সমগ্র বিশ্বসংসার তোলপাড় করে নারী প্রিয়জনের জন্য সুখ খুঁজে আনতে পারে, আর্তের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারে, হাসি ফোটাতে পারি মূর্তিমান বিষাদের ঠোঁটে! এমনই শত মহাকীর্তির অভিযাত্রায় নারীরা নিজেকে হারিয়ে ফেলে নিজেরই অজান্তে। ‘আমার আমি’ হয়ে ওঠায় যেন চরম অনীহা তাদের। নিজের জন্য একটু সময়, একটু যত্ন, একটু পরিচর্যা, নিয়ম করে একটা দু’টো ভালো অভ্যাসের চর্চা আর হয়ে ওঠে না। শুধু নিজের জন্য এক কাপ চা তা–ও যেন বাহুল্য! নারীর কেন নিজের প্রতি এই অবহেলা, নাকি আত্মঅভিমান? বাস্তবতা এটাই যে সবার আগে নিজেকে ফিট রাখতে হবে। নিজে সুস্থ–প্রশান্ত থাকলেই স্বাচ্ছন্দ্যে অন্যদের ভালো থাকার উৎস হয়ে উঠতে পারা যায়। আর সেই ভাল থাকার উদ্যোগ নিতে হবে নিজেকেই। তার আগে জানা প্রয়োজন কিভাবে নিজেকে সহজে ফিট রাখা যায়। জিমে না গিয়ে, পার্কে জগিং না করে, ব্যায়ামের দামী–দামী ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার না করেও কীভাবে ফিট থাকা যায় সেসব বিষয়ের উপর আলোকপাত করবেন দীনা মরিয়ম। ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি যোগ ফাউন্ডেশনের (বর্তমানে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের) আওতায় মেডিটেশনের কোর্স চর্চা শুরু করেন। ২০১১ সালে তিনি গুরুজী জনাব শহীদ আল বোখারী মহাজাতকের তত্ত্বাবধানে যোগ ব্যায়ামের ওপর কোর্স সম্পন্ন করেন।
পর্ব ২
একটি মিনারেল ওয়াটারের বোতলও আমরা অনেক বন্ধুর পথে বহন করি যতক্ষণ তাতে পানি থাকে, যেই মাত্র পানি শেষ হয় আমরা আর এক মুহূর্তও বোতলটি বহন করি না, ফেলে দিই। একটা মানুষের সান্নিধ্য আমরা ততক্ষণই উপভোগ করি যতক্ষণ তার ভেতরে কিছু থাকে, সেই সারবস্তু না থাকলে আমরা তার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। একজন নারী যত সুন্দরী হোন, যত লম্বা চুলই তার থাক না কেন যখন আমরা বুঝতে পারি তার বিশেষ কোন জ্ঞান বুদ্ধি নেই একটা সময় তাঁর বাহ্যিক সৌন্দর্য আমাদের কাছে আকর্ষণহীন হয়ে পড়ে। আমরা যেসব সুন্দরী প্রতিযোগিতাগুলো দেখি সেখানেও কিন্তু তার জ্ঞানের ভান্ডারটাকে অনেক গুরুত্বের সাথে পরখ করা হয়। তাই যে কোনো পেশায়, যে কোনো বয়সেই নারীদের উচিৎ জ্ঞানচর্চাকে গুরুত্ব দেয়া। আমরা আজ আলোচনা করবো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একই সাথে সবচেয়ে সহজ হস্তমুদ্রাটি নিয়ে যার নাম জ্ঞানমুদ্রা যদিও আমাদের দেশে এই মুদ্রাটি কোয়ান্টা ভঙ্গি নামেই বেশি পরিচিত। জ্ঞান মুদ্রা নামটি শুনেই বোঝা যাচ্ছে মুদ্রাটি জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত। বিশেষত যারা কোনো বিষয়ে জ্ঞান অর্জন বা চর্চায় আছেন তাদের জন্য এই মুদ্রাটি বেশী প্রয়োজনীয়। এখন কথা হলো জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনীয়তা নেই কার? জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা যার যার আছে তাদের সবারই এই মুদ্রাটির প্রয়োজন আছে।
যেভাবে মুদ্রাটি করা যায়:
