দুরুহ কোনা থেকে অসাধারণ সব গোল করার দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় ইউরোপ কিংবা লাতিন আমেরিকান ফুটবলে। বিশেষ করে রোনালদো, মেসি কিংবা অন্যসব তারকা ফুটবলাররা এমন গোল করে থাকেন। তবে সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বামপ্রান্তের একেবারে সাইডলাইনের কাছ থেকে যে গোলটি করলেন ঋতুপর্না চাকমার তা এক কথায় অসাধারন। আর সে গোলেই বাংলাদেশ টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী ফুটবলের শ্রেষ্টত্ব ধরে রাখতে সক্ষম হয়। আর এটাই ঋতুপর্নার কাছে অন্য রকম আনন্দ। সচরাচর লেফট উইংয়ে বল পায়ে মুগ্ধতা ছড়াতে পারেন ঋতুপর্ণা চাকমা। তবে সদ্য শেষ হওয়া সাফে বাংলাদেশকে শিরোপা জেতানোর কারিগর নিজেও পরেছেন টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের মুকুট। আর তাইতো ট্রফি এবং সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার সব বগলদাবা করেই ফিরেছেন রাঙ্গামাটির এই কিশোরী। তবে ঋতুপর্নার মতে এবারের টুর্নামেন্ট অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল। ভারত–নেপাল অনেক শক্তিশালী দল ছিল। ওদের সঙ্গে জেতা সহজ ছিল না। তবে আমরা সত্যিই অনেক কষ্ট করেছি। আর এই সাফল্য আমাদের সবার কঠোর পরিশ্রমের ফল। আমরা দিনের পর দিন খুব ভোরে অনুশীলন করেছি। তিন মাস কোনো ম্যাচও খেলতে পারিনি। শুধু অনুশীলন করেই চ্যাম্পিয়ন হওয়াতো কম বড় ব্যাপার নয়। দেশবাসীর ভালোবাসা, দোয়া আমাদের সঙ্গে ছিল বলেই পেরেছি আমরা।
আগের ম্যাচ গুলোতে গোল না পাওয়ায় ঋতুপর্নার মধ্যে একটা হতাশা ছিল। তবে সেমিফাইনালে গোলের বন্ধ্যাত্ব্য গুছিয়েছিল। আর ফাইনালেতো ছিল দুরন্ত দুর্বার। তিনি বলেন ফাইনালে মাঠে এত পরিমাণ দর্শক ছিল যে আমরা নিজেরাই নিজেদের কথা শুনতে পাচ্ছিলাম না। কিছুটা হলেও তো চাপে ছিলাম। আর শুরুতে ওরা আমাকে সেভাবে সুযোগ দিচ্ছিল না। কয়েকজন মিলে আটকে রাখার পরিকল্পনা করেছিল। সে কারণেই হয়তো প্রথমার্ধে একদমই খেলতে পারিনি। এমনভাবে আমাকে আটকে রেখেছিল যে বল নিয়ে এগোতেই পারছিলাম না। ওদের ডিফেন্ডাররা ভালোই পরিকল্পনা করে নেমেছিল। কিন্তু আমি সুযোগ খুঁজছিলাম শুধু। জানতাম যে সময় বাড়লে ওরা ক্লান্ত হয়ে যাবে। তখন আমাকে সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। আর সেটাই করলাম। এই দলটি দারুন বুঝাপড়ার একটি দল। কারন হিসেবে ঋতুপর্না চাকমা বলেণ আমরা বাফুফে ভবনে সারা বছর ক্যাম্প করি। আমরা একসঙ্গেই থাকি সবাই। দলের মধ্যে যে সমন্বয় সেটা খুবই ভালো। এটাও আমাদের সাফল্য পাওয়ার অন্যতম কারণ। আমরা নিয়মিত অনুশীলন করেছি। এতে অনেক উন্নতি হয়েছে আমাদের। আন্তর্জাতিক ম্যাচ কম পেলেও অনুশীলনটা আমাদের নিয়মিত ছিল। ফাইনালে দ্বিতীয়ার্ধে বেশ জ্বলে উঠেন ঋতুপর্না। যখনই সুযোগ পেয়েছে সেটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন। এমন দুরুহ কোন থেকে গোল করার পর ঋতুপর্না বলেন আমিতো গোলের জন্যই শট নিয়েছিলাম। কিন্তু এটা যে গোল হবে সেটা ভাবিনি। তবে আমাকে গোলে শট নেওয়ার জন্যই ডাগআউট থেকে বলা হচ্ছিল। আমিও সুযোগ নষ্ট করতে চাইনি। গোল করার পর ঋতুপর্না যে উদযাপনটা করলেন তা বেশ আলোচিত হয়েছে। কেন এমন উদযাপন, সে প্রসঙ্গে এই পাহাড়ী কন্যা বলেণ এটি আমার পূর্ব পরিকল্পিত। ঠিক করেছিলাম, ফাইনালে গোল করতে পারলে এই উদযাপনটা করব। মাঠে অনেক দর্শক ছিল, সবাই আমাদের বিপক্ষে ছিল। গোটা স্টেডিয়ামকে চুপ করানোর জন্য ওই উদযাপনটা করেছি। সাফে টানা দুইবারের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। তাই সংগত কারণে বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের দৃষ্টি এখন আরো দুরে। তাইতো ঋতুপর্না জানালেন শুধু সাফ নিয়ে ভাবলেতো হবে না। আমাদের এশিয়ার বড় বড় দলের সঙ্গেও লড়াই করতে হবে এবং জিততে হবে। এখণ সে ভাবনা নিয়েই হয়তো সামনের দিন গুলোতে পরিকল্পনা নেবে এবং এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।