সারাহ বেগম কবরী। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে এক কিংবদন্তির নাম। করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে ঢাকার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। অপরদিকে ভোর হতে না হতেই বোয়ালখালীর পোপাদিয়ায় কবরীদের গ্রামের বাড়িতে বেড়ে যায় মানুষের আনাগোনা। ভিড় ছিল অনেক সংবাদকর্মীদেরও। এদের অনেকে একদিন আগেও জানতেন না, বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী নায়িকা কবরীর বাড়ি এখানেই।
এলাকাবাসী জানায়, ১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই পোপাদিয়ার বাড়িতে জন্ম নেন সে সময়ের মিনা পাল, আজকের কবরী। শিশুকালেই মেয়েকে নিয়ে শহরে চলে যান পিতা শ্রীকৃষ্ণদাস পাল আর মাতা লাবণ্য প্রভা পাল। লেখাপড়ার পাশাপাশি চলতে থাকে সংস্কৃতিচর্চাও। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়স নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে আবির্ভাব হয় তার। এরপর টেলিভিশন হয়ে সিনেমায়। ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারে জে এম সেন স্কুলে পড়তেন তিনি। ক্লাস সেভেনে অধ্যায়নরত অবস্থায় সুযোগ পান সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ ছবিতে। তখনই বদলে যায় তার নাম। মিনা পাল থেকে তিনি হয়ে ওঠেন কবরী। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ঢাকার ছবির জগতে নতুন একটি অধ্যায় হয়ে ওঠেছিলেন তিনি।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে বাবা আর দিদিকে নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন কবরী। ওঠেছিলেন সদরঘাটের এক হোটেলে। সেখান থেকে রামকৃষ্ণ মিশন রোডে প্রযোজকের অফিসে গিয়েছিলেন। এক হাজার এগারো টাকায় সাইন করেছিলেন প্রথম সিনেমায়। এটি তার জীবনের প্রথম রোজগার।
‘সুতরাং’ ছবি মুক্তির পর চারদিকে হৈ চৈ পড়ে যায়। ছবির প্রযোজক ছিলেন বোয়ালখালীর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী চিত্ত চৌধুরী। সে সুবাধে চিত্ত চৌধুরী তাকে বিয়ে করেন। অবশ্য কয়েক বছরের মধ্যেই বিচ্ছেদ হয় তাদের। এরপর ১৯৭৮ সালে সফিউদ্দীন সরোয়ারকে বিয়ে করেন তিনি। ২০০৮ সালে তার সঙ্গেও বিচ্ছেদ হয়। এরপর সিনেমা আর রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন কবরী।
২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন কবরী। গতকাল গ্রামের বাড়ির সামনে কথা হয় কবরীর মাসতুতো ভাই বাবুল পালের (৭০) সাথে। তিনি জানান, চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠা পেতে গ্রামের বাড়ি বিক্রি করে ঢাকায় চলে গিয়েছিল কবরীর পরিবার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পরিবারসহ গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন কবরী। পরে এখান থেকে পাড়ি জমান ভারতে।
কলকাতায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করেন কবরী। এরপর আর কখনো গ্রামে আসেননি। ছিল না কোনো যোগাযোগও। কবরীদের বাড়িতে বর্তমানে বসবাস করেন খোরশেদ আলম। তিনি জানান, তার পিতা বাদশা মিয়ার সাথে কবরীর পিতা শ্রীকৃষ্ণদাস পালের বন্ধুত্ব ছিল। ১৯৬৫ সালে সাড়ে তিন কানির বসতবাড়িটি কিনে নেন তারা। বর্তমানে
টিনের দোচালা বাড়িটি যেন দর্শনীয় স্থান। অনেকেই সেখানে যাচ্ছেন, বাড়িটি এক নজর দেখার জন্য।