নগরীর প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের গুরুত্বপূর্ণ র্যাম্পগুলোও জায়গা বুঝে না পাওয়ায় নির্মাণ কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এতে করে মূল নকশা থেকে ৫টি র্যাম্প বাদ দেয়ার পরও বাকি র্যাম্পগুলো সময়মতো চালু করা সম্ভব হবে না। অবশ্য সিডিএ’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, আগামী মে থেকে জুন মাসের মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটি অনেক বেড়ে যাবে। বেড়ে যাবে যান চলাচলও। তবে রেলওয়ে এবং সিইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খুবই সামান্য পরিমাণে জায়গা বুঝে না পাওয়ায় দুইটি র্যাম্পের কাজ ঝুলে রয়েছে। একই সাথে টাকা পয়সা বুঝে নিয়েও জায়গা ছেড়ে না যাওয়ায় ইপিজেড এলাকার র্যাম্প নির্মাণে সংকট বিরাজ করছে। উচ্ছেদ অভিযানের প্রোগ্রাম করেও পুলিশ না পাওয়ায় জমির দখল নেয়া সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে সিডিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বদলি হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পটি আরো কয়েকদিনের তলায় পড়লো বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
সিডিএ সূত্র জানিয়েছে, নগরীর যানজট নিরসনসহ বহুমুখী লক্ষ্য সামনে নিয়ে পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নগরীর লালখান বাজারে ইতোপূর্বে নির্মিত আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত হবে। এতে পতেঙ্গা থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত ২২ কিলোমিটারেরও বেশি দৈর্ঘ্যের ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে শহরের অধিকাংশ যানবাহন চলাচল করতে পারবে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামোর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এক্সপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য নগরীর ৮টি এলাকায় মোট ১৪টি র্যাম্প নির্মাণের ব্যবস্থা রেখে নকশা প্রনয়ন এবং কাজ শুরু করা হয়েছিল। তবে ইতোমধ্যে কয়েকটি র্যাম্প নিয়ে আপত্তি ওঠে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নগরীর টাইগারপাসের একটিসহ মোট ৫টি র্যাম্প নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নেয় সিডিএ। তবে পরবর্তীতে নগরবাসী যদি কখনো মনে করে এসব র্যাম্প জরুরি, তখন যাতে নির্মাণ করতে পারে সে জন্য মূল অবকাঠামোতে সেই ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। বাদ দেয়া র্যাম্পগুলোর মধ্যে নগরীর টাইগারপাস অংশে পলোগ্রাউন্ডের দিক থেকে ওঠার র্যাম্প, আগ্রাবাদের জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সামনে নামার র্যাম্প, কেইপিজেডে নামার র্যাম্প এবং আগ্রাবাদের এক্সেস রোডে উঠা ও নামার দুইটি র্যাম্প ছিল। এসব র্যাম্প এখন নির্মাণ করা হবে না বলে সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জানান।
তিনি বলেন, শুরুতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আগ্রাবাদে চারটি, টাইগারপাস, নিমতলা, সিইপিজেড ও কেইপিজেড এলাকায় দুটি করে এবং জিইসি মোড়, ফকিরহাটে একটি করে র্যাম্প নির্মাণের কথা ছিল। টাইগারপাস এলাকার পলোগ্রাউন্ড দিকের রাস্তা থেকে কোন র্যাম্প নির্মাণ করা হবে না বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, এই এলাকার মানুষ আগ্রাবাদ কিংবা জিইসি মোড়ের র্যাম্প ব্যবহার করে ফ্লাইওভারে উঠতে হবে।
আগ্রাবাদ এলাকার চারটির মধ্যে জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর সড়কে একটি, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সড়কে একটি এবং আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কে দুটি র্যাম্প নির্মাণের কথা ছিল। এখন সেখানে কেবলমাত্র একটি র্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে। তাও ডেবার পাড় হয়ে। রেলওয়ে থেকে ২১ শতকের মতো জায়গা নিয়ে ডেবারপাড়ে এই র্যাম্প নির্মাণ করা হবে। যা দিয়ে আগ্রাবাদ এলাকা থেকে ফ্লাইওভারে উঠে পতেঙ্গা যাওয়া যাবে। কিন্তু রেলওয়ে থেকে উক্ত জায়গা না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত এই র্যাম্পটি নির্মাণের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। জায়গা চেয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বরাবরে চিঠি দেয়া হলেও কোন সাড়া মিলেনি। বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল বলেন, আমরা চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। ওখান থেকে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমাদের কিছু করার নেই। জায়গা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা মন্ত্রণালয় ছাড়া অন্য কারো নেই বলেও ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন। এতে করে প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ এই র্যাম্প নির্মাণের ব্যাপারটি ঝুলে রয়েছে। ফলে আগ্রাবাদসহ সন্নিহিত এলাকার লোকজন বিমানবন্দর বা পতেঙ্গা অঞ্চলে যাওয়ার জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারছেন না। অথচ আগ্রাবাদ হালিশহরসহ সন্নিহিত অঞ্চলের অসংখ্য মানুষ প্রতিদিনই বিমানবন্দর বা পতেঙ্গা অঞ্চলে যাতায়ত করেন। রেলওয়ে থেকে জায়গা পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে র্যাম্পটি চালু করা সম্ভব হবে বলেও প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন।
