গভীর রাতে সচিবালয়ে লাগা আগুন নেভানোর সময় পানির লাইন দিতে রাস্তা পার হতে গেলে ট্রাকচাপায় প্রাণ যায় ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়নের। এ ঘটনায় ঘাতক ট্রাকটির চালক ও সহকারীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মিনহাজুর রহমান এ আদেশ দেন।
নয়নের মৃত্যুর ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে ট্রাকচালক বেলাল হোসেন ওরফে সুমন (৩৬) ও হেল্পার ফরহাদের (২০) বিরুদ্ধে ঢাকার শাহবাগ থানায় মামলা করেন ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সদস্য রুহুল আমিন মোল্লা। পরে তাদের আদালতে হাজির করে কারাগারে নেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই আমিরুল ইসলাম। আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে ছিলেন না। খবর বিডিনিউজের। মামলার এজাহারে বলা হয়, বুধবার রাত ২টার দিকে সচিবালয়ে আগুন লাগার খবরে তেজগাঁও ফায়ার সার্ভিসের আটজনের একটি দল সেখানে যায়। রাত ৩টা ১০ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের পানির লাইন নিয়ে সচিবালয়ের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তা পার হতে গেলে দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে আসামিরা ট্রাক চালিয়ে ফায়ার ফাইটার নয়নকে চাপা দেয়। এতে নয়নের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর আঘাত লাগে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট সেখানে যায়। ওই আগুন পুরোপুরি নেভে ১০ ঘণ্টা পর। রাতে আগুন নেভানোর সময় ফায়ার ফাইটার নয়ন পানির লাইন দিতে রাস্তা পার হতে গেলে একটি ট্রাক তাকে চাপা দেয়।
নিহত এ তরুণের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুরে। আক্তারুজ্জামান ও নার্গিস দম্পতির একমাত্র ছেলে নয়ন। এক বোন ও এক ভাইযের মধ্যে সবার ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। ২৪ বছর বয়সী এ তরুণের মূল কর্মস্থল সিলেটের বিশ্বনাথ ফায়ার স্টেশন হলেও তাকে ঢাকায় এনে তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে সংযুক্ত করা হয়েছিল।
নিহতের স্বজনরা বলেন, নয়নই ছিল পরিবারের একমাত্র ভরসা। তাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখতেন তার মা–বাবা ও বোন। কিন্তু হঠাৎ এমন মৃত্যুতে যেন পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেল। মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছেন না। মূল কর্মস্থল সিলেটের বিশ্বনাথ ফায়ার স্টেশন হলেও তাকে ঢাকায় এনে তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে সংযুক্ত করা হয়েছিল। নয়নকে চাপা দেওয়ার পর ট্রাকটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে গণপূর্ত অধিদপ্তর এলাকায় উপস্থিত লোকজন সেটি থামায়। এরপর ট্রাকের চালক বেলাল ও সহকারী ফরহাদকে ধরে পুলিশে দেয়।
এদিকে নয়নের মৃত্যুর পর নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আগুন নির্বাপণের কাজ করছিলেন তখন কেন পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে দেয়নি? পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে দিলে তাহলে এই দুর্ঘটনা ঘটতো না। এই পরিপ্রেক্ষিতে এর দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এড়াতে পারেন না বলেও বিভিন্ন মহল হয়ে প্রশ্ন উঠে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে প্রশ্ন করা হলে নয়নের মৃত্যুর ব্যর্থতার দায়ী স্বীকার করে নেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরে ফায়ার ফাইটার শোয়ানুর জামান নয়নের জানাজা শেষে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এই ঘটনার বিচার অবশ্যই হবে। আমার একজন কর্মী মারা গেল এর ব্যর্থতা আমার। এ ঘটনায় আমি শোকাহত। অল্প বয়সে যে এই ছেলেটা চলে গেল সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে তার মা–বাবার। অন্য সবাই কিন্তু আস্তে আস্তে ভুলে যাবে, কিন্তু তার মা–বাবা কিন্তু এই মৃত্যু ভুলতে পারবে না সহজে।