জেলারসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন জজ কোর্টে গৃহীত

কয়েদিকে নির্যাতনের অভিযোগ সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে শামীম নামের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক কয়েদিকে নির্যাতন করা হয়েছে-এমন অভিযোগে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের পর এবার জজ কোর্টে মামলার আবেদন করা হয়েছে। যেখানে বিবাদী করা হয়েছে সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম, জেলার দেওয়ান তারিকুল ইসলাম, ডেপুটি জেলার মো. সাইমুর, কারারক্ষী আইজি প্রিজনের গোয়েন্দা সবুজ দাশ ও সুবেদার মো. এমদাত হোসেনকে।
গতকাল সোমবার মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের কোর্টে শামীমের স্ত্রী পারভিন আক্তার হিরা মামলার এ আবেদন করেন। আবেদনটি গ্রহণপূর্বক পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্ত করে দ্রত প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ দেন বিচারক। এর আগে ২৫ নভেম্বর মহানগর হাকিম সরোয়ার জাহানের কোর্টে একই অভিযোগে একই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করলে এখতিয়ার নেই মর্মে উপযুক্ত কোর্টে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, কারাবিধি অনুযায়ী আসামিদের ডায়েট দেওয়াটা নিয়ম হলেও ১২ জুলাই শামীমসহ অন্য বন্দিদের ডায়েট দেওয়া হয়নি। এছাড়া প্রায় প্রতিদিন সঠিক নিয়মে বন্দিদের খাবার দেয়া হয় না। এ অবস্থায় কয়েদি শামীম ডায়েটের কথা জিজ্ঞেস করলে তাকে মারধর করে মারাত্মক আহত করা হয়।
আরজিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৭ জুলাই শামীমের ওপর নির্যাতন করা হয়। সন্ধার দিকে তাকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী মোতাহের হোসেন রাসিব আজাদীকে বলেন, বন্দিদের খাবার সংশ্লিষ্ট অনিয়মের প্রতিবাদ করায় কয়েদি শামীমকে নির্যাতন করা হয়েছে এবং কুমিল্লা কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে দাঁড়াতে পারছেন না। এসব কিছু তুলে ধরে আমরা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এখতিয়ার নেই মর্মে তখন আদালত তা ফেরত দেন এবং উপযুক্ত আদালতে যেতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা আজ (গতকাল) মহানগর দায়রা জজ কোর্টে মামলার আবেদন করি। আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ করেন এবং তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। একজন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা উক্ত তদন্তের কাজ করবেন।
তিনি বলেন, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু আইনের ১৩ (১) (২) এর (ক) (খ) (গ) ধারায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা চিঠি দিয়ে জেলা প্রশাসনকেও জানিয়েছি, যাতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
জেলার দেওয়ান তারিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, শামীম ফাঁসির আসামি ছিল। পরে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। সাধারণ বন্দিদের সাথে তার সবসময় ঝামেলা হতো। সাধারণ বন্দিদের তিনি মানসিক নির্যাতন করতেন। তার একটি গ্রুপও রয়েছে। কারাগারের জন্য এসব ইতিবাচক নয়। যার কারণে তাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে হেফাজতে নির্যাতনের যে অভিযোগ আনা হচ্ছে সেটি ভিত্তিহীন। কুমিল্লা কারাগার থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে ফেরার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করে সফল হতে না পেরে তিনি আমাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনছেন।
উল্লেখ্য, একটি দায়রা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে ২০০৪ সাল থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে ছিলেন শামীম। শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগে অসুস্থ হওয়ায় তাকে কারা অভ্যন্তরের ১৫ নম্বর মেডিকেল ওয়ার্ডে রাখা হয়। ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাহাড়তলীতে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা
পরবর্তী নিবন্ধমুরাদের এমপি পদ থাকবে কিনা সিদ্ধান্ত স্পিকারের