ঝুঁকি ও বিড়ম্বনা এড়াতে প্রস্তাবিত সুপারিশ বিবেচনায় আনুন

| বৃহস্পতিবার , ২০ মার্চ, ২০২৫ at ৭:০১ পূর্বাহ্ণ

আসন্ন ঈদুল ফিতরে এবার দেড় কোটি মানুষ ঢাকা ছাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া আরো অনেক বেশি মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রামের বাড়ি যাবে। একসাথে বিপুল মানুষের যাতায়াতে তীব্র গণপরিবহনের সংকট মোকাবিলায় এবার ঈদের লম্বা ছুটি সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে যাত্রীদের ভোগান্তিমুক্ত, স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। অন্যদিকে, অনেকে আশঙ্কা করছেন, সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বেন। বলা জরুরি যে, ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করা বাংলাদেশের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জের বিষয়। নাড়ির টানে বাড়ির পানে ছুটতে থাকা লোকজনকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো বড় কঠিন হয়ে পড়েছে। ঈদযাত্রায় ঝুঁকি ও বিড়ম্বনার কিছু কারণ রয়েছে এবং প্রতি বছরই উৎসব উদযাপনে বাড়ি ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যায় বিপুলসংখ্যক মানুষ, আহত হয় অনেকে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ভোগান্তিবিড়ম্বনার কারণ। সোমবার রাজধানীতে ‘ঈদযাত্রায় সড়কে ডাকাতি, নগরজুড়ে ছিনতাই, সড়ক দুর্ঘটনার শঙ্কা উত্তোরণের উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব ঈদে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে : ঈদযাত্রা বহরে ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন চলাচল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে; মোটসাইকেল যাত্রী ও আরোহীর মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রীসহ ভেস্ট পরিধান বাধ্যতামূলক করা, রুটভিত্তিক গতি নির্ধারণ, সহযাত্রীর সাথে লাগেজব্যাগেজ নিয়ে মহাসড়কে যাতায়াত নিষিদ্ধ করা; অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণের ভিজিলেন্স টিমে যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; যানজট ও দুর্ঘটনা কমাতে জাতীয় মহাসড়ক থেকে প্যাডেল রিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, নসিমনকরিমন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ঈদের ১০ দিন আগে উচ্ছেদ করতে হবে; কৃত্রিমভাবে যানজট সৃষ্টিকারী মহাসড়কের টোলপ্লাজা অতিরিক্ত জনবল নিয়ে যানজট নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে; সড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই বন্ধে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা ও মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশকে স্পটে দাঁড়িয়ে গাড়ির কাগজপত্র দেখার পরিবর্তে ঈদের ১০ দিন আগে থেকে পেট্রোলিং ডিউটির নির্দেশনা দিতে হবে, সড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই বন্ধে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীদের সড়কে সক্রিয় রাখতে হবে, পুলিশের তৎপরতার পাশাপাশি স্ব স্ব এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ মহাসড়কের পয়েন্টে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং পন্থায় ঈদের আগেপরে পাহাড়াদারি নিশ্চিত করতে হবে এবং সড়ক, রেল ও নৌপথে যাত্রী হয়রানী, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, টিকিট কালোবাজারী বন্ধে গোয়েন্দা পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার দৃশ্যমান কার্যক্রম এই মুহূর্তে চালু করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ চালকের অসতর্কতা, অসচেতনতা, বেপরোয়া বা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালনা এবং ত্রুটিপূর্ণ সড়ক। ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে থাকেন। যার ফলে দুর্ঘটনার ঘটনা বেড়ে যায়। এছাড়া ঈদের সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিয়ে চালকরা অনেক সময় ক্লান্তপরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে থাকেন। এটিও দুর্ঘটনার একটি কারণ। তাই চালকদের এ ব্যাপারে অধিক সচেতন হতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অসুস্থ বা ক্লান্তপরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো যাবে না।

তাঁরা বলেন, সব মিলিয়ে ঈদযাত্রা একটা কঠিন যাত্রায় পরিণত হওয়ার আশংকা তৈরি হয় প্রতি বছর। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লাখ লাখ মানুষের ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সড়ক, নৌ ও রেলপথে যেহেতু অধিকাংশ মানুষ ভ্রমণ করে, সেক্ষেত্রে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করার পাশাপাশি যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা ঈদযাত্রায় অনেক সময় নানা দুর্ঘটনা ঘটে। লঞ্চডুবির ঘটনা প্রায়ই আমরা দেখতে পাই। সুতরাং অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করার ব্যাপারটিও গুরুত্বের সঙ্গে তদারকির প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতারাতি যেমন পরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব নয়, তেমনি রস্তাঘাটের উন্নতি করাও কঠিন। কিন্তু পরিকল্পনা করে কিছু স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ নিলে সুফল মিলতে পারে। সড়কে আনফিট গাড়ি যাতে চলাচল করতে না পারে সেটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে