নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে সাগরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে কক্সবাজারের টেকনাফে দুই শতাধিক বসতঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ ও প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে এসব বসতঘর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। একই সাথে সাগরের প্রবল ঢেউয়ের ধাক্কায় বালিয়াড়ি, গাছ–গাছালি ও নানা স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল থাকায় টেকনাফ–সেন্টমার্টিন নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে চারদিন ধরে। এতে খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট দেখা দিয়েছে এই দ্বীপে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই তথ্য জানিয়েছেন। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম জানান, অমাবস্যার প্রভাবে সৃষ্ট বৈরি আবহাওয়ায় সাগরের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ১–৩ ফুট অধিক উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছে। এতে দ্বীপের বিভিন্ন অংশে লোকালয়ে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করছে। এতে করে শতাধিক বসতঘর প্লাবিত হয়েছে এবং গাছপালা উপড়ে গেছে। অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা চারদিন ধরে টেকনাফ–সেন্টমার্টিন নৌপথে যাত্রীবাহী ও
মালবাহী ট্রলার চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি নৌকা। দুর্ঘটনা এড়াতে মাছ ধরার ট্রলারগুলো জেটির আশপাশে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে।
ফয়েজুল ইসলাম বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমজুড়ে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে লাগাতার নিম্নচাপ ও লঘুচাপের কারণে উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে সেন্টমার্টিন প্রায় সময় পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। সর্বশেষ গত তিনদিন ধরে একই পরিস্থিতিতে দ্বীপের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
সাগরের পানিতে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড নিয়ে একটি এলাকা ব্যাপকভাবে প্লাাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে শতাধিক বসতবাড়ি। এতে এই এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।
টেকনাফ উপজেলা জ্যৈষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা ও সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, দ্বীপের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে দুই একদিন ধরে জোয়ারের পানি বেড়িবাঁধ টপকে লোকালয়ে প্রবেশ করে শতাধিক বসতি প্লাবিত হয়েছে। সাগরের লবণাক্ত পানিতে কিছু ফসলি জমিন নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, দ্বীপ রক্ষার বাঁধটি চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে। এতে সাগর তীরবর্তী শাহপরীর দ্বীপের গোলাপাড়া, পশ্চিম পাড়া, দক্ষিণপাড়া, ডাঙ্গর পাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, বাজারপাড়া ও জালিয়াপাড়া এলাকায় মানুষগুলো বেশি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। বাঁধ ভেঙে গেলে পুরো দ্বীপের মানুষ বসতি হারাবে।
স্থানীয়রা জানান, সাগর তীরবর্তী এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের জুন মাসে ১৫১ কোটি টাকার খরচ করে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে প্রায় ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণের কিছু দিনের মধ্যেই বাঁধের সিসি ব্লকগুলো ধসে পড়ে। দ্রুত সংস্কার ও টেকসই বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেকনাফের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, অমাবশ্যার প্রবল জোয়ারে সাগরের পানি বেড়ে বাঁধ টপকে লোকালয়ে প্রবেশের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। শাহপরীর দ্বীপের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় অল্প দিনের মধ্যে সংস্কারের কাজ শুরু হবে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় সাগরের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় টেকনাফ বেশ কয়েকটি গ্রাম ও সেন্টমার্টিনের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। লোকজন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এর সাথে সেন্টমার্টিনে যাত্রী ও মালবাহী নৌযান যেতে না পারায় দ্বীপে খাদ্য সংকটও তীব্র হয়েছে। উপজেলা সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে।