কক্সবাজার শহরের বাসিন্দা মো. কাসেম ও মহিন উদ্দিন। তারা দুই বন্ধু মিলে সিএনজিচালিত টেক্সি করে ঘুরতে গিয়েছিলেন কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কে। এক পর্যায়ে টেক্সিচালক তাদের টেকনাফ ঘুরে আসার কথা বলে। চালকের কথায় সরল বিশ্বাসে ঘুরতে যায় টেকনাফে। কিন্তু চালক তাদের নিয়ে যায় মানবপাচারকারীর আস্তানায়। বন্দি করা হয় দুই বন্ধুকে। ১৮ দিন পর সেই বন্দিশালা থেকে মো. কাসেম ও মহিন উদ্দিনকে বিজিবি অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে। একইসাথে এভাবে বন্দি থাকা আরো ১২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের উত্তর লম্বরী এলাকার সাইফুল ইসলামের বাড়ির বন্দিশালা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া বাকিদেরকেও প্রায় একইভাবে অপহরণ করে বন্দি করা রাখা হয়। পরে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে। তারপর মালয়েশিয়ায় পাচারের কথা ছিলো বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া ভুক্তভোগীরা। পাচারকারীদের জিম্মিদশা থেকে ১৪ জন উদ্ধারকৃত ব্যক্তি কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। টেকনাফ ব্যাটালিয়নের (২ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, টেকনাফের সাইফুল ইসলামের ওই বাড়িতে অবস্থিত মানবপাচারকারীদের একটি আস্তানা, সেখানে বেশ কয়েকজন লোকজনকে আটক করে রাখা হয়েছে–এমন খবর পাওয়া যায়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবি একটি দল সেই বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানে বাড়িতে বন্দী অবস্থায় ১৪ জন অপহরণ করে বন্দি রাখার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় যায়। পরে দরজা ভেঙে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়। তবে অভিযানের বিষয়ের টের পেয়ে অপহরণকারীরা পালিয়ে যাওয়াই এই অপহরণের সাথে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। বিজিবির এই কর্মকর্তা বলেন, কারা এই অপহরণে জড়িত, কী উদ্দেশ্যে তাদের অপহরণ করা হয়েছে–তা জানতে আমরা ভুক্তভোগীদের জবানবন্দি নিয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার প্রক্রিয়া চলছে। উদ্ধার হওয়া ভুক্তভোগী মো. কাসেম ও মহিন উদ্দিন বলেন, টেঙিচালকের প্রলোভনে টেকনাফে গেলে আমাদের অপহরণ করে জোরপূর্বক একটি বাড়িতে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। সেখানে আরও বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। আমাদের মারধর করে পরিবারের কাছে ভিডিও পাঠিয়ে এক লাখ টাকা করে দুই লাখ টাকা আদায় করা হয়। এরপরও ১৮ দিন ধরে আমাদের জিম্মি করে রাখা হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সাগরপথে পাচার করে দালালদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া। অবশেষে বিজিবি এসে আমাদের উদ্ধার করে, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।