ঝিনাইদহ জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক আটক

উদ্ধার মাংসের টুকরা ও হাড় পুরুষের বাবুসহ চারজনের মোবাইলের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ১২ জুন, ২০২৪ at ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার তদন্তে পশ্চিমবঙ্গে যে মাংসের টুকরা ও হাড়গোড় উদ্ধার হয়েছে, সেগুলো পরীক্ষানিরীক্ষার প্রাথমিক ফরেনসিক প্রতিবেদন এসেছে ভারতীয় সিআইডির কলকাতা ব্যুরোর হাতে। এ ঘটনায় গঠিত বিশেষ তদন্ত দলের প্রধান কলকাতা সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী বলেছেন, প্রতিবেদন থেকে একটি বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে সিআইডি, আর তা হলো এগুলো মানুষেরই দেহাবশেষ এবং তা পুরুষ মানুষের। তিনি বলেছেন, মাংসের টুকরো ও হাড়গুলো এমপি আনারের কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করাতে আদালতের অনুমতি চাইবেন তারা। অনুমতি পেলে আনারের স্বজনদের ডেকে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে এবং তারপর সিদ্ধান্তে আসা যাবে। এদিকে আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ ওরফে বাবুসহ চারজনের মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদন মঞ্জুর করে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মাহবুবুল হক সোমবার এই আদেশ দেন। এছাড়া আনার হত্যার ঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। আর আনার হত্যাকাণ্ডের ছবি ঝিনাইদহের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে পাঠানোর যে খবর বেরিয়েছে, তা তদন্ত করে দেখার কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (গোয়েন্দা) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।

আনার হত্যাকাণ্ডে ঝিনাইদহের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পৃক্ততার খবরের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, এখনো মামলাটির তদন্ত চলছে। এই অবস্থায় আমি মন্ত্রী বা আমাদের আইজিপি কারোরই পরিপূর্ণ না জেনে কিছু বলা উচিত না। তদন্ত পরিপূর্ণ হলে আমরা এটা নিয়ে বলব। খবর বিডিনিউজের।

বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ মে কলকাতার নিউ টাউনের অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক সঞ্জিভা গার্ডেনসএর ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় ঝিনাইদহ৪ আসনের সংসদ সদস্য আনারকে। যে ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে হত্যা করা হয়, ঢাকার গোয়েন্দাদের উপস্থিতিতে তার সেপটিক ট্যাংক থেকে কয়েক কেজি মাংসের টুকরা উদ্ধার হয় গত মাসে। আগে রোববার কলকাতার ভাঙড় এলাকার বাগজোলা খাল থেকে উদ্ধার হয় কিছু হাড়গোড়।

সিআইডির আইজি চতুর্বেদী বলছেন, দুটি স্থান থেকে উদ্ধার হাড়মাংসের ফরেনসিক রিপোর্ট তারা হাতে পেয়েছেন। টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, প্রথমে আদালতের কাছে ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি নেবে সিআইডি। তারপর আবার আদালতে গিয়ে এমপি আনারের রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়দের কলকাতায় ডেকে পাঠানোর অনুমতি চাইবে এবং তা পেলে ডিএনএ পরীক্ষার পালা শুরু হবে। আনারের আত্মীয়দের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তার সঙ্গে উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরো ও হাড়গোড়ের ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হবে।

সিআইডির ওই কর্মকর্তা বলেন, এর জন্য কূটনৈতিক অনুমোদন লাগবে। আমরা আশা করছি, এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন আসবেন এবং তার সঙ্গে ডিএনএ মিলিয়ে দেখাই হবে এর শেষ ধাপ। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে কিছু সময় লেগে যাবে। এ প্রক্রিয়া চলতে থাকার মধ্যে হত্যায় ব্যবহৃত হাতিয়ার বা সরঞ্জাম উদ্ধারে মনোযোগ দেবে সিআইডি।

