টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে ভেসে এলো এক জোড়া মরা পরপইস। গতকাল রোববার বেলা দুইটা থেকে আড়াইটার মধ্যে টেকনাফের বাহারছড়ার হলবনিয়া সৈকতে মরা পরপইস দুটো ভেসে আসে বলে জানান স্থানীয়রা। এর আগে ৩ মার্চ একই ইউনিয়নের চৌকিদারপাড়া সৈকতে এবং গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শহরের সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে ২টি মৃত পরপইস ভেসে আসে। এর আগে কক্সবাজার উপকূলে পরপইসের দেখা মিলেনি বলে জানান বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ মোহাম্মদ শরীফ।
তিনি বলেন, মরা পরপইস ভেসে আসার খবর পাওয়া গেলেও ঘটনাস্থলে বোরির কোন বিজ্ঞানী দলকে পাঠানো সম্ভব হয়নি। তার আগেই স্থানীয়রা প্রাণি দুটো মাটি চাপা দেয়। এ নিয়ে চলতি বছরের এ পর্যন্ত কক্সবাজারের বিভিন্ন সৈকতে ৪টি ইন্দো–প্যাসিফিক ফিনলেস পরপইস, তিনটি ইরাবতী ডলফিন, একটি ইন্দো–প্যাসিফিক হামব্যাক ডলফিন ও একটি স্পিনার ডলফিনসহ নয়টি স্তন্যপায়ী প্রাণীর মৃতদেহ ভেসে এসেছে। ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির (ডাব্লিউসিএস) সর্বশেষ জরীপ মতে, বঙ্গোপসাগরে মোট ১৩ জাতের সিটাসিয়ান বা সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র এক প্রজাতির পরপইস, ৮ প্রজাতির ডলফিন ও ৪ প্রজাতির তিমি রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে ইন্দো–প্যাসিফিক ফিনলেস পরপইস নামের একটি মাত্র প্রজাতির পরপইসের বিচরণ রয়েছে। এটির প্রাণীতাত্ত্বিক বা বৈজ্ঞানিক নাম নিওফোকেনা ফোকেনয়েডস। পরপইস, ডলফিন ও তিমিসহ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিশাল পরিবেশগত সেবার কারণে এদেরকে ইকোসিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ার বলা হয়। এরা তাদের স্বভাবজাত বা আচরণগত প্রকৌশলের মাধ্যমে শুধু নিজেদের বসবাসের পরিবেশ ঠিক রাখে না, অন্য প্রাণিদের জন্যও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেয়। যে কারণে, যে পরিবেশে এরা বসবাস করে সেই পরিবেশকে একটি উর্বর, জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ নির্মল পরিবেশ হিসাবে ধরা হয়।
২০১২ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে স্তন্যপায়ী ডলফিন, পরপইস ও তিমি সংরক্ষিত প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত। এগুলো শিকার করা, খাওয়া, অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ পরিবহন ও ক্রয়–বিক্রয় দণ্ডনীয় অপরাধ।