চলমান কঠোর লকডাউনের ৮ম দিন গতকাল বৃহস্পতিবার বিভিন্ন উপজেলায় বেড়েছে যান চলাচল। হাট-বাজারে আগের চেয়ে বেড়েছে মানুষের উপস্থিতি। যদিও বরাবরের মতো অভিযান অব্যাহত রেখেছে উপজেলা প্রশাসন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অযথা ঘর থেকে বের হওয়া এবং সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনকে মামলা ও জরিমানা করা হয়।
চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছে চন্দনাইশ উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া ইসলাম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহফুজা জেরিনের নেতৃত্বে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালানো হয়। বিগত দিনে প্রায় দেড় শতাধিক মামলায় ৭৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এরমধ্যে গত ৪ জুলাই ৩৯ মামলায় ১৫ হাজার ৩শ টাকা, ৫ জুলাই ২৪ মামলায় ৫ হাজার ২শ টাকা, ৬ জুলাই ৩৩ মামলায় ১৬ হাজার ৯৪০ টাকা, ৭ জুলাই ৩৬ মামলায় ২২ হাজার ৮৫০ টাকা এবং গতকাল ৮ জুলাই ১৪ মামলায় ১৬ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া ইসলাম জানান, বর্তমানে করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় সরকার দু’দফায় আগামী ১৪ জুলাই পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে। লকডাউন বাস্তবায়নে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে উপজেলা ব্যাপী নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযানে লকডাউনের বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে। পাশাপাশি মাস্ক বিতরণ ও করোনা থেকে নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে নানা পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
রাউজান প্রতিনিধি জানান, লকডাউনের ৮ম দিন গতকাল বৃহস্পতিবার রাউজানের বিভিন্ন হাট-বাজারে অভিযান চালিয়েছে রাউজান উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ পুলিশ দল নিয়ে অভিযানে লকডাউনের সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ না মানার অভিযোগে কয়েকজনকে জরিমানা করেছে। গতকাল অভিযান চলে ফকিরহাট, আমীরহাট এলাকায়। জানা যায়, এসব বাজারে দোকান খুলে রেখে অবাধে বেচাকেনা চলছিল। ইউএনও বলেন, এই ধরনের অভিযান প্রতিদিন চলবে।
সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, করোনা মহামারী প্রতিরোধে কঠোর লকডাউনে অভিযান অব্যাহত রেখেছে সীতাকুণ্ড উপজেলায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মহাসড়কে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল ছিল জোরদার। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে দিনব্যাপী অভিযান পরিচালিত হয়। এরপরও নানা ছুতোয় মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে। এ ছাড়া সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে শ্রমজীবী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নিম্ন আয়ের মানুষের বাইরে চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো। বিকাল ৫টার পর দোকান খোলা রাখার অভিযোগে উপজেলার বড় দারোগার হাট, ছোট দারোগারহাট, টেরিয়াইল, পন্থিছিলা, সীতাকুণ্ড বাজার এলাকায় অভিযান চালানো হয়। বিকাল ৫টার পর খোলা রাখার অভিযোগে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৮ হাজার টাকা এবং রাত ৮ টার পর খোলা রাখা ও রেস্টুরেন্টের ভেতরে বসিয়ে কাস্টমারকে খাওয়ানোর অভিযোগে সীতাকুণ্ড বাজারের রাজবাড়ী রেস্টুরেন্টকে ১০ হাজার টাকাসহ মোট ৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১৮হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন জানান, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া লকডাউন কার্যকরে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, করোনা সংক্রমণ রোধকল্পে সরকার কর্তৃক ঘোষিত চলমান কঠোর লকডাউনের সপ্তম দিনেও অন্যান্য দিনের মতো হাটহাজারীতে কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় উপজেলা সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শরীফ উল্লাহ’র নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে।
হাটহাজারী পৌরসভা, নাজিরহাট, ফরহাদাবাদ, কাটিরহাট, সরকারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় ফরহাদাবাদে শাহ আলম হোটেলকে ৩হাজার টাকা, নাজিরহাটে ১ টি হোটেলকে ৫শত টাকা এবং ১টি মুদি দোকানকে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বিকাল ৫টার পর দোকান খোলা রাখায় ১হাজার টাকা ও হোটেলের ভেতরে পাওয়া ৩জন কাস্টমারকে ৩শত টাকা জরিমানা করা হয়। এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, পৌরসভা ও ইছাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত করে উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় ২টি হোটেল খোলা রাখা দায়ে ৩ হাজার ৫শত টাকা ও হোটেলের ভেতরে পাওয়া ৩জন কাস্টমারকে ৩শত টাকা এবং বিকাল ৫টার পর দোকান খোলা রাখায় দায়ে ১হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।