নিমতলা এলাকায় দুইটি র্যাম্পের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী ঈদের আগেই এই দুইটি র্যাম্প চালু করে দেয়া হবে। এই দুইটি র্যাম্পের একটি দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে লালখান বাজারের দিকে আসা যাবে অপরটি দিয়ে সি–বিচ থেকে এসে নিমতলায় নামা যাবে।
ইপিজেডের সামনে একটি র্যাম্প নির্মাণ কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যে চালু করা হবে। এই র্যাম্পটি দিয়ে লালখান বাজার থেকে গিয়ে ইপিজেডে নামা যাবে। ইপিজেডের ভিতর থেকে উঠে আসা অপর একটি র্যাম্প দিয়ে লালখান বাজারের দিকে আসা যাবে। তবে এই র্যাম্পটির নির্মাণ কাজ জায়গা বুঝে না পাওয়ায় শুরু করা যাচ্ছে না। সিডিএ থেকে বেপজা কর্তৃপক্ষের কাছে জায়গা ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে পত্র দেয়া হয়েছে।
কর্ণফুলী ইপিজেডের কাছে নির্মিত র্যাম্প দিয়ে উঠে লালখান বাজারের দিকে আসা যাবে। কিন্তু এই র্যাম্পটি নির্মাণ কাজ শুরু করা যাচ্ছে না জায়গার দখল না পাওয়ার কারণে। উক্ত র্যাম্পের এ্যালাইমেন্টের মধ্যে ২ তলা থেকে ৫ তলা উচ্চতার অন্তত ২৫টি ভবন রয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে কিছু জায়গা ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হলেও বাকি জায়গার উপর ভবনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো রয়েছে। যেগুলো উচ্ছেদ করার জন্য গত বুধবার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের অভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা যায় নি। দুয়েকদিনের মধ্যে পুলিশ নিয়ে পুনরায় উচ্ছেদ অভিযানের প্রস্তুতি নেয়ার কথা থাকলেও সিডিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গতকাল বদলি হয়ে যাওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে জায়গার দখল না নেয়া পর্যন্ত ওখানে কাজ শুরু করার কোন সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করে সিডিএর দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, ঠিকাদারকে জায়গা বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই তারা কাজ শুরু করতে পারছে না। এখানে জায়গার দখল নেয়ার পরও ভবনগুলো ভাঙতে বেশ সময় লাগবে বলেও ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।
ফ্লাইওভার থেকে বন্দরের ফকিরহাটে নামার জন্য একটি র্যাম্পের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়েছে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে র্যাম্পটি চালু করা সম্ভব হবে বলেও প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন। আমবাগানে নামার র্যাম্পটি ইতোমধ্যে নির্মিত হয়ে গেছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য নিরলসভাবে চেষ্টা করছি। কিন্তু কয়েকটি র্যাম্পের কাজ শুরু করতে পারছি না। জায়গা না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে সমস্যা হচ্ছে। তাই যত তাড়াতাড়ি জায়গার সমস্যা সমাধান হবে তত দ্রুতই নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারবো। ১৪টি র্যাম্পের স্থলে ৯টি পুরোদমে চালু হলেও এক্সপ্রেসওয়ের উপযোগিতা অনেক বেড়ে যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে কেবলমাত্র মুরাদপুর বা বেবি সুপার মার্কেটের সামনে থেকে উঠে পতেঙ্গার কাঠগড়ে নামা এবং কাঠগড় থেকে উঠে লালখান বাজারে নামার মধ্যে এক্সপ্রেসওয়ে সীমিত রয়েছে। র্যাম্পগুলো চালু হলে নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ সহজেই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারবেন। এতে এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচলের সংখ্যা বহুগুণে বেড়ে যাবে। নিচের গাড়িগুলো এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে গেলে সড়কের যান চলাচলেও প্রত্যাশিত গতিশীলতা সৃষ্টি হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৮ আগস্ট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। গত ৩ জানুয়ারি থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়ের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে গড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার গাড়ি চলাচল করে।