চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অনিয়মে ভরা। সবক্ষেত্রে অনিয়ম করে রাখা হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও এরকম নজির নেই যে, একজন চাকরিপ্রার্থীকে আটকে রাখা হয়। অন্যরা এটা শুনলে হাসবে, যা চবিতে হয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ইমেজ সংকট রয়েছে, আমি চেষ্টা করবো এসব সংকট দূর করার। এজন্য দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। সবাইকে সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আমি সবার সাথে বসে আলোচনা করবো।
গতকাল বুধবার উপাচার্য হওয়ার পর আজাদীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন চবির নতুন উপাচার্য। এদিন চবির ২০তম উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে সাময়িক উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে গত ৪০ দিন প্রশাসনহীন অবস্থায় ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যলয়। এজন্য গত কয়েকদিন দ্রুত উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করছিল শিক্ষার্থীরা।
প্রফেসর ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে অনিয়মের স্তুপ করে রাখা হয়েছে। আবাসিক হলে অনিয়ম আছে, নিয়োগে অনিয়ম আছে। প্রতিটি সেক্টরে অনিয়মের পাহাড় করে রাখা হয়েছে। আমি চেষ্টা করবো সম্মিলিতভাবে কাজ করে এসব সমস্যা দূর করার জন্য। শিক্ষকদের সাথে বসবো কিভাবে শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া যায়। নিয়মিত ক্লাস–পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষকদের সাথে কথা বলবো।
জানা যায়, চবির উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়েও কাজ না হওয়ায় প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ মুখে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করে। গতকাল উপাচার্য নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারির আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরাা আন্দোলন চালিয়ে যায়। প্রজ্ঞাপন আসার পর শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার : ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়ার বাড়ি খুলনা জেলায়। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ (অনার্স) এবং এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারলু থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে দ্বিতীয় এমএ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সিডনি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশাগত জীবনে প্রফেসর ইয়াহ্ইয়া আখতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৮২ সালে, গত বছর অবসরে যান। তার গবেষণার মূল ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে রয়েছে সমসাময়িক রাজনীতি, দুর্নীতি, ধর্ম, নির্বাচন এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি। দেশ–বিদেশের বিভিন্ন গবেষণা জার্নালে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ প্রকাশ পেয়েছে।
গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান : ড. ইয়াহ্ইয়ার লেখালেখি মূলত গবেষণামূলক এবং তিনি রাজনীতি ও সমাজতত্ত্ব বিষয়ে বহু প্রবন্ধ ও গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। তাঁর লেখা বই ‘ইলেকটোরাল করাপশন ইন বাংলাদেশ’ (২০০১), যা ইংল্যান্ডের অ্যাশগেট পাবলিশিং লিমিটেড থেকে প্রকাশিত, পশ্চিমা ও প্রাচ্যের প্রতিষ্ঠিত সমাজবিজ্ঞানীদের সমাদর পেয়েছে। এছাড়াও তার ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও সামাজিকীকরণ : প্রসঙ্গ বাংলাদেশ’ (১৯৯১), ‘নির্বাচন, দুর্নীতি ও রাজনীতি’ (২০০৩) এবং ‘চারদলীয় জোট সরকারের দেশ শাসন’ (২০০৩) বইগুলোও বহুল পঠিত হয়েছে। তাঁর প্রবন্ধ ও গবেষণা অনেক আন্তর্জাতিক জার্নাল এবং সেমিনারে প্রকাশিত হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ তার লেখা ‘দুর্নীতি রোধে সংবাদপত্রের ভূমিকা’ শীর্ষক রিসার্চ মনোগ্রাফ প্রকাশ করেছে। ড. আখতার একাডেমিক কাজের পাশাপাশি সামাজিক ও গবেষণামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ–এর সদস্য এবং রিসার্চ সোসাইটি অব বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া, তিনি ইয়ুথ ফোরাম ফর ডেমোক্রাসির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।