সিআইডির এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেপালে গ্রেপ্তার সিয়াম হোসেনই কলকাতা নিউ মার্কেট থেকে হত্যার সরঞ্জাম জোগাড় করেন। সিআইডি শিগগির তাকে সেখানে নিয়ে যাবে। একটি চাপাতির সন্ধান করছেন তারা, যা দিয়ে দেহটি টুকরা টুকরা করা হয়েছিল। ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা দিতে ভারতের যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন আনারের পরিবারের সদস্যরা। ইতোমধ্যে তাদের ভিসাও হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে আনারের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ গতকাল বলেন, এর আগে ডিবি আমাদের বলেছিল, মাংসের টুকরাগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা শেষ হলে তারা আমাদের জানাবে। এরপর আমরা উনার (আনার) মেয়েসহ (ডরিন) ডিএনএ টেস্টের জন্য কলকাতায় যাব। ঢাকার ডিবি থেকে ফরেনসিক রিপোর্টের বিষয়ে আমাদের এখনও কিছু জানায়নি।

এসব বিষয়ে ঢাকার পুলিশের বক্তব্য জানা যায়নি।

বাবুসহ চারজনের মোবাইলের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ : আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ ওরফে বাবুসহ চারজনের মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদন মঞ্জুর করে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মাহবুবুল হক সোমবার এই আদেশ দেন। ওই চারজন হলেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক বাবু, চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া, তার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান।

আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই জালাল আহমেদ বলেন, মামলার আলামত হিসেবে গ্রেপ্তার চারজনের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। ফোনগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে আবেদন করেছিল। ওই আবেদন সোমবার মঞ্জুর করেছে আদালত। ডিবির আবেদনে বলা হয়, আনোয়ারুল আজীম আনারকে খুনের পর শিমুল, বাবু, তানভীর ও শিলাস্তি নিজেদের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন রকম তথ্য আদানপ্রদান করেছেন। এছাড়া আসামিদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে এবং মোবাইলে থাকা ছবি, ভিডিওসহ অপহরণ ও খুনসংক্রান্ত কোনো তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে কিনা, সেটি জানা প্রয়োজন।

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক মিন্টু আটক : বাংলানিউজ জানায়, আনার হত্যার ঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। গতকাল বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। ডিবি সূত্র জানায়, আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের যোগাযোগ ছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম অপু জানান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের একটি অনুষ্ঠান ছিল আজ। সেই অনুষ্ঠানে মিন্টুর উপস্থিত থাকার কথা ছিল, কিন্তু তিনি অনুষ্ঠানে আসেননি। তাকে আটকের বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি, তবে আমি এখনও নিশ্চিত না।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগের অনেক নেতা নজরদারিতে রয়েছেন বলে দুপুরে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

সোমবার স্বরাস্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষ হলে অনেকেই গ্রেপ্তার হতে পারেন। সেই সঙ্গে এমপি আনারের মরদেহ শনাক্ত হলে অনেক কিছুই প্রকাশ করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে পাওয়া তথ্য যাচাইবাছাই চলছে।

গত ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন ঝিনাইদহ৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার। তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস কলকাতায় জিডি করার পর দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়। এরপর ২২ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এমপি আনারকে কলকাতার এক বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশের পুলিশ, তানভীর ভুঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। কলকাতার পুলিশ জিহাদ হাওলাদার নামে এক কসাইকে গ্রেপ্তার করে। আর সিয়ামকে গ্রেপ্তার করা হয় কাঠমান্ডুতে। পরে তাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে নেপালের পুলিশ।

পুলিশ বলছে, এমপি আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী তার বাল্যবন্ধু ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ঝিনাইদহের আখতারুজ্জামান শাহীন। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসার্ভার ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি
পরবর্তী নিবন্ধএসএসসি পরীক্ষা পুনঃনিরীক্ষণে ২০৬০ জনের ফল পরিবর্তিত