জেল হত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত হবে কিনা, ভাববে সরকার

মালয়েশিয়ায় খায়রুজ্জামান গ্রেপ্তার

| শুক্রবার , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:০০ পূর্বাহ্ণ

মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশের সাবেক হাই কমিশনার এম খায়রুজ্জামানকে দ্রুত ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাকে জেল হত্যা মামলায় পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেছেন, মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ আছে কি না, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় তা খতিয়ে দেখবে। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, দ্রুত এখানে ফেরত আনা হবে। তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন, মামলাটি কোন পর্যায় থেকে, হয়ত বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, অথবা আবার মামলাটি কীভাবে পুনরুজ্জীবিত করা হবে বা পরবর্তীতে পদক্ষেপ কী হবে। খবর বিডিনিউজের।
এক যুগের বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় শরণার্থী হিসেবে বসবাস করে আসা অবসরপ্রাপ্ত মেজর খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে ১৯৭৫ সালের জেল হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। চার দলীয় জোট সরকারের সময় কূটনেতিক দায়িত্ব পাওয়া সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাকে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য দেশে ফিরতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ইউএনএইচসিআরের শরণার্থী কার্ড নিয়ে তিনি মালয়েশিয়ায় থেকে যান। গত বুধবার মালয়েশিয়ার আমপাং, সেলাঙ্গর এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পুলিশ খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জাইনুদিন গতকাল বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টারকে বলেন, একটি অভিযোগ থাকায় খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে তার দেশের (বাংলাদেশ) একটি অনুরোধ রয়েছে।
পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেদেশে বাংলাদেশ হাই কমিশনকে বুধবারই চিঠি দিয়ে জানায়, অভিবাসন সংক্রান্ত আইন লংঘনের জন্য খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন ইস্যুতে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়, তাদেরকে নিজ নিজ দেশে ডিপোর্ট করার জন্য ডিপোর্টেশন সেন্টারে অন্তরীণ করে রাখা হয়, তাকেও সেখানে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে।
কী ধরনের আইন লঙ্ঘনের কথা মালয়েশিয়া সরকার বলেছে- এ প্রশ্নে শাহরিয়ার আলম বলেন, মালয়েশিয়ান হোম মিনিস্ট্রি ইমিগ্রেশন রিলেটেড একটা আইন লঙ্ঘনের কথা বলেছে। একটা কোড উল্লেখ করা আছে। আমার এই মুহূর্তে জানা নাই। তবে ইমিগ্রেশন রিলেটড। হয়ত ওভার-স্টে বা যে প্রক্রিয়ায় তিনি ছিলেন, সেটা এঙপায়ার করে গেছে; কোনো একটা আইন তিনি ভঙ্গ করেছেন। সেটার আওতায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে সামরিক কর্মকর্তা এম খায়রুজ্জামানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি সরকার তাকে কূটনৈতিক দায়িত্ব দিয়ে বিদেশে পাঠায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জেল হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে নাম এলে সে সময় ফিলিপিন্সের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে থাকা খায়রুজ্জামানকে দেশে ডেকে পাঠানো হয়। ওই বছর ২৪ সেপ্টেম্বরে তাকে গ্রেপ্তার করে বাধ্যতামূলক অবসর দেয় সরকার। পরে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় ফিরলে জামিনে মুক্ত হন খায়রুজ্জামান। ২০০৩ সালের ৪ মে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পরের বছর একটি আদালত জেল হত্যা মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে তাকে হাই কমিশনার করে পাঠানো হয় মালয়েশিয়ায়। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর খায়রুজ্জামানকে ঢাকায় ফিরে আসতে বলা হয়। কিন্তু বিপদ বুঝে তিনি কুয়ালালামপুর থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নেন এবং সেখানেই থেকে যান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসার্চ কমিটির চিঠি পেয়েছে বিএনপি, নাম দেবে না
পরবর্তী নিবন্ধভারপ্রাপ্ত মেয়র আবদুস সবুর লিটন