কক্সবাজারের সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে শত শত মরা জেলিফিশ ভেসে আসার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই এবার শহরের সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে ভেসে এল মরা ডলফিন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে ভেসে আসা ডলফিনটি ইরাবতি জাতের এবং এর একটি জোড়াও ছিল বলে জানান বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল চারটার দিকে শহরের সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে দুটি ইরাবতি ডলফিন ভেসে আসে। পরে একটি ডলফিন সৈকতে আটকা পড়লেও অপর ডলফিনটি জোয়ারে ভেসে যায়। বোরি মহাপরিচালক জানান, আটকা পড়া ডলফিনটি দৈর্ঘ্যে তিন ফিট ও ওজনে আনুমানিক ১২ থেকে ১৫ কেজি। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ডলফিনটির দেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। এর দেহে পচন ধরেছে। ধারণা করা হচ্ছে, জেলেদের জালে আটকা পড়ে কিংবা অন্যকোনো ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ডলফিন দুটির মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপ সংলগ্ন সৈকতে একটি মরা ইরাবতী ডলফিন ভেসে আসে। তার আগে গতবছরের ২৩ আগস্ট ও ২০ মার্চ একই সৈকতে মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও টেকনাফ সৈকতে দুটি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল। তবে ডলফিনগুলো ময়নাতদন্ত ও প্রজাতি শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ ছাড়াই সৈকতে পুঁতে ফেলে বনবিভাগ।
সামুদ্রিক জোয়ারের সাথে কক্সবাজার সৈকতে মাঝেমধ্যেই ভেসে আসে নানা সামুদ্রিক প্রাণীর মৃতদেহ। আর তাদের মধ্যে রয়েছে আইনিভাবে সুরক্ষিত ডলফিন, কাছিম ও বঙ্গোপসাগরের জীবন্ত জীবাষ্ম নামে পরিচিত রাজকাঁকড়াও। আন্তর্জাতিক বাজারে এসব সামুদ্রিক প্রাণীর অঙ্গ–প্রত্যঙ্গের মূল্য অত্যন্ত চড়া হলেও এই মূল্যবান সম্পদগুলো সরকারি পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয় না বলে জানান বাপা কক্সবাজার জেলা সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী।
ডলফিন স্থানীয়দের কাছে হুছুম মাছ নামে পরিচিত। জেলেদের কাছে হুছুম মাছ দেখা পাওয়া সৌভাগ্যের প্রতীক। এই সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীকে নিয়ে রয়েছে অনেক উপাখ্যান। ডলফিনেরা ঝড়ের কবলে পড়ে বোটডুবির শিকার অনেক জেলের প্রাণ বাঁচিয়েছে বলে জানান কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ। তিনি জানান, মহেশখালী চ্যানেল থেকে শুরু করে সেন্টমার্টিন উপকূল পর্যন্ত ডলফিনের ঝাঁক দেখা যায়।
ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির (ডাব্লিউসিএস) কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাদের সংস্থার সর্বশেষ জরিপে বঙ্গোপসাগরে ৮ জাতের ১৬ হাজার ডলফিন শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৬ হাজার রয়েছে ইরাবতি ডলফিন। ইরাবতি ডলফিন বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বাংলাদেশে।








