সর্বশেষ আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে টাইটানিক ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে সাবমেরিন টাইটানসহ ৫ জনের সলিল সমাধি আবারও প্রমাণিত হলো টাইটানিক ডুবেছিল। অথচ টাইটানিক ডোবেনি– সেখানে অলিম্পিক নামের আরেকটি জাহাজ ডুবেছিল। এ মিথ্যা তথ্যটি বছরের পর বছর চাউর হয়ে আসছিল। এ সংবাদ সোস্যাল মিডিয়া টিকটকে ১২মিলিয়ন ভিউয়ার এবং ১.৮ মিলিয়ন লাইক পড়েছিল। অনলাইনে প্রচারিত বিভ্রান্তিকর ভুল তথ্যে ভরা সংবাদের বিপরীতে বাস্তব সত্য তুলে ধরে ফ্যাক্টচেক করে সমপ্রতি সংবাদ সংস্থা এপি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন– টাইটানিক ডুবেছিল! মূলত সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা কয়েক দশকের পুরোনো ষড়যন্ত্রতত্ত্ব আবারও সামনে আনার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন।
কোনটি সত্য ও বস্তনিষ্ঠ তা নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা ভর করছে। ঠিক সে মুহূর্তে ভাবছিলাম কি নিয়ে লিখা যায়। বর্তমানে পৃথিবীতে অত্যন্ত ধাপটে ডিজিটাল যুগের হাওয়া বইছে। যে যুগে নিজের অজান্তে মানুষ কলম ধরা বাদ দিয়ে নোটপেড / মোবাইল বাটন টিপে চলেছে। কিছু সংখ্যক সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী সাংবাদিকতার নামে ভয়ঙ্করভাবে অজনপ্রিয় কিছু ধারণা রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এতে সাধারণ মানুষ একটি সংবাদের মূল বিষয় ‘বস্তনিষ্টতা’ নিয়ে বিভ্রান্তি এবং প্রচুর বিকৃতিতে ভুগছে।
‘বস্তুনিষ্ঠতা’ বলতে মেরিয়াম–ওয়েবস্টার অবিধানে– ব্যক্তিগত অনুভূতি–বিকৃতি ছাড়াই অনুভূত তথ্য প্রকাশ করাকে বুঝায়। ইদানীং সাংবাদিকতায় উদ্দেশ্যমূলকতা অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এতে গণতন্ত্রকামী দেশগুলো সামাজিক শৃংখলা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় গভীর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে।
ইদানীং বিশ্বে প্রথাগত বস্তুনিষ্ঠতা এবং সংবাদে টেকনোলোজির উত্থান নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পশ্চিমা নিউজরুমগুলোতে বিতর্ক হচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে স্থানীয় সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা পরিবর্তিত হয়েছে। মানুষ অনিয়ন্ত্রিত উদ্ভাবনের দিক থেকে ব্যাপক পরিবর্তনের যুগে ঢুকে যাচ্ছে।
২০২৩ সাল হলো এ যুগের শুভ সূচনা। মানুষের মনকে করাগারে পাঠাতে বিশ্বের নামকরা ট্যাক কোম্পনীগুলো মাইক্রোটার্গেটিং ট্যাকনিকে ২৪/৭ কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী -‘ফ্রিডম অব থটস ইজ এ হিউম্যান রাইট’ বলে চেচামেচি শুরু হয়ে গেছে। স্ট্যাট কাউন্টার গ্লোবাল টেস্ট জরীপে দেখা যায়, বৈশ্বিক সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী বাংলাদেশের অবস্থান ফেসবুক ৮৯%৫৪, ইউটিউব ৬%৫২, ইনস্টগ্রাম ১%৪৯, লিন্কডইন ১%০৮, টুইটার ১%০১,। খোদ আমেরিকা ডিজিটাল টেকনোলজির যুগে প্রবেশ করেছে মাত্র ২৫বছর আগে। দুই পাউন্ড তের ইঞ্চ ব্রিক মোটোরোলা সেলফোন সেট পেরিয়ে আজ স্মাট ঘড়িতে সবকিছু চটজলদি সমাধানের যুগে। যেখানে রয়েছে ডিভাইস যাতে তাৎক্ষণিক সংকেত দিচ্ছে কখন –কী করলে আপনি সব হাতের নাগালে পাবেন। শুনতে পাচ্ছেন– পৃথিবীর ৩০ ভাষায় অনুবাদসহ যে কোনো বক্তব্য। ডিজাইন করা ডিভাইজ; যা আপনার ইচ্ছাকে চালিত করবে এবং করছে। যেহেতু আপনার পছন্দের একটা বাণিজ্যিক মূল্য আছে; তাই বৈশ্বিক কর্পোরেটগুলো আপনার পছন্দ এবং ব্যক্তিগত তথ্যগুলো কিনে তৃতীয় পার্টির কাছে বিক্রি