নগরে আজ বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন–২০২৫’। ক্যাম্পেইন চলাকালে নগরে ৮ লক্ষ ২৯ হাজার ৩০১ জন শিশুকে বিনামূল্যে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বিপরীতে গতকাল বুধবার পর্যন্ত টিকা দেয়া হয় ৭ লক্ষ ৭৯ হাজার ৮৫১ জনকে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৪ শতাংশ। নগরে ক্যাম্পেইন চলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায়।
জানা গেছে, ক্যাম্পেইনে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সকল শিশু এবং প্রাক–প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি বা সমমান পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে এক ডোজ টাইফয়েড প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়। স্কুল পর্যায়ে ১২ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এবং কমিউনিটি পর্যায়ে ১ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ক্যাম্পেইন–এর। ওই হিসেবে আজ ক্যাম্পেইন শেষ হবে। তবে সরকার সারা দেশে সময়সীমা বৃদ্ধি করলে নগরেও সময় বাড়ানো হবে বলে আজাদীকে জানিয়েছেন প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমাম হোসেন রানা। চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ–এর তথ্য অনুযায়ী, নগরের ৪১ ওয়ার্ডকে ৭টি জোনে ভাগ করে চলে টিকাদান কার্যক্রম। এর মধ্যে তিনটি জোনে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ পূরণ হয়েছে। জোনগুলো হচ্ছে– আগ্রাবাদ, দেওয়ানবাজার ও মেমন। এর মধ্যে আগ্রাবাদ জোনে ৮৭ হাজার ২২৩ জন, দেওয়ানবাজারে ৯২ হাজার ৬১০ জন ও মেমন জোনে ৮৪ হাজার ৭৭ জনকে টিকা দেয়া হয়। এছাড়া গতকাল পর্যন্ত বাকি চারটি জোনের মধ্যে বন্দরে ৯৬ শতাংশ, কাপাসগোলায় ৮৭ শতাংশ, পাঁচলাইশে ৭৫ শতাংশ ও উত্তর কাট্টলিতে লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ শতাংশ পূরণ হয়েছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরের ১ হাজার ৫৪৬টি স্কুলে ও ৭৮৩টি আউটরিচ সাইডে টিকা কার্যক্রম চলে। ক্যাম্পেইন চলাকালে ৫ লক্ষ ৩১ হাজার ১৬৭ জন স্কুল শিক্ষার্থী এবং স্কুল বহির্ভূত ২ লক্ষ ৯৬ হাজার ৭৮৪ জন স্কুল বহির্ভূত শিশুকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এবার। বিপরীতে গতকাল পর্যন্ত স্কুলে ৪ লক্ষ ৮০ হাজার ৭০৪ জন এবং স্কুল বর্হিভূত ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ১৪৭ জন শিশু টিকা নিয়েছেন।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনায় স্কুল ক্যাম্পেইনে ৪২০ জন ভ্যাকসিনেটর, কমিউনিটি ক্যাম্পেইনে ২১৫ জন ভ্যাকসিনেটর এবং স্কুল ও কমিউনিটি ক্যাম্পেইনে ৬২৫ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত ছিল।
সমন্বয় কমিটির সভা : টিকাদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশন পর্যায়ে গঠিত সমন্বয় কমিটির দ্বিতীয় কো–অর্ডিনেশন সভা গতকাল টাইগারপাস নগর ভবন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায়, আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়, ক্যাম্পেইন–এর শেষ দিনে আজ লক্ষ্যমাত্রা ৯৫ শতাংশে উন্নীত হবে।
চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আমিনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমাম হোসেন রানা, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. শেখ ফজলে রাব্বি, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম, চসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তপন কুমার চক্রবর্তী, ইউনিসেফ কনসালটেন্ট ডা. সারোয়ার আলম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা–এর এসআইএমও ডা. খাদিজা আহমেদসহ বিভিন্ন সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সভায় নগরের বিভিন্ন এলাকায় টিকা কার্যক্রমের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলা হয়, কিছু এলাকায় টিকা গ্রহণের ভালো সাড়া পাওয়া গেলেও অনেক এলাকায় এখনো টিকা গ্রহণের হার সন্তোষজনক নয়। এর কারণ কিছু অভিভাবকদের অনাগ্রহ। শেষ দিনের মধ্যে লক্ষ্য পূরণে অভিভাবকদের টিকা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার আহবান জানানো হয় সভায়।
সভায় বক্তারা বলেন, শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে টিকাদান কর্মসূচিকে সফল করতে হবে। টাইফয়েড একটি অত্যন্ত মারাত্মক রোগ। অনেক সময় টাইফয়েড কীনা বুঝতে না পেরে সাধারণ জ্বর ভাবা হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে অঙ্গহানি পর্যন্ত ঘটাতে পারে। তাই প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় সুরক্ষা।












