে বাড়ির মেঝের আয়তন বর্গফুটের ভিত্তিতে হিসাব করে প্রতি বর্গফুট চার টাকা থেকে শুরু করে ষোল টাকা ধরে সম্পত্তির ভ্যালুয়েশন নির্ধারণ করে ঐ ভ্যালুয়েশনের ওপর ১২ শতাংশ হারে গৃহকর নির্ধারণের নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে। ১৯৮৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে মোট চারজন মেয়র দায়িত্ব পালন করেছেন: মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, মীর নাসিরুদ্দিন, মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং মনজুর আলম। তাঁদের মেয়াদকালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে মোট তিনবার গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে, প্রতিবারই বাড়ির মেঝের আয়তন বর্গফুটের ভিত্তিতে ভ্যালুয়েশন করে গৃহকর বাড়ানো হয়েছে। প্রতিবারই নব-নির্ধারিত গৃহকর পুরাতন গৃহকরের চাইতে কয়েকগুণ বেশি নির্ধারিত হলেও এগুলো নিয়ে ঐ ২৯ বছরে ব্যাপক প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আন্দোলন পরিদৃষ্ট হয়নি, কারণ ঐ বর্ধিত গৃহকরের পরিমাণ কোনবারই করদাতাদের কাছে অস্বাভাবিক ও অসহনীয় বিবেচিত হয়নি। প্রাক্তন মেয়র মনজুর আলমের সময় বাড়ির যে ভ্যালুয়েশন করা হয়েছে তা-ও বাড়ির মেঝের আয়তনের ভিত্তিতে হিসাব করে ঐ ভ্যালুয়েশনের ১৭ শতাংশ গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে, মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময়ের গৃহকরের চাইতে জনাব মনজুর আলমের সময়ের গৃহকরের পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি হলেও তা করদাতাদের কাছে অসহনীয় মনে হয়নি। জনাব নাছির কেন ১৯৮৬ সালের ভুল অধ্যাদেশটিকে যৌক্তিক মনে করেছিলেন জানি না।
অথচ, ঐ ২০১৬ সালের ২১ অক্টোবর তারিখে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত আমার কলামে আমি নাছিরকে জানিয়েছিলাম যে বিশ্বের কোথাও হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় না। কারণ, হোল্ডিং ট্যাক্স প্রকৃতপক্ষে যেহেতু সম্পত্তি কর বা প্রোপার্টি ট্যাক্স তাই সারা বিশ্বের সকল সিটি কর্পোরেশনে প্রোপার্টি ট্যাক্সের একই নিয়মে এই কর আদায় করা হয়। সারা বিশ্বে সম্পত্তি কর বা প্রোপার্টি ট্যাক্স আরোপ করা হয় কলামে ইতোমধ্যেই বর্ণিত সম্পত্তির ভ্যালুয়েশনের ভিত্তিতে। আমার ঐ কলামেই আমি তাঁকে আহ্বান জানিয়েছিলাম সম্পত্তির আয়তন ও লোকেশনের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের পদ্ধতি অব্যাহত রাখা হোক্‌। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত আমার কলামে আমি আবারো তাঁকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছিলাম, কিন্তু কোন সুবিবেচনার পরিবর্তে বরং তাঁকে রাগান্বিত হয়ে টেলিভিশনে পাল্টা বক্তব্য দিতে দেখা গিয়েছিল। একবার তিনি বললেন,‘এরা কেউ কোনদিন কোন ট্যাক্সই দেয়নি, তাই এরা পানি ঘোলা করছে’। আরেকবার তিনি এক সমাবেশে বললেন,‘ গৃহকর নিয়ে এত হৈ চৈ করার কোন প্রয়োজন ছিল না। আপিল করলে ওটা কমিয়ে দেয়া হবে’। তাঁর এ ধরনের আক্রমণাত্মক মানসিকতা এবং ঢালাও বাক্যবাণ মোটেও গ্রহণযোগ্য ছিল না। আর, আপিল করে গৃহকর কমানোর কথা বলা মানে সিটি কর্পোরেশনের কর্তাব্যক্তি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ-বাণিজ্যের মহাযজ্ঞকে উৎসাহিত করা–এটা তাঁর জানার কথা। তিনি কোনভাবেই সত্যের মুখোমুখি হলেন না যে বাড়ীভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণ করলে ‘ডবল ট্যাক্সেশন অব ইনকাম’ হয়ে যাবে, বিশ্বে যার নজির নেই। ব্যাপারটা নিয়ে জেদাজেদি করতে গিয়েই তাঁর জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছিল। ঐ সময় আমি নিজ-উদ্যোগে ভারতের কোলকাতা নগরী থেকে ওখানকার গৃহকর নির্ধারণের পদ্ধতি সম্পর্কে খবরাখবর সংগ্রহ করে এনেছিলাম। কোলকাতা সিটি কর্পোরেশনেও সম্পত্তির অবস্থান, বাড়ির মেঝের আয়তন, বাড়ির গুণগত মান ইত্যাদি বিবেচনা করে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়। ভারতের সকল সিটি কর্পোরেশনে নাকি একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
মাননীয় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে আমার অনুরোধ, তিনি নিজের উদ্যোগে কোলকাতা, দিল্লী, চেন্নাই এবং মুম্বা্‌ইয়ের মত সিটি কর্পোরেশনের গৃহকর পদ্ধতি সম্পর্কে খবরাখবর সংগ্রহ করে এ-ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেন। এরপর তাঁর দায়িত্ব হবে চট্টগ্রাম নগরীর নির্বাচিত মেয়র হিসেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ১৯৮৬ সালের ‘দি সিটি কর্পোরেশন ট্যাঙেশন রুলস’ বাতিল করে মন্ত্রণালয়কে যথাযথ আইন প্রণয়নের অনুরোধ জানানো। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের কোন আমলার বা মন্ত্রীর উর্বর মস্তিষ্ক থেকে বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের যে ভুল ধারণা বেরিয়ে এসেছে সেটাকে অপরিবর্তনীয় বিবেচনা করা হচ্ছে কেন? বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের সব সিটি কর্পোরেশনে যে নিয়মে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করা হয় আমাদের দেশে সে নিয়ম অনুসরণ করলে অসুবিধে কোথায়? অতএব, ১৯৮৬ সালের ‘দি সিটি কর্পোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস’ বাতিল করে একটি নূতন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়ার জন্যে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর,
অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাল আজকাল
পরবর্তী নিবন্ধ৯ বছর পর মিলল পিকাসোর চিত্রকর্ম