ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫০ স্থাপনা উচ্ছেদ : জেলা প্রশাসনের প্রশংসনীয় কাজ

| বুধবার , ১২ জুলাই, ২০২৩ at ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নগরীর আকবরশাহ থানাধীন ফয়’স লেক সংলগ্ন বেলতলীঘোনা এলাকায় পাহাড় কেটে নির্মাণ করা অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। এতে ২.৮৮ একর সরকারি খাস জমি উদ্ধার হয়েছে। গত ১০ জুলাই দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, অভিযানে পাহাড় কাটার ১৫টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। পাহাড় রক্ষায় গত ৯ জুলাই সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ অভিযান পরিচালনা করেন। তাঁরা হলেন সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম, কাট্টলী সার্কেলের এসিল্যান্ড উমর ফারুক, চান্দগাঁও সার্কেলের এসিল্যান্ড মো. মাসুদ রানা এবং বাকলিয়া সার্কেলের এসিল্যান্ড জামিউল হিকমাহ।

পাহাড় কর্তনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হচ্ছে উল্লেখ করে ম্যাজিস্ট্রেটরা বলেছেন, পাহাড় রক্ষায় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের দায়ের করা মামলার রায় এবং পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৬তম সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের নির্দেশে পাহাড়ে এসব অভিযান চালানো হচ্ছে। বায়েজিদ বোস্তামি থানা, আকবরশাহ থানা, খুলশী থানা, সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর আলীনগর এলাকা এবং অন্যান্য পাহাড়ি এলাকায় আইন ভঙ্গ করে, স্বত্ব ব্যতিরেকে, অযৌক্তিকভাবে পাহাড় কেটে যে সকল স্থাপনা, ঘর গড়ে উঠেছে সেগুলো উচ্ছেদ করে নিতে হবে। অন্যথায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হবে।

সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পাহাড় পুনরুদ্ধারে দ্বিতীয় দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ৩৫০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর আগে ৬ জুন বেলতলীঘোনা এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয় এবং ৫০০ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। অবৈধ ও বিধিবহির্ভূতভাবে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদের প্রথম ধাপে নগরীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকা আকবরশাহ থানাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫০ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম জেলা প্রশাসনের একটি প্রশংসনীয় কাজ। আমরা এই কার্যক্রমের জন্য জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানাই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার’ খ্যাত এ শহরের অপরূপ সৌন্দর্যের অন্যতম উপাদান হচ্ছে পাহাড়। পাহাড়ের সঙ্গে রয়েছে এ শহর ও অঞ্চলের আত্মিক বন্ধন। পাহাড় ধ্বংস করা হলে এ শহরের ভৌগোলিক চরিত্রও বদলে যেতে পারে। সংঘবদ্ধ কয়েকটি চক্রের লালসা পাহাড়ের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। বেলেমাটির পাহাড় একটু কাটা হলেই বাকি অংশও ধসে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। সামনের বছরগুলোতে পাহাড়ধস আবারও যে মৃত্যুর কারণ হবে না, তার নিশ্চয়তা নেই! সহজকথায় পাহাড়কাটা বন্ধ করতে হবে, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে সব ধরনের বসতি উচ্ছেদ করতে হবে।

পাহাড়ধস বন্ধে বেশ কিছু পাহাড় সংরক্ষণ করে দেখা যেতে পারে বলে অভিজ্ঞমহল মত প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেন, পাহাড়গুলো আমাদের সম্পদ, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা যায় না! ধারাবাহিকভাবে পাহাড়ের ক্ষতি করে চললে পাহাড়ও একসময় তার প্রতিশোধ নেবে। পাহাড়কে নিজেদের স্বার্থে কোনো গোষ্ঠী বা চক্র যেন ব্যবহার করতে না পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে।

পাহাড়ধস প্রতিরোধে নানারকম কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের উচ্ছেদের পাশাপাশি পাহাড় ঝুঁকিমুক্ত ও বসবাসের উপযোগী কি না তা যাচাই করতে হবে। পাহাড় কাটা প্রতিরোধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে হবে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ১১ জুন নগরীর বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ পাহাড় ধসে নগরীর কুসুমবাগ ও ভাটিয়ারি এলাকায় ১২৭ জনের মৃত্যু হয়। পরের বছর লালখান বাজার টাঙ্কি পাহাড়ে ভূমিধসে মারা যায় ১১ জন। ২০১৭ সালে মারা যান ৩০ জন। এরই মধ্যে পাহাড়ে প্লট বানিয়ে লোকজনের কাছে বিক্রি করছে একটি চক্র। এতে স্থানীয় রাজনীতিবিদ, পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। পাহাড় কাটার কারণে বালু ছড়িয়ে পড়ে নালানর্দমাগুলো ভরাট হয়ে নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। একই কারণে কর্ণফুলী নদীও নাব্যতা হারাচ্ছে। পাহাড় কাটা বন্ধে টাস্ক ফোর্স গঠন করে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবি করছেন বিশিষ্টজনেরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরমাতোষ সরকার : জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও লেখক
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণফুলি নতুন ব্রীজ গোলচত্বরে যানজট নিরসন চাই