বেইলি রোডের আগুন সতর্ক ঘণ্টা বাজিয়ে দেওয়ার পর ঢাকার ধানমন্ডির সাত মসজিদ সড়কের গাউসিয়া টুইন পিক ভবনে অভিযান চালিয়ে সব রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছে রাজউক। এর মধ্যে একটি রেস্তোরাঁ ভেঙে দেওয়া হয়েছে নিয়ম না মেনে তৈরি করার কারণে। আর ছয়টি রেস্তোরাঁয় বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। রাজউকের অথোরাইজড অফিসার এহসান আহমেদ বলেন, সোমবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাজউকের কর্মকর্তারা ওই ভবনে গিয়ে অভিযান শুরু করেন। শুরুতে ভবনের ছাদে থাকা রেট্রো লাইভ কিচেন নামের রেস্তোরাঁটি ভেঙে দেওয়া হয়। ভবনের নকশা অনুযায়ী ওই রেস্তোরাঁ থাকার কথা নয়। খবর বিডিনিউজের।
এছাড়া কাভান সিগনেচার, চাপ ঘর, স্পাইস অ্যান্ড হার্বস ও কালচার অ্যান্ড কুইজিন, দ্য প্যান প্যাসিফিক লাউঞ্জ, ম্যারিটেজ ঢাকা, হোয়াইট হল, অ্যারিস্টোক্র্যাট লাউঞ্জ, ইয়াম চা ডিস্ট্রিক্ট, দ্য লবি লাউঞ্জ বুফে, ক্যাফে সাও পাওলো লিমিটেড, আদি কড়াই গোস্ত লিমিটেড, ক্যাফে ডেলোসি এবং গ্যালিতোস রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে নয়টি রেস্তোরাঁ সিলগালা করা হয়। বাকি ছয়টি রেস্তোরাঁর মালিকরা আগেই সেগুলো বন্ধ করে চলে যায়। এ কারণে সেগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। গাউসিয়া টুইন পিকের দ্বিতীয় এবং ত্রয়োদশ তলায় দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে। বাকি ফ্লোরগুলোয় দোকান এবং ১৫টি রেস্তোরাঁর জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। অথচ আইন অনুযায়ী সেখানে রেস্তোরাঁ বসানোর সুযোগ নেই। ভবনটি ১৫০ ফুট উচ্চতায় নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হলেও অবৈধভাবে ৪০ ফুট বাড়ানো হয়েছে বলে রোববার রাজউকের পরিদর্শনে উঠে আসে।
রাজউকের পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজিন সারওয়ার বলেন, ভবনটি ব্যবহারে ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। ভবনটির এফ–১ ক্যাটাগরিতে অনুমোদন করা ছিল। কিন্তু সেটা অনুসরণ করা হচ্ছিল না। এফ–১ মানে হলো অফিস ভবন হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। এই ভবনে আমরা ১৫টা রেস্তোরাঁ পেয়েছি। রেস্তোরাঁ পাওয়ার পর আমরা এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু রেস্তোরাঁ সিলগালা করেছি, কিছু কিছু রেস্তোরাঁর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। মোট কথা সবগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন নিহত হওয়ার পর স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে গাউসিয়া টুইন পিক ভবনের অনিয়মের কথা জানিয়ে যেখানে যেতে ভোক্তাদের নিষেধ করেন। তিনি বলেন, তিনি গাউসিয়া টুইন পিকের নকশা করলেও ভবনটি সেভাবে ব্যবহার হচ্ছে না।
এরপর রোববার ভবনটি পরিদর্শন করে রাজউকের অঞ্চল–৫ এর পরিচালক মো. হামিদুল ইসলাম বলেন, একতলা বেইজমেন্টসহ ১৪ তলা বাণিজ্যিক ভবনটির অকুপেন্সি টাইপ এফ–১। অর্থাৎ ভবনটি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, রেস্তোরাঁ নয়।
বেইলি রোডে আগুনে পুড়ে যাওয়া গ্রিন কোজি কটেজ ভবনটিও রেস্তোরাঁ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ ছিল না রাজউক আইন অনুযায়ী। কিন্তু আট তলা ভবনে ১৪টি খাবারের দোকান ও রেস্তোরাঁ ছিল। রাজউক অফিস হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সিটি করপোরেশন সেখানে রেস্তোরাঁগুলোকে ট্রেড লাইসেন্স দেয়। নিয়ম ভাঙার বিষয়গুলো সামনে আসে ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডের পর।
রাজউক কর্মকর্তারা বলছেন, গাউসিয়া টুইন পিকেও একই অনিয়ম হয়েছে। সেখানে রাজউক আইন অনুযায়ী রেস্তোরাঁ বসানোর সুযোগ না থাকলেও সিটি করপোরেশন ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে, ছাড়পত্র মিলেছে কলকারখানা অধিদপ্তরের এবং ফায়ার সার্ভিস থেকেও।
ওয়ারীতে দুই রেস্তোরাঁ ব্যবস্থাপকসহ গ্রেপ্তার ২২ : পেশওয়ারাইন রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের পর পুরান ঢাকার ওয়ারী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই দোকানের দুই ব্যবস্থাপকসহ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত রোববার এবং গতকাল সোমবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন জানান।
এর মধ্যে রোববার রাতে পেশওয়ারাইন থেকে দুই ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন আহমেদ ও সাইফুল ইসলাম শিমুলকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি চারটি গ্যাস সিলিন্ডার, একটি ভাঙা গ্যাসের চুলা ও একটি পাতিল জব্দ করা হয়। এরপর গতকাল ওই এলাকার অন্তত ২৫টি খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায় ওয়ারি থানা পুলিশ। কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে রেস্তোরাঁ চালানোয় দোকান মালিক ও কর্মচারী মিলিয়ে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আলোচনার মধ্যে পরদিন শুক্রবার রাতে ওয়ারীর পেশওয়ারাইন রেস্তোরাঁয় আগুন লাগে। তবে সেখানে কেউ হতাহত হননি।
ওয়ারী থানার ওসি জানে আলম মুন্সি বলেন, ওই ঘটনায় যে মামলা করা হয়েছে, সেখানে পেশওয়ারাইনের মালিক মো. সাফিনকেও আসামি করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
ওয়ারী এলাকায় দেখা যায়, রেস্টুরেন্টগুলোতে ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। অল্প কিছু জায়গায় তৈরি কিচেন দিয়ে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করছেন মালিকরা। চার ফুট বাই ছয় ফুট সাইজের কিচেনের ৭–৮ জন শেফ কাজ করলেও তেমন কোনো সেফটি নেই তাদের জন্য। রেস্টুরেন্টেগুলোতে বা ভবনে আলাদা কোনো এঙিট দরজা নেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওয়ারী একটি আবাসিক এলাকা। তবে কিছুদিনের মধ্যে এটি বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হয়ে গেছে। এখন প্রতিটি বাড়ির নিচতলায় দোকানপাট তৈরি করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এই কারণে এই এলাকায় এখন সবসময় যানজট লেগে থাকে। বাড়িওয়ালারা অতি মুনাফার লোভে ওয়ারী এলাকাটিকে বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত করেছেন।