যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রথম কোনও সাবেক প্রেসিডেন্ট যার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার বিচার কাজ শুরু হচ্ছে। কীভাবে তার আইনিদল এ মামলা লড়বেন এবং তার জন্য কী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে সেটাই এখন দেখার বিষয়। ৭৬ বছরের ট্রাম্প গত মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কের ম্যানহ্যাটন ফৌজদারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। আদালতে ওইদিন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবসার আয়–ব্যয় সংক্রান্ত ভুয়া তথ্য দেওয়াসহ মোট ৩৪টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যদিও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার যেসব অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তার সবগুলোই আইনের চোখে সাধারণত লঘু অপরাধ বলে বিবেচিত হয়। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এর থেকেও গুরুতর অপরাধের অভিযোগে তদন্ত চলছে। যদি ট্রাম্প মঙ্গলবারের মামলায় দোষীসাব্যস্ত হন, তবে তার সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ডের সাজা হতে পারে। খবর বিডিনিউজের।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে আনা মোট ৩৪টি অভিযোগের তালিকায় রয়েছে তথ্য গোপন, বেআইনিভাবে অর্থ দেওয়া, প্রতারণা, তদন্তে অসহযোগিতার মতো গুরুতর ফৌজদারি ধারা। যার প্রত্যেকটিতে দোষী সাব্যস্ত হলে ১৩৬ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে তার। কারণ আমেরিকার আইন অনুযায়ী অধিকাংশ অভিযোগের ক্ষেত্রেই অন্তত ৪ বছরের সাজার নিদান রয়েছে। যদিও আইন বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বাস্তবে এমন সম্ভাবনা প্রায় নেই। তবুও বছর দশেক জেলে থাকতে হতে পারে ৭৬ বছরের রিপাবলিকান নেতাকে।
কোনো সন্দেহ নেই যে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এ মামলার বিচার কার্যক্রম নিয়ে পুরো বিশ্বের আগ্রহ রয়েছে। তবে সমানে যে আইনি প্রক্রিয়া হতে যাচ্ছে তা দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে চলবে। এবং অবশ্যই ট্রাম্পের আইনজীবীরা মামলাটি খারিজের জন্য জোর লড়াই চালিয়ে যাবেন।
রাজ্যের ফৌজদারি বিচার পরিষেবা বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ২০২২ সালের প্রথম তিন–চতুর্থাংশে ম্যানহ্যাটন আদালতে ফৌজদারি মামলাগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত অভিযুক্ত হওয়ার পর থেকে মামলার বিচারের শুনানি শুরু হওয়া পর্যন্ত ৯০০ দিনের বেশি সময় লেগেছে। ট্রাম্পের মামলার বেলায় সবকিছু সাধারণের চাইতে বেশ খানিকটা আলাদা হচ্ছে। তার আইনজীবীরা বলেছেন, তারা আক্রমণাত্মকভাবেই এই মামলা লড়বেন এবং তাদের পক্ষে নথিপত্রের ঝড় তুলবেন।
আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে রিপাবলিকান প্রার্থীদের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এবং দলটি ওই বছরের মাঝামাঝিতে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাব প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য নিজেদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে। যিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামবেন। যদি ট্রাম্প নির্বাচিত হনও, তবুও তিনি নিজের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে নিজেকে ক্ষমা করার অধিকার রাখেন না। কিন্তু একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যদি ফৌজদারি মামলা চলে তবে সেটা কোন পথে অগ্রসর হবে সে বিষয়েও মার্কিন আইনে সুস্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অতীতে কখনও এ ধরনের সংকট দেখা দেয়নি।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শুধু ম্যানহ্যাটন আদালতের ফৌজদারি মামলাই নয় বরং তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয়ের পর প্রতিদ্বন্দ্বী জয়ী প্রার্থীকে উৎখাতের চেষ্টা এবং রাষ্ট্রীয় গোপন নথি নিজের কাছে রেখে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অপরাধ তদন্ত চলছে।
যদিও বিচার চলাকালে নির্বাচনে অংশ নিতে কোনও আইনি বাধার মুখে পড়বেন না অভিযুক্ত ট্রাম্প, তবে প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার বিষয়টি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে নিঃসন্দেহে প্রভাব ফেলবে।