আমাদের হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির উপরের অংশ যাকে ইংরেজিতে বলে থাম্বস্ টিপ এবং তর্জনীর উপরের অংশ যাকে বলে ইনডেঙ ফিঙ্গারস টিপ একত্রিত করলে চিমটির মতো যে আকৃতি তৈরি হয় তাই জ্ঞান মুদ্রা–এক্ষেত্রে বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী ছাড়া বাকি তিনটি আঙ্গুল মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা একদম সোজা থাকবে। সাধারণত সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে ‘ওকে’ বোঝাতে এবং বর্তমান সময়ে ‘ওয়াও!’ বোঝাতে এরকম মুদ্রা ব্যাবহৃত হয়। এই মুদ্রাটি তৈরি করা যেমন সহজ, তেমন এর চর্চার নিয়মও অনেক সহজ। নিয়মিত আসন করে বসে দু’হাত হাঁটুর উপর রেখে মুদ্রাটি চর্চা করা যায়, চেয়ারে বসে চর্চা করা যায়, শুয়েও চর্চা করা যায়। একহাতে চর্চা করা যায়, দু’হাতেও চর্চা করা যায়। ধ্যানের সময় চর্চা করা যায়, পড়ার সময়, কাজের সময়ও চর্চা করা যায় এবং এই চর্চায় কোনো নির্দিষ্ট সময়ের সীমাবদ্ধতা নেই। যখন ইচ্ছা করা যায়। তবে দৈনিক কমপক্ষে ১৫–২০ মিনিট করে চর্চা করতে থাকলে ধীরে ধীরে এর দীর্ঘমেয়াদী উপকার পাওয়া যায়। সর্বোপরি কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আমাদের শ্রদ্ধেয় গুরুজী জনাব শহীদ আল বোখারী মহাজাতক তাঁর মেডিটেশন শেখানোর কোর্সের জন্য প্রায় ৪০০ মুদ্রার মধ্য থেকে জ্ঞান মুদ্রাকে বেছে নিয়েছেন, তিনি এর নাম দিয়েছেন–কোয়ান্টা ভঙ্গি। পরবর্তীতে এর বহুল ব্যবহার ও জনপ্রিয়তার কারণে জ্ঞান মুদ্রা বাংলাদেশে ‘কোয়ান্টা ভঙ্গি’ নামেই প্রসিদ্ধ ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।
এই মুদ্রার বিশেষত্ব:
থাম্বস্ টিপ সুপ্রীম কনশাসনেস এবং ইনডেক্স ফিঙ্গারস্ টিপ ইনডিভিজুয়াল সোল বুঝায়। যোগ বা ইয়োগার উদ্দেশ্য হলো এই দুইয়ের মিলন। তাই এই দুই ফিঙ্গারস্ টিপ একত্রিক করার বা পরস্পরের সাথে স্পর্শ করার অর্থ হলো সুপ্রিম কনশাসনেসের সাথে ইনডিভিজুয়াল সোলের সম্মিলন। একইসাথে থাম্ব ফায়ার এলিমেন্ট (অগ্নি তত্ত্ব) আবার ইনডেক্স ফিঙ্গার এয়ার এলিমেন্ট (বায়ু তত্ত্ব) এই দুই ফিঙ্গারস্ টিপ একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে ফায়ার ও এয়ার দু’টি এলিমেন্ট বা অগ্নি ও বায়ু তত্ত্ব মিলিত হওয়ার মাধ্যমে মাইন্ড শার্প এবং ক্রিয়েটিভিটি বুস্ট করা যায়। অন্যদিকে আমাদের তর্জনী বা ইনডেক্স ফিঙ্গার বৃহস্পতি গ্রহ বা জুপিটার–এর প্রতিনিত্ব করে তাই এই মুদ্রা আমাদের ডিভাইন নলেজ অর্জন করার অবস্থায় নিয়ে যায় এবং ইনটিউশন বাড়ায়। এই মুদ্রা আমাদের আজ্ঞা চক্র বা থার্ড আই চক্র বা দর্শন কেন্দ্রের সাথে সম্পর্কযুক্ত যা আমাদের জ্ঞানচক্ষু উন্মোচনে সাহায্য করে।
অল্প কথায় উপকারিতা:
১. মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও রাগ কমাতে সাহায্য করে।
২. স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধি করে।
৩. ইনটিউশন বাড়ায়।
৪. যাদের ঘুম কম হয় বা ইনসমনিয়া জাতীয় সমস্যা আছে তা দূর করে।
৫. স্নায়ু শিথিল করে, অস্থিরতা দূর করে ও মন প্রশান্ত করে।
৬. প্রাণশক্তি বাড়ায় ও ধীরে ধীরে অলসতা দূর করে।
৭. মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে, হতাশা ও উদ্বেগ কমায়।
৮. ধ্যান ও এবাদতে একাগ্রতা বাড়ায় ইত্যাদি।