ঝুলে গেল এনজিওগ্রাম মেশিন স্থাপনের প্রক্রিয়া

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের পরও ৪০ লাখ টাকার বরাদ্দ পাওয়া যায়নি

জাহেদুল কবির | রবিবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের পরও ৪০ লাখ টাকার বরাদ্দ না পাওয়ায় চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে এনজিওগ্রাম মেশিন স্থাপন করা যাচ্ছে না। টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পড়ে থাকা প্রয়োজনের অতিরিক্ত একটি মেশিন চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে স্থাপন করার কথা ছিল। মেশিনটি চট্টগ্রামে আনা এবং স্থাপনে অন্তত ৪০ লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এই টাকার বরাদ্দ মিলছে না। ফলে গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে একমাত্র এনজিওগ্রাম মেশিন দিয়ে চলছে হৃদরোগ বিভাগের কার্যক্রম।

২০২১ সালের শেষের দিকে অপর একটি এনজিওগ্রাম মেশিনের পিকচার টিউব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেবা পেতে রোগীদের ভোগান্তি পেতে হচ্ছে। হৃদরোগ চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেক গরিব রোগী টেমপোরারি পেস মেকার (টিপিএম), পার্মানেন্ট পেসমেকার (পিপিএম), এনজিওগ্রাম ও রিং স্থাপন করতে পারেননি।

হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, ক্যাথল্যাব বা কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশনের (এনজিওগ্রাম) মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের মাংসপেশি, ভাল্ব (কপাটিকা), ধমনির পরিস্থিতি জানতে এবং হৃদযন্ত্রের রক্তের চাপ বুঝতে রোগীকে ক্যাথল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়। ত্রুটি ধরা পড়লে প্রয়োজন মতো রক্তনালীতে রিং পরানো, পেসমেকার বসানো, সংকুচিত ভাল্বকে ফোলানোসহ বিভিন্ন অস্ত্রোপচার করা হয়।

জানা গেছে, দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় চট্টগ্রামে হৃদরোগের প্রকোপ বেশি। হৃদরোগের চিকিৎসায় উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ প্রতিবেশী দেশ ভারত, সিঙ্গাপুর, ব্যাংককসহ বিশ্বের উন্নত দেশে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তবে এক্ষেত্রে গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের একমাত্র ভরসা চমেক হাসপাতাল। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের কয়েক কোটি মানুষ এই হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল।

হৃদরোগ বিভাগের একজন চিকিৎসক জানান, বর্তমানে জাপানের শিমার্জু ব্র্যান্ডের একটি মেশিন দিয়ে টিপিএম, পিপিএম, এনজিওগ্রাম, পেরিপাইরাল এনজিওগ্রাম ও রক্তনালীতে রিং স্থাপনের কাজ চলছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত বছরের জানুয়ারিতে প্রায় দুই সপ্তাহ মেশিনটি বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে মেশিনটির সরবরাহকারী কোম্পানির প্রতিনিধিরা পিকচার টিউব স্থাপন করে সচল করেন। এছাড়া অপর নষ্ট মেশিনটি সচল করার জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জানায়, মেশিনটি মেরামত করতে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রয়োজন হতে পারে।

চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. নূর উদ্দিন তারেক আজাদীকে বলেন, চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগে বর্তমানে একমাত্র এনজিওগ্রাম মেশিন দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। এতে মেশিনটির ওপর চাপ বাড়ছে। কারণ আমাদের বিভাগে যে পরিমাণ রোগী সে অনুপাতে একটি মেশিন কোনোভাবে যথেষ্ট নয়।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের জন্য টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে একটি মেশিন আনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু মেশিনটি আনা ও স্থাপন করতে ৪০ লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তাই আপাতত এনজিওগ্রাম মেশিন স্থাপনের প্রক্রিয়া ঝুলে গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযেভাবে ধরা পড়ল নৌযানের ৬ শ্রমিক
পরবর্তী নিবন্ধবিদেশি দুটি পিস্তলসহ নগর ছাত্রলীগের দুই নেতা গ্রেপ্তার