করে ফেলেছে। ফলে স্মার্ট ফোন ট্টাকার ব্যবহার রাশিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথমদিকে রাশিয়ার সৈনিকদের হাতে–হাতে এ ফোন থাকায় রাশিয়াকে বড় ক্ষতি গুনতে হয়েছে। দি সার্জন জেনারেল অব আমেরিকা ডা. বিবেক মূর্তি বলেন– ২০২০ সাল থেকে নিয়ে ২০২১ সাল পর্য়ন্ত স্বাস্থ্যখাতে দারুণভাবে মিথ্যা তথ্যের প্রচলন লক্ষ করা গেছে। যা আমরা কোভিড–১৯ এর সময়কালে দেখেছি। যার প্রত্যক্ষ প্রভাবের ফলে আমেরিকায় লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।
সুপার হিউম্যান টেকনোলজি বা এআই মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কোথায় গিয়ে ঠেকাবে –এ নিয়ে গবেষণা চলছে। পশ্চিমারা চীনকে নিয়ে চিন্তায় রয়েছে। এ নব অর্থনৈতিক চিন্তায় (সারভিলেন্স ক্যাপিটেলিজম) চাইনা এখনো এগিয়ে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ডিজিটাল প্লাটর্ফম ফেসবুক এবং গুগলের আধিপত্য বজায় রেখেছে। এতে স্থানীয় সংবাদপত্র ও গণতন্ত্র একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন। ঠিক তেমনি ভবিষ্যত গণতন্ত্র নিয়ে হৈ–চৈ শুরু হয়ে গেছে পূর্ব–পশ্চিমে। তত্ত্ব–তথ্যের ঘষামাজায় রেরিয়ে আসা ডিজিটাল যুগে চার অক্ষরের ‘গণতন্ত্র’ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
হু–কেয়ারসের এ যুগে মানুষের ব্যত্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতে পৃথিবীতে মানুষের সামনে ধেয়ে আসা পরিবর্তিত পরিস্থিতি– ক্লাইমেট চেঞ্জ, আটিফিসিয়াল ইন্টালেজেন্সি (ম্যাকানিক্যাল যুগ), জিনোম সিকোয়েন্সিং, দ্রুততম সময়ে জটিল সমস্যা সমাধান (কোয়ান্টাম কম্পিউটিং), ক্রিপটো কারেন্সি, কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনের অভাবনীয় গতিশীলতা, ভোক্তা প্রবণতা, বিড ডেটা, ডিরেক্ট টু কনজিউমার, সবুজ শক্তি। ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য শক্তির ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বে সৌর ক্ষমতা ৬০০শ গিগাওয়াট। জাপানের মোট বিদ্যুতের ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ। সামগ্রিকভাবে, ২০২৪ সালের মধ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য (গ্রীন এনাজি) বিদ্যুত ১২০০শ গিগাওয়াট বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিদ্যুতের ক্ষমতার সমতুল্য।
ডিজিটাল যুগের অচিন্ত্যনীয় ডাটা ড্রাভিং শক্তি মানুষের নৈতিকতার সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ–যুদ্ধ খেলা শুরু হয়েছে। ২০১৬ সালে ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা (ডিজিটাল প্লাটফরম) অনলাইনে মাইক্রোটার্গেটিং টেলিকম ব্যবহার করে প্রথম বিজ্ঞাপন ছেড়েছিল। তখন এটি বিশ্বের মনন জগতে সাড়া ফেলেছিল। ঠিক একই সংস্থা ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনে রাজনৈতিক ক্যাম্পিংয়ে অংশ নিয়েছিল বলে একাধিক পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। ডিজিটাল যুগে আমাদের চিন্তার স্বাধীনতার অধিকারকে শক্তিশালী ও রক্ষা করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমপ্রতি আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসে প্রবীণ এক আমেরিকান যোদ্ধা যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন–
‘Freedom is not free ,someone always has to pay the price, rice is high but American have always been to willing to pay it, when necessary. Keep self-prepared because may be your turn
লেখক : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক